ঢাকা, ১৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

বাংলাদেশের রাজনৈতিক জরিপ ও সত্য-মিথ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:২২, ১৮ নভেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জরিপপ্রথা চালু অনেক আগে থেকেই। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জরিপের পাশাপাশি ইদানিং রাজনৈতিক ফলাফল নিয়ে গবেষণাও চাঙ্গা হয়েছে বেশ। তবে অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনৈতিক জরিপে সব সময় স্বচ্ছ ফল আসে না, পরিসংখ্যানেও থাকে ভিন্নতা। এ জরিপ কখনো সত্য, কখনো মিথ্যে হয়। 

একাধিক সংস্থা নির্বাচনের সময় অন্যান্য অনেক ব্যবসার মত এটাও একটি বাণিজ্যিক কার্যক্রমে পরিণত করে। বাংলাদেশের নির্বাচনে সেরকম গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানভিত্তিক জরিপের সংখ্যা কম। তবে এবার নির্বাচনে জরিপ একটি বড় একটি ফ্যাক্টর হিসেবে সামনে এসেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একাধিক জরিপ পরিচালনা করেছে। 

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, ছয়টি জরিপের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত করেছে। শুধু প্রার্থী বাছাই না। এ বছর আওয়ামী লীগ অন্তত তিনটি জরিপ পরিচালনা করেছে, যে জরিপে দলের অবস্থান এবং সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করেছে। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে যে, ১৭৩টি আসনে বিজয়ের পূর্ভাবাস দেয়া হয়েছে।

জরিপ শুধু আওয়ামী লীগ করেছে তা নয়। বিএনপির জরিপগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করলেও লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়াও বিএনপির জরিপ পরিচালনা করেছেন। বিএনপি প্রার্থীদের অবস্থানসহ নানা বিষয় নিয়ে জরিপ করেছেন। দুটি জরিপ সংস্থার তথ্য আমাদের কাছে আছে, যে সংস্থা দুটির মাধ্যমে বিএনপি সারাদেশে মাঠ জরিপ করিয়েছে, নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলে, বিএনপির কোন দাবি না মানা হলেও যে নির্বাচনে যাচ্ছে, তার পেছনে একটি বড় কারণ হলো এই জরিপ। জরিপে যে তথ্য পেয়েছে, তা সবই বিএনপির জন্য ইতিবাচক বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলেছে। তারা বলেছে, নির্বাচন যদি নূন্যতম অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। তাহলে ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের জেতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বিএনপির জরিপগুলোতে দেখানো হয়েছে যে, বিএনপি দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে যদি অর্ধেক নিরপেক্ষ নির্বাচনও হয়। মূলত এই জরিপের ওপর ভর করেই বিএনপি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহন করতো। তাহলে বিএনপির জয়লাভ অনেকটাই নিশ্চিত ছিল। বিএনপি সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি কেন? সেটা এক বিস্ময়। ওই ভুল সিদ্ধান্তের জন্য বিএনপিকে মাসুল দিতে হয়েছে।’

ওই নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির অন্তত তিনটি জরিপ পরিচালনা করেছে বলে জানা গেছে। এইসব জরিপে দেখা যাচ্ছে যে, বিএনপির অবস্থান ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণাধর্মী জরিপ করেন। তারা বলছে যে, এসব জরিপের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং জরিপের পদ্বতি নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশে আন্তর্জাাতিক মানের জরিপ সংস্থা নেই। এই ধরনের জরিপের ক্ষেত্রে যে ভিত্তিগুলোকে ধরা হয়। সেই ভিত্তিগুলো ত্রুটিপূর্ণ বলে গবেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে এ দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষ খুবই কম সত্য কথা বলে। অন্যান্য উন্নত দেশের মতো আগাম তথ্য কম প্রকাশ করে। 

একাধিক জরিপ সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ হয়। নানা রকম প্রতিকূলতা এবং চিন্তভাবনার মধ্য থেকে মানুষ নির্বাচন নিয়ে সত্য কথা বলে না। এছাড়াও বাংলাদেশের জরিপের ক্ষেত্রে আরেকটি মৌলিক সমস্যা হলো এলাকাভিত্তিক মতামত। নির্দিষ্ট এলাকায় মানুষের পক্ষ -বিপক্ষ স্পষ্ট। যেমন ধরা যাক, কোনো জরিপে যদি গোপালগঞ্জের কথা বলা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের কথাই বলা হবে। আবার একইভাবে যদি বগুড়ার ভোটারদের মতামত নেয়া হয়। সেখানে বিএনপির বিজয়ের কথা বলা হবে। কাজেই কোন এলাকায় জরিপ হচ্ছে, কোন এলাকায় কতজনকে জরিপে নেয়া হচ্ছে, সেটা জরিপের ফলাফলের ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখে। কাজেই এসব জরিপের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তারপরও রাজনৈতিক দলগুলো জরিপ আকড়ে ধরতে চায়। প্রার্থী বাছাই এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে জরিপের উপর নির্ভর করতে চায়। 

তবে বাংলাদেশে গত কয়েকবছরে বৈজ্ঞানিক জরিপ এবং জরিপের মাধ্যমে সঠিক তথ্য বের করার ক্ষেত্রে বেশকিছু ভালো কাজ হয়েছে। সেটা এই নির্বাচনের জরিপে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনো পরীক্ষার অপেক্ষায়। তবে আগাম জরিপের ফলাফল যাই হোক নির্বাচনের আসল মতামত গ্রহণ শুরু হয় নির্বাচনের এক কিংবা দুদিন আগে। কাজেই বাংলাদেশে অনেক আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোট দেয়ার মানুষের সংখ্যা শুধুমাত্র দলীয় সমর্থক এবং কর্মীরা ছাড়া অন্য কেউ না। সাধারণ মানুষ নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ভোটের ঠিক আগে। সেই মানুষের মনোভাব জানতে জরিপ একটি অচল পদ্ধতি হিসেবে পরিগণিত হয়।

নিউজওয়ান২৪/এমএস

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত