ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

শুভ নববর্ষ: জেনে নিন এর আদ্যোপান্ত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ১৪ এপ্রিল ২০২০  

বিদায় ১৪২৬। স্বাগত ১৪২৭। পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করার মধ্য দিয়েই প্রতিবছর পালিত হয় নববর্ষ।

বিদায় ১৪২৬। স্বাগত ১৪২৭। পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করার মধ্য দিয়েই প্রতিবছর পালিত হয় নববর্ষ।


বাংলা নববর্ষ বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো...কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানের মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখের মর্মার্থ বুঝিয়েছেন। আর নতুন বছরের শুরুর এ দিনটিতে সব দুঃখ দূর্দশা ভুলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব স্তরের মানুষ এক কাতারে দাঁড়ায়। 

বিদায় ১৪২৬। স্বাগত ১৪২৭। পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করার মধ্য দিয়েই প্রতিবছর পালিত হয় নববর্ষ।

এবারের বৈশাখের অগ্নিস্নানে পুরনোন বছরের মহামারি সংক্রমিত করোনাভাইরাসের আবর্জনাও যেন ধুয়ে যাক। করোনাভাইরাসের কারণে এবারের বৈশাখ উৎযাপন বন্ধ রয়েছে। এবার ঘরে বসেই পালিত হচ্ছে প্রাণের বৈশাখ। রমনার বটমুল কিংবা ঘুরতে যাওয়া যাবে না কোনো মেলাতেও। সুস্থ থাকতে ঘরই এখন একমাত্র ভরসার জায়গা। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের বৈশাখ উদযাপিত হবে ডিজিটাল মাধ্যমে। প্রাধানমন্ত্রীর এ আহ্বানে বাংলা নববর্ষকে এবার সবাই বরণ করছে ঘরে বসেই।

ঋতুকালীন থেকে সার্বজনীন উৎসব: 

পহেলা বৈশাখ উদযাপন আমাদের বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রবাহকে বাঁচিয়ে রাখে। বাংলাদেশের সবচেড়ে বড় সার্বজনীন উৎসব হিসেবে বিবেচিত বৈশাখ। এক সময় নববর্ষ পালিত হতো ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির। ভারতবর্ষে ইসলামী শাসনামলে হিজরি পঞ্জিকা অনুসারেই সব কাজকর্ম পরিচালিত হতো।

সুলতানদের শাসনামলের পরও এই ধারাবাহিকতা মুঘল শাসনামলের প্রথম দিক পর্যন্ত বজায় ছিল। আগে মুঘল সম্রাটরা রাজ্য পরিচালনায় ও রাজস্ব আদায়ে হিজরি সন ব্যবহার করতেন। সম্রাট আকবরের নির্দেশে তৎকালীন বাংলার জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন ও আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সন বিনির্মাণ করেন।

১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় ১৫৫৬ সালের ৫ নভেম্বর থেকে। এদিনটিতেই সম্রাট আকবর সিংহাসনে আরোহণ করেন। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন। পরবর্তীতে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। প্রাচীন বাংলার রাজা শশাঙ্কের আমল থেকেই বাংলা সন গণনার কাজ শুরু হলেও তা পূর্ণতা পায় সম্রাট আকবরের শাসনামলে। 

হালখাতার জন্যই প্রতিবছর নববর্ষ পালন হত। এখনো হালখাতা নববর্ষের একটি বড় আয়োজন। এদিন পুরনো দিনের ঋণ শোধ করা হয়। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। এদিন ব্যবসায়ীরা অতীতের সব ধার-দেনা-বকেয়া পূরণ করে হিসাব সম্পন্ন করে। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজো পালিত হয়। সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষদিন পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করত। এ উপলক্ষে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত।

বাংলা দিনপঞ্জীর সঙ্গে হিজরী ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে। এ কারণে হিজরী সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে। ঐতিহ্যগতভাবে সূর্যদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি রয়েছে। তবে ১৪০২ সালের পহেলা বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমি এই নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২ টায় দিন গণনা শুরুর নিয়ম চালু করে।

আধুনিক নববর্ষ পালনের ইতিহাস:

আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয়নি।

বর্তমানে সর্বজনীন এক উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ। এ উৎসব রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক। রাষ্ট্রীয়ভাবে এদিন ছুটি থাকে। বৈশাখ মানুষের সংকীর্ণতা দূর করে, হৃদয় বড় করে। পহেলা বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এটি বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবে জানেন কি? অতীতে এর কোনো ভিত্তিই ছিল না। আবহমান বাঙালি সংস্কৃতিতে বৈশাখ বরণের সঙ্গে ইলিশের কোনো আবশ্যিকতা নেই দাবি অনেকের। তবে বাঙালিয়ানার জায়গা থেকে এই রীতি সবাই ভালোভাবেই পালন করে আসছেন।

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত