ঢাকা, ০৭ মে, ২০২৪
সর্বশেষ:

সশস্ত্র জিহাদের পরিকল্পনা ছিল আল-কায়েদা মতাদর্শীদের: সিটিটিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ২ জানুয়ারি ২০২৩  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত


অনলাইন মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেন আব্দুর রব। পরে বিমানবন্দর থেকে বাড়ি না গিয়ে চলে যান জঙ্গি ক্যাম্পে। যে গ্রুপটি জিহাদী সংগঠন আল-কায়েদার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে সশস্ত্র জিহাদ করার পরিকল্পনা নিয়ে সংঘটিত হচ্ছিল। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি) এমটিই দাবি করেছে।

আরো পড়ুন >>> জঙ্গিবাদে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার ৬

রবিবার (১ জানুয়ারি) রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিন্যাল, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে এই মতাদর্শের ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি।

সোমবার সকালে সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংগৃহীত ছবি 

গ্রেপ্তাররা হলেন- সৌদি প্রবাসী দল নেতা আব্দুর রব, সাকিব, শামীম হোসেন, নাদিম শেখ, আবছার ও সাইদ উদ্দিন।

সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার আব্দুর রব সমন্বয়ক হিসেবে সবাইকে অনলাইনে একত্রিত করে শরিয়াহ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন ও জিহাদ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো। পরবর্তীসময়ে অনলাইনে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে তাদের পরিচয় হয় এবং অডিও-ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা ভার্চুয়ালি যোগাযোগ স্থাপন করে। বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি সবাইকে হিজরত করে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করে।

পরবর্তীসময়ে সেই সদস্য লিবিয়ায় অবস্থানরত আরো একজন বাংলাদেশি এবং টেকনাফের স্থানীয় একজনের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আব্দুর রব, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা হিজরতে রাজি তারা প্রথমে টেকনাফ গিয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে ট্রেনিং নেবে। পরে তারা বাংলাদেশে ইসলামী শাসন কায়েমের জন্য জিহাদ করবে।

আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সবাইকে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সে অনুসারে গত ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম টেকনাফ যায় এবং স্থানীয় সহযোগী ও গ্রেপ্তার আবছার তাদের টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

গ্রেপ্তার আব্দুর রব ছুটি না পাওয়ায় যথাসময়ে দেশে আসতে ব্যর্থ হলে তারা টেকনাফের বাসায় অবস্থান করে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। গত ২২ নভেম্বর আব্দুর রব দেশে এলে তার সহযোগী শামীম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে রিসিভ করে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের অন্য সহযোগীর ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থানকালে তাদের মধ্যে বিভিন্ন শলাপরামর্শ হয়। দুদিন পর তারা ২ জন গ্রেপ্তার সাকিবদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

সিটিটিসির দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায় তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইনভিত্তিক অ্যাপসে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দল গঠন করে। পরে স্থানীয় সহযোগীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের জন্য টেকনাফে হিজরত করে অবস্থান করছিল।

তারা সংঘটিত হচ্ছিল, সশস্ত্র জিহাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিল এটা কি কোনো সাংগঠনিক ব্যক্তি ছাড়া সম্ভব সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এখনো তারা সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি। এটা ছিল তাদের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা নিজেদের মধ্যে সশস্ত্র জিহাদের আলোচনা করে, এভাবে হিজরত করছিল। এদের প্রথমই তেমন সদস্য সংখ্যা থাকে না, এরা আস্তে আস্তে সদস্য সংখ্যা বাড়ায়। তারা টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা করে।

আল-কায়েদার সঙ্গে গ্রেপ্তার জঙ্গিদের কোনো যোগাযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান বলেন, আল-কায়েদার সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। গ্রেপ্তার জঙ্গিরা আল-কায়দার মতাদর্শ অনুসরণ করে। অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট দেখে তারা মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

কেই এই আব্দুর রব?

জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্টতায় গ্রেপ্তার আব্দুর রব একজন কোরআনে হাফেজ এবং কওমি মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। ২০১৯ সালে জুনে সৌদি-আরব যান। সেখানে একটি মসজিদের ইমামতির পাশাপাশি হেফজ শিক্ষা দিতেন। সৌদিতে অবস্থানকালে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন জিহাদি পোস্ট ও ভিডিও দেখে জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত হন। অনলাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের একটি ভিডিও কমেন্টের সূত্র ধরে সাঈদের সঙ্গে তার পরিচয়। একইভাবে শামীম, সাকিব, নাদিমসহ ও আরো কয়েকজনের সঙ্গে পরিচয় হয়।

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়েছে বলে জানান সিটিটিসির এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরএডব্লিউ

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত