ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

রোহিঙ্গা ইস্যু: মুখোমুখি মালয়েশিয়া-মিয়ানমার

বিশ্ব সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:২৮, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১২:৫৩, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

বার্মায় রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মালয়শিয়ায় বিক্ষোভ       -ফাইল ফটো

বার্মায় রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মালয়শিয়ায় বিক্ষোভ -ফাইল ফটো

আগামী ৯ ও ১২ ডিসেম্বর বার্মার (মিয়ানমার) সঙ্গে দুটি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠানের কথা ছিল অনেক আগে থেকেই। চলতি সপ্তাহে হঠাৎ করেই ম্যাচ দুটো বাতিল ঘোষণা করা হয় মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে। বার্মার রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রেহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর সহিংসতার কথা উল্লেখ করে প্রীতি ম্যাচ দুটি বাতিল করে কুয়ালালামপুর।

এর আগে গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে কয়েকশ মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলবও করেছিল মালয়েশিয়া সরকার।

এই পটভূমিতে আসিয়ান জোটভুক্ত দুই দেশ মালয়েশিয়া-বার্মা সম্পর্কে ক্রমশ বেড়ে ওঠা অস্বস্তির আবহে নয়া সংযোজন হলো- অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে শুক্রবার মালয়েশিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছে মিয়ানমার। কারণ, খবর রটেছে যে মালয়েশিয়ায় আগামী ৪ ডিসেম্বর বার্মায় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার বিরুদ্ধে যে ব্যাপক বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে তাতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক অংশ নেবেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী অং সান সুকির দেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান বর্বরতার নিন্দা জানিয়ে মালয়েশিয়ায় চলমান বিক্ষোভে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক অংশ নিতে পারেন—এমন খবর প্রকাশের পর মুসলিমপ্রধান দেশটিকে এ বার্তা দিল মিয়ানমার।

এর আগে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছিল, ৬৩ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী রাজাক ৪ ডিসেম্বরের ওই বিক্ষোভে অংশ নিতে পারেন।

দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী জাহিদ হামিদির বরাতে গত ২৯ নভেম্বর মালয় মেইল জানিয়েছিল- রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ জানাতে ৪ ডিসেম্বর বড় ধরনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

এ খবরের প্রতিক্রিয়ায় বার্মিজ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের উপমহাপরিচালক জ তেয় বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) মিয়ানমার টাইমসকে বলেন, সার্বভৌম বিষয়ে প্রতিবেশী দেশের সম্মান দেখানো উচিত।

জ তেয় আরও বলেন, আসিয়ানের নীতি অনুযায়ী কোনো সদস্য দেশ অন্য সদস্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না। আমরা সব সময়ই এই নীতিকে সম্মান করি ও মেনে চলি।

মালয়েশিয়ার সম্ভাব্য ওই বিক্ষোভ মিছিল বিষয়ে অভজ্ঞার সুরে বার্মিজ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের উপমহাপরিচালক আরও বলেন, মালয়েশিয়ার জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং এতে মিয়ানমারের তেমন কিছু আসবে–যাবে না।

উল্লেখ্য, গত ২৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভা প্রতিবেশী বার্মার রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে। মায়লয়েশীয় মন্ত্রীসভা এসময় রাখাইনে মিয়ানমার আর্মির ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় ‘নিরীহ লোকদের প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুত’ হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানায়। এ ছাড়া দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকারকে সহিংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানায়।

নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন তখন কী বলেছিলেন আর এখন করছেন কী, সু কি!

প্রসঙ্গত, গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় ৯ সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে দেশটির সেনাবাহিনী অভিযানের নামে তাণ্ডব শুরু করে। প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের অনেকগুলো রাজ্যেই জাতিগত দাঙ্গা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রয়েছে।

যাহোক, গত অক্টোবরের ওই অভিযানে শতাধিক মানুষের প্রাণ হারানোর খবর দেয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এছাড়া রাখাইন অঞ্চলে সহস্রাধিক বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে- এমন খবর দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন বারবার ধর্ষন করা হয়েছে: সুকির দেশ থেকে পালিয়ে আসা নারীদের আর্তনাদ

এ অবস্থায় বাংলাদেশ সীমান্তে ফের রোহিঙ্গাদের ঢল নামায় ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ঢাকায় বিদেশি দূতাবাসের কূটনৈতিকদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনেও বিষয়টি তুলে ধরেন। রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বার্মিজ গণহত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ। ব্যাংকক পোস্ট, আলজাজিরা

নিউজওয়ান২৪.কম/এসএ

বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত