দু’পক্ষকেই ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস কমিশনের

দলীয় নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার ও হয়রানি করে সরকার নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট করছে অভিযোগ করে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের আপডেট তালিকা নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে বিএনপি। লিখিত অভিযোগে দলটি বর্তমান সরকারের গত বছরের তথ্য তুলে ধরে নির্বাচনের পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ইসিকে অনুরোধ করেছে। এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়ে বিদেশে বসে স্কাইপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের স্বাক্ষাৎকার তিনি কিভাবে নিতে পারেন এবিষয়ে ইসির কাছে জানতে চায় দলটি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবশ্য দুটি বিষয়েই ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে রোববার সকালে বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের মামলা-হয়রানি ও গ্রেফতারের তথ্য সম্বলিত অভিযোগ ইসিতে জমা দেন দলটির দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মামলা ও তথ্য সংগ্রহকারী কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন খান।

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাদী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২টি মামলায় ৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিএনপিসহ ২০ দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হয়। যার মধ্যে অন্যতম ছিল এসব গায়েবী ও মিথ্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার বা হয়রানি না করা। ওই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এসব মামলা ও গ্রেফতারের তথ্য তার দফতরে পাঠাতে বলেন। এ অনুযায়ী গত ৭ নভেম্বর ১০৪৬টি ও পরে ১৩ নভেম্বর ১ হাজার ২টি মামলার তথ্য জানানো হয়। তবে তালিকা পাঠানোর পরও এখন পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের অব্যাহতি দেয়ার কোনো তথ্য আমাদের অবহিত করা হয়নি। এমতাবস্থায় বিএনপি বিষয়টিতে ইসির হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত আরেকটি চিঠিতে বর্তমান সরকারের টানা ১০ বছরের চিত্র তুলে ধরে জানানো হয়, ২০০৯ সাল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৯০ হাজার ৩৪০টি, আসামির সংখ্যা ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জন, জেলহাজতে থাকা আসামির সংখ্যা ৭৫ হাজার ৯২৫ জন, মোট হত্যার সংখ্যা ১ হাজার ৫১২ জন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা হত্যার সংখ্যা ৭৮২ জন, বিভিন্ন দলের মোট গুমের সংখ্যা ১ হাজার ২০৪ জনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজত থেকে গ্রেফতার দেখানো হয় ৭৮১ জন এবং বিএনপির গুম ছিল ৪২৩ জন। ৩০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মী গুম রয়েছেন ৭২ এবং গুরুতর জখম ও আহত হয়েছেন ১০ হাজার ১২৬ জন।

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, একজন দণ্ডিত পলাতক আসামি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারে কি না। এর বিচার জাতির কাছে চাই। ইলেকশন কমিশনের আমি দৃ্ষ্টি আকর্ষণ করছি। দুটি মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কেউ এভাবে ভিডিও কনফারেন্স করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে কিনা আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নির্বাচন কমিশন অবশ্য বড় দুই দলের এই দুই অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। বিকেলে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশানার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, তথ্য-প্রমাণসহ কেউ অভিযোগ করলে তারেক রহমানের বিষয়ে কমিশন বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে।

তারেক রহমান দেশে থাকলে ভিডিও কনফারেন্স করতে পারতেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘দণ্ডপ্রাপ্ত হলে অবশ্যই তার জেলে কিংবা পলাতক থাকার কথা। জেলে থাকলে তার পক্ষে এমন কাজের সুযোগ নেই। জামিনে থাকলে কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু, তারেক রহমানের ক্ষেত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আইনের কাভারেজ কতটুকু কি আছে, সেগুলো দেখে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এদিকে তফসিল ঘোষণার পর ইসিতে দেয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলার তালিকার বিষয়ে তিনি বলেন, সত্যিকারের অর্থে যদি কোনো হয়রানিমূলক মামলা থাকে, তাহলে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেব। কারণ, হয়রানিমূলক মামলা হলে নির্বাচনের পরিবেশ কিছুটা হলেও বিনষ্ট হবে।

নিউজওয়ান২৪