ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দায়ী আন্তর্জাতিক মহলের ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’!

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৩:১৩, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

অং সান সু কি ও তার বিখ্যাত উক্তি             -ফাইল ফটো

অং সান সু কি ও তার বিখ্যাত উক্তি -ফাইল ফটো

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন বার্মার (মিয়ানমার) রাখাইন স্টেটে পৌঁছানোর পর রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার বিষয়ে মুখ খুলেছেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর সু চি।

সুচি খুব গোস্বাভরা স্বরে অভিযোগ করেছেন- আন্তর্জাতিক মহলের ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’ রাখাইন ও রোহিঙ্গা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। বার্মার প্রতিবেশি মালয়েশিয়া। আর মালয়েশিয়ার প্রতিবেশী সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে তিনি এসব কথা বলেছেন। প্রসঙ্গত, প্রতিবেশী মালয়েশিয়ার সঙ্গে সিঙ্গাপুরের কিছু অতীত তিক্ততা ও বৈরীতা রয়েছে যা উভয়পক্ষই সাবধানে লুকিয়ে রাখে। আর সম্প্রতি মালয়েশিয়া সরকার মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো দলন-নিপীড়ন ও হতাকাণ্ডে সরব হয়ে কিছু প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। এর ফলেই সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সুকির এই প্রতিক্রিয়া বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সু কি বলেন, আমি খুব খুশি হব যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব সময় বড় ধরনের অসন্তোষ ছড়ানোর কারণ তৈরি না করে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ায় অগ্রগতি আনতে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমাদের সহযোগিতা করে।

বার্মার ক্ষমতাধর স্টেট কাউন্সিলর সুকি আরও বলেন, পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার বিষয়টি এড়িয়ে প্রত্যেকে যদি শুধু পরিস্থিতির নেতিবাচক দিকের প্রতি মনোযোগ দেয় তাহলে তা কোনো কাজে আসবে না।

নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন তখন কী বলেছিলেন আর এখন করছেন কী, সু কি!

গত ৯ অক্টোবর রাখাইনের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় দেশটির সীমান্ত পুলিশের ৯ সদস্য নিহত হয়। এরপর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে সেনা অভিযানে নির্বিচারভাবে হত্যা করা হয় সাধারণ-নিরীহ মানুষজনকে।

ওই সহিংসতায় ৮৬ জনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে খোদ সু কির সরকার। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, নিহতের সংখ্যার আরও বেশি। এছাড়া সেনা অভিযানে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং বেসামরিক নাগরিকদের (যদিও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারেরর নাগরিক বলে স্বীকার করে না দেশটি) হত্যার অভিযোগ করেছে সংগঠনগুলো।

এসব অভিযোগ অবশ্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার অস্বীকার করেছে। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন রয়েছে। সেনা অপারেশনের নামে রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযান চালানো জেলাগুলোয় বিদেশি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না তারা।

স্টেট কাউন্সিলর সু কি তার মতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’র মুখোশ খুলে দিতে খুব সহজ একটি কাজ করতে পারতেন- তিনি ওইসব জেলায় বিদেশি সাংবাদিকদের যেতে দিলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যেত। তার মতো একজন ‘বিশাল গণতন্ত্রী’ সত্যবাদী নেতার কথার বাস্তবতা প্রমাণ হয়ে যেত। কিন্তু তিনি তা না করে দীর্ঘসময় মুখে কুলুপ দিয়ে রাখলেন। ওদিকে চললো নিরীহ সংখ্যালঘুদের ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস- হত্যাযজ্ঞ। এ বিষয়ে তার ভূমিকার কথা জানতে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তাকে গরুখোঁজা করেও নাগাল পেলেন না। এখন তিনি মুখ খুললেন, তাও মিথ্যার বেসাতি করতে!

নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন রোহিঙ্গা ইস্যু: মুখোমুখি মালয়েশিয়া মিয়ানমার

প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা-রাখাইন সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করতে কাজ করছে সাবেক জাতিসংঘ প্রধান কফির নেতৃত্বাধীন কমিশন। তবে খুবই বিদঘুটে বিষয় হচ্ছে সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বার্মিজ সরকার ও অন্যান্য গ্রুপের প্রতিনিধি থাকলেও নেই রেহিঙ্গাদের কোনো প্রতিনিধি। জানা গেছে, এই কমিশনের স্বপ্নদ্রষ্টা সু কি।

গত অক্টোবর-নভেম্বর থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নির্বিচার হত্যা-অগ্নিসংযোগে নিহত হয়েছে শতাধিক সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা, বন্দি করা হয়েছে অনেককে। এছাড়া হাজারখানেক বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী, গ্রাম ঘেরাও করে গণধর্ষণ করা হচ্ছে রোহিঙ্গা নারীদের।

আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাব মতে- বার্মা সরকার কর্তৃক এবারের রোহিঙ্গা নিপীড়ন-নির্যাতনের ধাক্কায় এরই মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। ১৯৮৮ সাল থেকে আসতে থাকা আগের ৫ লখা তো আছেই।

সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতনের বিষয়ে এতদিন নীরব থাকায় মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সু চির সমালোচনা হচ্ছে নানা মহল থেকে। তার পাওয়া নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিও তোলা হয়েছে কিছু মহল থেকে।

সেনাবাহিনীর হত্যা-অত্যাচারের তাণ্ডবে নিজেদের দেশে টিকতে না পেরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফনদী পেরিয়ে প্রতিদিন দলে দলে রোহিঙ্গা জড়ো হচ্ছে। এরই মধ্যে দশ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নতুন করে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ সরকার তাদের মানবিক কারণে সাময়িক আশ্রয় দিচ্ছে বলে জানিয়েছে।

ওদিকে সু কি বলছেন- তার দেশের সরকার পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে’। এরই মধ্যে মালয়েশিয়াকে একধরনের হুমকিও দিয়েছে তারা প্রতিবেশীর ‘অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানো’র অভিযোগে। মালয়েশিয়ায় আগামী ৪ ডিসেম্বর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যার বরিুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে যাতে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক যোগ দিতে পারেন বলে খবর রটেছে। মনে হচ্ছে এতেই খেপেছেন সু কি।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত