ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

সংরক্ষিত নারী এমপি নির্বাচনেও থাকছে চমক!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ৯ জানুয়ারি ২০১৯  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সংরক্ষিত মহিলা আসনের মনোনয়ন নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। 

সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সংরক্ষিত আসনে এমপিদের যোগদান নিশ্চিত হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের যোগ্য ও ত্যাগী নেত্রীদের সমন্বয়ে একটি তালিকাও তৈরি করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের সংরক্ষিত আসনে আসতে পারে ব্যাপক রদবদল। ফলে মন্ত্রিসভা গঠনে পর এবার সংরক্ষিত নারী আসনে এমপিদের চূড়ান্ত নিয়োগ নিয়ে থাকছে চমক। সংসদের প্রথম অধিবেশনেই এ চমক দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দশম জাতীয় সংসদের মতো বেশি সময় না-ও লাগতে পারে।

আগের (দশম) সংসদে সংরক্ষিত আসনের এমপিদের থেকে এবার অধিকাংশই বাদ পড়তে পারেন বলে জানা গেছে। এতে জেলা কোটা সমন্বয় করতে গিয়ে তারা বাদ পড়তে পারেন বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সংরক্ষিত আসনে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। যারা দলের দুর্দিনে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, বিভিন্ন কাজে অবদান রেখেছেন, দলের ও দলের সহযোগী সংগঠনে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন- এমন নেত্রীদের মনোনয়ন দেয়া হবে। সেই হিসেবে দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপি, সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী, শিক্ষিকা, উদ্যোক্তা, অভিনেত্রী, শিল্পী, ব্যবসায়ী, দলের জন্য নিবেদিত কর্মীদের, বিশেষ করে মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ নেত্রীদের মধ্য থেকেও নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে।

গেল সংসদে প্রত্যেকের কৃতকর্ম দেখার পর এবার সংরক্ষিত নারী এমপি মনোনীত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা ভালো কাজ করেছেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা সরাসরি নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন চেয়েছিলেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে এমন কয়েকজনকেও প্রাধান্য দেয়া হতে পারে।

দশম সংসদ নির্বাচনে নারী এমপি ছিলেন এমন একজন বলেন, সাধারণত দেখা গেছে আওয়ামী লীগের কেউ-ই দু’বারের বেশি এমপি থাকতে পারেননি। ফলে যারা দু’বারের বেশি মেয়াদে এমপি ছিলেন, তাদেরও এবার সংরক্ষিত নারী এমপির তালিকা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র জানায়, সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে এরইমধ্যে গণভবনে জোর তদবির শুরু করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের নারী নেত্রীরা। এজন্য তারা দলীয় প্রধান ছাড়াও দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংসদসহ গণমাধ্যম বিশেষ করে টিভি টক-শোতে জোরালো অবস্থান রয়েছেন- এমন কয়েকজন নারী এমপি পুনরায় থাকছেন। তাদের মধ্যে বর্তমান তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মাহজাবিন খালেদ, সাবিনা আক্তার তুহিন, অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি, নূর জাহান বেগম মুক্তা অন্যতম।

এছাড়া নতুনদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্বাস্থ্য উপ-কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরীন রোখসানা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, বরিশালের জেবুন্নেছা আফরোজ, ময়মনসিংহের মনিরা সুলতানা, গোপালগঞ্জের আরিফা আকতার রুমা ও শেখ মিলি, নীলফামারীর অ্যাডভোকেট তুরিন আফরোজ, মৌলভীবাজারের সায়রা মহসিন, কুষ্টিয়ার সুলতানা তরুণ, চট্টগ্রামের চেমন আরা তৈয়ব এবং ঢাকার আসমা জরিন ঝুমু। এর বাইরে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী, অরুণা বিশ্বাস, নাট্যাভিনেত্রী শমী কায়সার ও রোকেয়া প্রাচীর নামও শোনা যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, মানিকগঞ্জ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনে এবার এমপি হতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি যোগ্য মনে করেন, তাহলে আমার আপত্তি নেই। আমি আবেদন করতে পারি। তবে এখনো করিনি। এদিকে, দশম জাতীয় সংসদে নারী আসন-১ থেকে সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়া সেলিনা জাহান লিটার নামও শোনা যাচ্ছে অনেকে মুখে। এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও নিজ উপজেলায় রানীশংকৈল মহিলা কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে তার নামে। ঠাকুরগাঁও থেকে লিটা ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী আয়েশা সিদ্দিকা তুলির নামও জোরেশোরে আলোচনায় রয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়।

কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য আঞ্জুমান আরা বন্যার নামও শোনা যাচ্ছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়নও চেয়েছিলেন তিনি। আলোচনায় রয়েছে ময়মনসিংহ জেলায় গফরগাঁও উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেশমা আক্তারের নামও। তিনি ময়মনসিংহ মমিনুন্নেসা মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভিপি ছিলেন। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে, তখন এই নেত্রী নির্যাতনের মুখে পড়েছিলেন বলে জানা গেছে। ওই জেলার বতর্মান নারী এমপি ফাতেমা তুজ জোহরাও আলোচনায় রয়েছে। তিনি বর্তমান ধর্মমন্ত্রীর ভাগিনার বউ। এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন ভালুকা উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিরা সুলতানা, গৌরীপুর উপজেলার নাজনীন বেবী। তিনি এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

এর আগে দশম সংসদে গঠিত সরকারের সময় সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এজন্য গেল বছরের ২৯ জানয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইন, ২০১৮’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। এতে সংবিধানে সংশোধনী এনে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন আরো ২৫ বছরের জন্য বহাল রাখা হয়।

সংবিধান সংশোধনের ওই প্রস্তাবটি পরে বিল আকারে সংসদে পাঠানো হয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যাচাই-বাছাইয়ের (ভেটিং) পর তা সংসদে ভোটাভুটির মাধ্যমে আইন আকারে পাস হয়।

সংবিধান অনুযায়ী, ৩৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ৩০০ জন এবং সংসদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে ৫০ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধন) আইন, ২০০৪ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া দশ বৎসর কাল অতিবাহিত হইবার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাঙ্গিয়া না যাওয়া পর্যন্ত পঞ্চাশটি আসন কেবল মহিলা-সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে …।

২০০৪ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে সংরক্ষিত নারী সদস্যের ৪৫টি আসন সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়। তখন এর মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয় পরবর্তী সংসদের অর্থাৎ, নবম সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে দশ বছর। সে হিসাবে দশম সংসদেই শেষ হয়ে যায় সংরক্ষিত নারী এমপি রাখার বিধান।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। সেই হিসাবে সংরক্ষিত নারী এমপির মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।

তথ্যমতে, ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ এ উত্তীর্ণ করা হয়েছিল। যা সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী-২০১৮ এর মাধ্যমে হালনাগাদ করা হয়েছে।

নিউজওয়ান২৪/এনআর

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত