ঢাকা, ৩১ মে, ২০২৫
সর্বশেষ:

যেমন কাটলো বাঙালির নববর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৪৭, ১৫ এপ্রিল ২০১৯  

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্যাপিত হলো নববর্ষ। 

এই দিনটিকে ঘিরেই সমৃদ্ধি আর সম্ভাবনার স্বপ্নে বিভোর হয় মানুষ। জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় করে ঘরে তুলে সোনালী ফসল। পঞ্জিকার পাতায় দাগ কেটে সাজায় বেঁচে থাকার নানান রঙের নকশা।

বৈশাখকে স্বাগত জানাতে নববর্ষের প্রথম দিনে নানা আয়োজনে ব্যস্ত থাকে বাংলাদেশ। রমনায় বৈশাখী বন্দনার পাশাপাশি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আয়োজন করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। যেখানে ভাটিয়ালি আর বাউল গানের সুরে উল্লাসে মেতে ওঠে মানুষ।

১৪২৬ বঙ্গাব্দের প্রথম দিনটিও ছিল উৎসবমুখর। রোববার প্রথম প্রহরে রমনা বটমূলে শুরু হয় বৈশাখী প্রার্থনা। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রাগললিত পরিবেশন করেন শিল্পী অসিত কুমার দে। কেন্দ্রীয় ছায়ানটের এই অনুষ্ঠানে শুভবোধ জাগানোর আহ্বান জানিয়ে সকাল ৯টা পর্যন্ত চলে গান, বাঁশি আর রাগ সংগীতের মূর্ছনা। 

এরপর শুরু হয় চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলার বকুলতলা থেকে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রায় বাঘ-ভাল্লুকসহ বিভিন্ন পাখির মুখোশ নিয়ে হাজার হাজার বাঙালি অংশ নেয়। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গানের আসর বসে। কলা ভবনের সামনে বাংলা বিভাগের আয়োজনে চলে গ্রামীণ যাত্রাপালা।

এভাবেই বৈশাখের প্রথম দিনটি দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যায়। কেমন কাটলো এবারের বর্ষবরণের উৎসব? রাজধানীর শাহবাগে বৈশাখ উদযাপন করতে আসা সারা তাসনিম বললেন, অতিরিক্ত গরম ছাড়া সবকিছুই ভালো ছিল। এবার রাস্তায় মানুষ কম ছিল, তাই দিনটিকে নিজের মতো করে উপভোগ করা গেছে। 

তাহসিন আহমেদ রেজোয়ান জানালেন, বৈশাখের সব আয়োজনই সুন্দর ছিল। তবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে ঠিকমতো উপভোগ করতে পারেননি তিনি। শৃঙ্খলাার দায়িত্বে থাকা লোকদের সংখ্যা আরো কম থাকলে ভালো হতো বলে মনে করেন তাহসিন।

এবারের নববর্ষে যেকোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছিল র‌্যাব, পুলিশ ও সোয়াতের সদস্যরা। তবে নিরাপত্তা রক্ষায় দারুণ ভূমিকা রাখা এসব বাহিনী নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ শোনা যায়নি। বর্ষবরণে ঘুরতে আসা বেশিরভাগ দর্শনার্থীরাই ধন্যবাদ দিয়েছেন তাদের।

এবারের বর্ষবরণের আয়োজনে ছিল না ভুভুজেলার উৎপাত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিকট এই যন্ত্রটি বিক্রয় হয়েছে কম। দু'একজন যারা বাজিয়েছে তাদেরকেও থামতে হয়েছে অন্যদের আপত্তিতে। 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফারিয়া আহমেদ বলেন, অন্যান্য বছর ভুভুজেলার শব্দ হলের ভিতরে আমরা থাকতে পারতাম না। এবার পরিবেশ খুব শান্ত গেছে। বৈশাখের মতো এতো বড় একটি উৎসব প্রতি বছর যেন এভাবেই উদযাপন করা হয়।

এদিকে এবারের বৈশাখকে আন্তর্জাতিক রূপ দিয়েছে সার্চ ইঞ্জিন গুগল। ওয়েবসাইটটি তাদের হোমপেজে দেখাচ্ছে, বিভিন্ন রঙে আঁকা একটি বাঘকে বাঁশের মাথায় তুলে ধরে শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছে কিছু মানুষেরা।

মূলত বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতীকী এ ডুডলের মাধ্যমে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছে গুগল। এর সঙ্গে বৈশাখ নিয়ে বিভিন্ন ইংরেজি আর্টিকেল জুড়ে দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বাইরের দেশে মানুষের কাছেও পরিচিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

গুগল ‘শুভ পহেলা বৈশাখ’ লিখে বাংলাদেশী মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

গুগল যে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তোলে ধরেছে সেটি ১৯৮৯ সাল থেকে নিয়মিত আয়োজন করা হচ্ছে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বের হয়েছিল এই শোভাযাত্রা।

২০১৬ সালে ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তাদের ‘রিপ্রেজেনটেটিভ লিস্ট অব ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটির’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এ বছর বর্ণাঢ্য এই আয়োজন পা রাখল ৩০ বছরে।

নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত