সাফল্য কেন পদচুম্বন করে শেখ হাসিনার!
এস এম খোকন

ফাইল ছবি
বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ বা উপমহাদেশে নয়, রাজনৈতিক নেতৃত্বগুণে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে এসেছেন শেখ হাসিনা। এই অবস্থানে যেতে তাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে শক্তিশালী নেতিবাচক চক্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সাহসী ভূমিকা নিতে হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত লড়াইয়ে নামতে হয়েছে। এই বিবেচনায় একজন নারী হয়েও দক্ষিণ এশিয়ায় তার নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক সাফল্য এখন বহুল আলোচিত, প্রশংসিত।
দক্ষিণ এশিয়ায় এর আগেও নারী নেতৃত্ব বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। শ্রীলঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী বন্দরনায়েকে নিহত হবার তার স্ত্রী গৃহবধূ শ্রীমাভো বন্দরনায়েক রাজনীতিতে যোগ দেন এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি স্বামীর হত্যাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করেন কিন্তু শ্রীলঙ্কার অশান্ত পরিস্থিতি ও তামিল বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি।
পাকিস্তানের বেনজির ভুট্টোর পিতা দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টোকেও বিচার প্রহসনে হত্যা করা হয়। তবে বেনজির কিন্তু পিতার হত্যাকারীদের সঙ্গে আপস করে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তারপরেও নিজেকে যেমন রক্ষা করতে পারেননি, তেমনি পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভিত্তিও শক্ত করে যেতে পারেননি।
এশিয়ায় নারী নেতৃত্বের আরও উদাহরণ রয়েছে যেমন- মিয়ানমারের প্রয়াত নেতা অং সানের কন্যা সু চি। তার পিতাকে গণশত্রুরা হত্যা করে। তবে অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর সু চি ক্ষমতায় এসে এখন উল্টো তার দেশের আরেকটি বিশাল জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের কাজে সর্বনাশা ‘দজ্জাল’ হিসেবে আভির্ভূত হয়েছেন। শান্তিতে নোবেল পাওয়া এই নেত্রী এখন বিশ্বজুড়ে ধিকৃত-সমালোচিত হচ্ছেন। তার ইমেজের পড়ে যাওয়া কলঙ্কের দাগ আর মিটবে বলে মনে হয় না।
ফিলিপাইনে স্বৈরাচারী শাসক মারকোসের হাতে নিহত হন দেশটির জনপ্রিয় নেতা অ্যাকিউনো। তার স্ত্রী মিসেস কোরাজন অ্যাকিউনোও একসময় নির্বাচনে বিপুল জয়ের অধিকারী হয়ে ক্ষমতায় বসেন। কিন্তু তিনিও তার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার করতে পারেননি।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ইতালীয় বংশোদ্ভূত স্ত্রী সোনিয়াও বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের এই দেশটির ক্ষমতার শীর্ষে এসেছিলেন। যদিও কৌশলগত কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রী হননি তবে ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি তার হাতেই- কিন্তু কংগ্রেস প্রধান সোনিয়ার অধীনেই কংগ্রেসকে ক্ষমতা হারাতে হয় বিজেপির কাছে। নিহত স্বামীর স্বপ্নসাধ অপূর্ণই থেকে গেছে তার।
শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, সারা বিশ্বে নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একটি বড় ব্যতিক্রম ভারতের মিসেস ইন্দিরা গান্ধী। সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্তে তাকেও নির্মম মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।
এসব উদাহরণের বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য নারী নেতৃত্ব যা পারেননি বাংলাদেশে তা পেরেছেন শেখ হাসিনা।
তিনি তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতকদের বিচার এবং দণ্ড নিশ্চিত করেছেন। যার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে প্রায় বিরল।
