বনানীর আগুন নিভেছে: ১ বিদেশিসহ নিহত ৭

রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের ২২ তলা এফআর টাওয়ারে লাগা ভয়াবহ আগুন শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে এসছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মর্মান্তিক এ ঘটনায় ১ বিদেশিসহ সাতজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ভবন থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে চারজন গুরুতর আহত হওয়ার সূত্রে মারা গেছেন। 

বাকি তিনজনের মধ্যে একজন আগুনে পুড়ে নিহত হন। দুজনের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনপর্যন্ত।

বনানী থানা ওসি ফরমান আলী জানান, ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কথা বলে জানা গেছে, বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাতজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন বিদেশি রয়েছেন। তিনি শ্রীলঙ্কার নাগরিক।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৯ ইউনিট কাজ করছে। এছাড়া সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীসহ, র‌্যাব ও পুলিশ উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত ছিল। তাদের তৎপরতায় ভবনটিতে আটকা পড়া অনেককে উদ্ধার করা হয়। 

তবে আগুন মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রণে আসলেও হঠাৎ হঠাৎ ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছিল চারপাশ। 

আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টার দিকে রাগা ভয়াবহ এ আগুন বিকাল ৫টার দিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন। এরপর ক্রমশ আগুন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে।

ইউনাইটেড হাসপাতাল সূত্র এ ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। এরা সবাই ভবন থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে মারাত্মক আহত হন এবং পরে হাসপাতালে মৃত্যুবণ করেন। তারা হলেন- মনির হোসেন, মামুন ও মাকসুদুর।

এছাড়া আরও ২৩ জনকে আহত বা অসুস্থ অবস্থায় সেখানে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে ইউনাইটেডের ডিউটি ম্যানেজার জানান, সেখানে যে তিনজনের মৃতদেহ রয়েছে, তাদের একজনের মৃত্যু হয়েছে আগুনে পুড়ে, বাকিদের অন্য ইনজুরি ছিল। 

এছাড়া অগ্নি কবলিত ভবনটি থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি আব্দুল্লাহ আল ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

অপরদিকে, উদ্ধারের পর দগ্ধ পাঁচজনকে ঢামেকে আনা হয়। তাদের একজন মারা যান। শ্রীলঙ্কান এক নাগরিক চিকিৎসা শেষে চলে গেছেন। বাকি তিনজন ভর্তি রয়েছেন।

ঢামেকের বার্ন ইউনিটের প্রধান শামন্ত লাল সেন বলেন, যখন ঘটনা ঘটছে, তখন থেকে আমরা সবাই হাসপাতালে রয়েছি। যারা আসছে, তাদেরকে আজ আমরা দেখব। যদি পোড়া হয় তাহলে তাদেরকে আমরা রাখব, না হলে অর্থোপেডিক্সে স্থানান্তর করে দেব।’

তিনি আরো বলেন, এখন তিনজন আমাদের এখানে আছে। তাদের মধ্যে একজন মারা গেছে। বাকি দুই জনের অর্থোপেডিক প্রবলেম আছে, অল্প পোড়া।

এখানে ভর্তি আহত দুজন হলেন আবুল হোসেন (৩০) ও রেজাউল আহমেদ (৩৬)।

শামন্ত লাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার পর সাব্বির আলী নামে আরেকজন ভর্তি হন। 

এদিকে, কুর্মিটোলা হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুননবী জানান, অন্তত ৩০ জনকে তার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে নিরাস চন্দ্র নামের এক শ্রীলঙ্কান নাগরিককে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।

রফিকুননবী বলেন, তিনি ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতাল আনা হয়।

যাদের কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে গুরুতর দগ্ধ কেউ নেই। অধিকাংশই ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অথবা লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন বলে জানান পরিচালক। 

অগ্নি কবলিত ভবন থেকে আটকেপড়াদের উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হন স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেছেন। 

এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হেলিকপ্টারেও উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। বেলা ৩টা ৪৮ মিনিট থেকে ভবনের ছাদ থেকে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার দিয়ে কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়। হেলিকিপ্টারটি ছাদের ওপর শূণ্যে অবস্থান করে একটি দড়ি ফেলে। সেই দড়ি বেয়ে আটকে পড়া লোক হেলিকপ্টারে উঠতে দেখা যায়।  

ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার আতাউর রহমান জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের ১৯ ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করেছে।

আতাউর বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির সম্পর্কে কিছুই বলা যাচ্ছে না।