ভোট উৎসবে বাংলাদেশ

একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১৪ দিন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি ভোটকেন্দ্রিক। রাজধানীর অলি-গলি থেকে শুরু করে গ্রামের পাড়া-মহল্লার চা দোকানে এখন শুধু নির্বাচনী আলোচনা। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব রাজনৈতিক দল ও জোট-মহাজোটের প্রার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি।

সব দলের অংশগ্রহণে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলে রেকর্ড হয়েছে। ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৩ হাজার ৬৫টি। আর বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে ৭৮৬টি। এরমধ্যে নির্বাচন কমিশনের আপিলে বৈধ হয়েছে ২৪১ জনের মনোনয়নপত্র। এবার নির্বাচনে নায়ক-নায়িকা, শিল্পী, খেলোয়াড়, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার পরিচিত অনেক মুখ রয়েছে।

এরইমধ্যে দলগুলোর ইশতেহার ঘোষণা করা শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টি শুক্রবার তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। আর গণসংহতি আন্দোলন শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করাসহ দুটি লক্ষ্যে ৭৪টি উপধারায় ইশতেহার প্রকাশ করেছে শনিবার। আর ২১টি বিশেষ অঙ্গীকারকে প্রাধান্য দিয়ে ৬৪ পৃষ্ঠার নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যা আগামী ১৮ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে তুলে ধরবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এছাড়া ১৭ ডিসেম্বর ইশতেহার ঘোষণার কথা রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের।

সকালে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা রোডমার্চ শুরু করেন। রোডমার্চের অংশ হিসেবে দুপুরে তাদের প্রথম পথসভাটি হয় টঙ্গীর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সালাউদ্দিন সরকারের বাড়ি প্রাঙ্গণে। যদিও এ সভাটি হওয়ার কথা ছিল শফিউদ্দিন সরকার একাডেমি মাঠে। কিন্তু এ মাঠের লাগোয়া টঙ্গী সরকারি কলেজে আওয়ামী লীগেরও একটি কর্মসূচি থাকায় ঐক্যফ্রন্টের সভা একাডেমি মাঠে হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিও হয়নি।

এছাড়া রাজধানীর সেগুনবাগিচায় নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ধানমন্ডিতে ফজলে নূর তাপসসহ অন্যান্য প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগ ও নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছে সংস্কৃতি, বিনোদন ও ক্রীড়া তারকারা। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাজধানীর ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় নৌকা মার্কায় ভোট চান তারা। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকার পক্ষে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।

ভোলা-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিএনপি প্রার্থী গোলাম নবী আলমগীরের বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করেছেন। এ সময় তিনি বিএনপি প্রার্থীকে অভয় দিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সবাই প্রচার-প্রচারণা চালাবে এতে কোনো বাধা নেই। এখানে রাজনৈতিক কোনো হানাহানি নেই। শনিবার সকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভোলা শহরের মহাজনপট্টি এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় বিএনপি প্রার্থী গোলাম নবী আলমগীরের বাসায় গিয়ে এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির প্রার্থী গোলাম নবী আলমগীরও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

গোপালগঞ্জের তিনটি আসনে নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। গোপালগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুহাম্মদ ফারুক খান, গোপালগঞ্জ-২ আসনে শেখ ফজলুল করিম সেলিম তার নির্বাচনী এলাকায় নৌকায় ভোট চান। অন্যদিকে, গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে দলীয় প্রচারণায় অংশ নেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা শেখ হাসিনার পক্ষে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি নৌকায় ভোট চান।

শেরপুর- (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এবং কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি অনেক বাহানা করে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে। এটা ভালো, কিন্তু তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন দেশের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেননি। তারা এখন কোন মুখে মানুষের কাছে ভোট চায়।

কুমিল্লা-৪ আসনের প্রার্থী এমপি রাজী ফখরুল বলেছেন, দেবিদ্বারের প্রতিটি গ্রামকে শহরের রূপান্তিত করা হবে। নির্বাচিত হলে গ্রামগুলোকে শহরের মতো নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেব। শনিবার উপজেলার মোহনপুরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনী সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করবেন আগামী ৩০ ডিসেম্বর। এরমধ্যে ২ কোটি ৪০ লাখ তরুণ ভোটার রয়েছে যারা এবার প্রথম ভোট দেবেন। নির্বাচন নিয়ে এই তরুণ ভোটারদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

নিউজওয়ান২৪/এএস