এ কাজটি কিন্তু মোটেই সহজ কর্ম ছিল না। এর জন্য তাকে ধ্যানী দরবেশের মতো করতে হয়েছে সবচেয়ে কষ্টসাধ্য সাধনা- একটি সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসনকে গণতান্ত্রিক পন্থায় উচ্ছেদ করে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা- যা তিনি করতে পেরেছেন।
সাম্প্রতিক অতীতের বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের (জামায়াতসহ) বিচার করা এবং দণ্ড দেয়াও ছিল অকল্পনীয়। তারা বিএনপির রাজনীতির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, রাষ্ট্র ক্ষমতাতেও আসীন হয়েছিল। তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অশুভ চক্রগুলো। তিনি সেই দুস্তর বাধা অতিক্রম করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন।
দেশে বিএনপি-জামায়াত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালের জন্য যে ভয়াবহ সন্ত্রাসের পথ গ্রহণ করেছিল, তাকে তিনি প্রতিহত করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় একটি বিপদ ঘনিয়েছিল জঙ্গীবাদের আস্ফালনের মাধ্যমে। আইএস-এর মুখোশ ধারণ করে একদল ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী বাংলাদেশে সন্ত্রাস যা ইচ্ছা তা তালেবানি পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। ব্লগার হত্যা থেকে শুরু করে বিদেশি মেহমানে ভরপুর রেস্টুরেন্টে, ঈদগাহে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা করে তারা। সংখ্যালঘু হত্যা-নিপীড়ন ইত্যাদি দ্বারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করার ভয়াবহ চেষ্টা হয়েছিল। এসবের প্রত্যেকটি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে দমন করেছে সুকৌশলী হাসিনা সরকার। তবে নিজেকে ক্ষমতায় ধরে রেখে দেশের স্বার্থে সত্যিকারের কুশলী সরকারকে সব দেশের জনগণই পছন্দ করে। এখানে মনে রাখতে হবে সব সরকারেরই কিছু দোষত্রুটি-অক্ষমতা থেকে থাকে। বর্তমান সরকারেরও সেরকম দোষ-ত্রুটি থাকা বিচিত্র নয়।
তেবে সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন এখনকার বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়অর পর থেকে সবচেয়ে কুশলী এবং সফল সরকার।
সারা দক্ষিণ এশিয়া যখন তথাকথিত ইসলামি সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত; পাকিস্তানে, আফগানিস্তানে, এমনকি ভারতেও কোনো কোনো স্থানে চলছে সন্ত্রাসী হামলা, তখন বাংলাদেশে এই সন্ত্রাস দমনে হাসিনা সরকার যে সাফল্য দেখিয়েছেন তার প্রশংসা করেছেন আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও।
মিয়ানমার থেকে জবরদস্তি ও নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে শুধু আশ্রয় নয়- তাদের থাকা-চিকিৎসা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা যে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা বিশ্বে নজিরবিহীন। আমাদের উন্নতি হচ্ছে ক্রমশ- কিন্তু এখনো আমরা তেমন স্বচ্ছল নই, তারপরেও তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য যা করেছেন তার জন্য টুপি খোলা সম্মান তার প্রাপ্য।
হাজার হাজার রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের আবাসন, খাদ্য, পোশাক, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে চলেছেন মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সারা বিশ্বে ব্যাপক প্রসংশা পেয়েছেন তিনি। দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারাও বলছেন- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা অতুলনীয়। বিশেষ করে তাঁর দূরদর্শী চিন্তা, কৌশল ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি মনোযোগ- বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আশীর্বাদকে দেশের মানুষের হাতে সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সব নেতার থেকেই কয়েক কদম এগিয়ে।
মোবাইল-ইন্টারনেটের ব্যবহার, শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন, জঙ্গি সন্ত্রাস দমনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য ক্ষমতাবান দেশগুলো শেখ হাসিনার প্রসংশা করছে। এসব দেশের নেতারা বলছেন- সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে শেখ হাসিনার সরকার সফল।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করার জন্য শেখ হাসিনার ভূমিকা ও নেতৃত্ব আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার সাফল্যের জন্য তিনি শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য তিনি পেয়েছেন ‘চ্যাম্পিয়ন অফ দা আর্থ’ পদক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী থেকে পেয়েছেন ‘দেশিকোত্তম’ পদক।
এছাড়া, তার সরকারের আমলে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল- ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন, কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন-দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি।
দক্ষিণ এশিয়ায় শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্ব নিয়ে একটি সাম্প্রতিক বিষয়ের উল্লেখ করা যায়। তা হলো- বাঙালির স্বার্থের জন্য অনেক ক্ষেত্রে চরম বিদ্বেষী দেশ পাকিস্তানের সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সরকারের অনুকরণ করবে। তারা বাংলাদেশকে তাদের উন্নয়নের মডেল হিসেবে দেখছে। ইমরান খান বলছেন- বাংলাদেশের মতো হতে চান তারা। সম্প্রতি পাকিস্তানি একটি টিভি চ্যানেলে পাকিস্তানি এক বুদ্ধিজীবী আকুল আবেদন জানিয়েছিলেন সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে। তিনি মিনতি করে বলেন, “খোদা কি ওয়াস্তে হামে বাংলালাদেশ বানা দো!” অর্থাৎ, আল্লাহর দোহাই লাগে, “আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও!” কারণ, নির্বাচনে জিতে ইমরান ঘোষণা দিয়েছিলেন পাকিস্তানকে ইউরোপের উন্নত দেশ সুইডেনের মডেলে গড়ে তোলা হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় ওই বুদ্ধিজীবী এমন কথা বলেন। তিনি বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত উল্লেখ করে দেখান যে বাংলাদেশ প্রায় সবদিক দিয়েই পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে।
এক সময়ের দলখদার ও চরম শত্রু একটি দেশ, যারা এ দেশের মানুষের স্বাধীনতা হরণ করেছিল তারা যখন বাংলাদেশকে তাদের মডেল হিসেব স্বীকৃতি দিচ্ছে তখন বলাই বাহুল্য শত্রুর চোখেও ধরা পরছে দেশের সার্বিক উন্নতি। আর এই উন্নয়নের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
[পাঠকের আওয়াজ: এই বিভাগে সকলের মতামত, প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়। যার দায়-দায়িত্ব পাঠকের একান্ত। সমৃদ্ধির বাংলাদেশ এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত লেখাটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।]
লেখক, এস এম খোকন
সাংবাদিক
নিউজওয়ান২৪/জেডএস
- ভাষা আন্দোলনের আদ্যেপান্ত
- মহান বিজয় দিবস আজ
- সেনা কল্যাণ সংস্থার শিক্ষামূলক বৃত্তির চেক পেল ২৯৩ শিক্ষার্থী
- বারবার ধর্ষন করা হয়েছে: সুকির দেশ থেকে পালিয়ে আসা নারীদের আর্তনাদ
- ‘বাড়াবাড়ি করছে, দিছি...সরাইয়া’
- পিলখানা হত্যাকাণ্ড: বিজিবির সব ইউনিট শাহাদাত বার্ষিকী পালন করবে
- ট্রেনের টিকিট কাটতে লাগবে এনআইডি নম্বর
- সেনাকল্যাণের ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দরবার অনুষ্ঠিত
- কুয়েতের সঙ্গে তিনটি নয়, চারটি চুক্তি স্বাক্ষর
- খালেদার আপিল শুনানির সময় ইসিতে যা ঘটেছে
- পাকিস্তানি স্কুলের মতে ‘পাঞ্জাবি অশ্লীল ভাষা’!
- আসল নকল থেকে সাবধান: ভয়াবহ বিপদ ঘটে যেতে পারে!
- অনিরুদ্ধ অপহৃত নাকি আত্মগোপনে!
- বাংলাদেশের রাজনৈতিক জরিপ ও সত্য-মিথ্যা
- ২১ ফেব্রুয়ারি
মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