ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

ভারত সফরে যাচ্ছেন না পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:১৮, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯  

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের তিন দিনের ভারত সফর বাতিল করা হয়েছে।  আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় তার ভারতের রাজধানী দিল্লী যাওয়ার কথা ছিল।  শনিবার সকালে দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের এক বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা ছিল।  এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের ভারত সফর বাতিল ঘোষণার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালেরও একই দেশে পূর্ব নির্ধারিত সফর সফর স্থগিত করা হয়েছে।  আজ (বৃহস্পতিবার) এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার আমন্ত্রণে শুক্রবার সেখানে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।  তবে পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে তিনি মেঘালয় সফর করবেন জানা গেছে।  সফর স্থগিতের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ না জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রীর শুক্রবারের ভারত সফর কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।  পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে তিনি ভারত সফর করবেন।’

মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে ভারতের মেঘালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ছিল বলেও জানান জনসংযোগ কর্মকর্তা।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, ‘আগামী ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বর যথাক্রমে আমাদের বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান রয়েছে।  ওইসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশে থাকা জরুরি।  সেজন্য ভারত সফর বাতিল করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’ ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আগামী শনিবার মাদ্রিদ যাবেন।  পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকও দেশে নেই।  তিনি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানির কারণে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থান করছেন।  এসব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।  আগামী মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফর করার কথা রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠেয় ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগে অংশ নিতে ভারত যাওয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।  তবে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফর বাতিল করায় ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন মন্ত্রণালয়ের আমেরিকান উইংয়ের মহাপরিচালক ফেরদৌসী শাহরিয়ার।

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শে ভারত সফর বাতিল করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন বিল সংসদে পাস হওয়ায় এক প্রকার মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।  এর মধ্যে ভারতের আসামে সংঘাত শুরু হওয়ার কারণে সফরটির জন্য অনুকূলীয় সময় এখন নয়।  এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে।

এদিকে, বাংলাদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর বাতিল নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমও বলছে, সফরের আগের দিন রাতে ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ‘বিতর্কিত’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি) পাসকে কেন্দ্র করে এক ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হওয়ায় এই সফর বাতিল হয়েছে।  তবে পূর্বনির্ধারিত সফর বাতিল নিয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি উল্লেখ করে হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ইস্যুতে বেশ কয়েকদিন ধরেই ঢাকা অস্বস্তি প্রকাশ করছিল।
গতকাল (বুধবার) ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে নিজের দপ্তরে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটি সহনশীল দেশ, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে।  সেখান থেকে পদস্খলন হলে ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থান দুর্বল হবে।

কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় ‘বিতর্কিত’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার পূর্বনির্ধারিত তিনদিনের ভারত সফর বাতিল করেছেন।  এর আগে, বিলটি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তার বক্তব্যে বলেন, ‘প্রতিবেশী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন না থামার কারণে তারা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি এনেছেন।’ ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি যে, এ ব্যাপারে যে কথা উঠেছে, সেগুলো সত্য না।  আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্মীয় নির্যাতন হয় না।  আমাদের দেশে ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার।'

ড. মোমেন তখন আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে অন্য ধর্মের কেউ নির্যাতিত হয় না।  সাম্প্রতিককালে বিদেশ থেকে আমাদের অনেক লোক দেশে ফিরে আসছে, তার কারণ হচ্ছে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছি এবং এখানে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে।’

এছাড়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি আইনে পরিণত হলে ধর্মনিরপেক্ষ দেশের অবস্থান থেকে ভারতের পদস্খলন হবে বলেও মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।  
এদিকে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, অমিত শাহের বক্তব্যে বাংলাদেশে বর্তমানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলা হয়নি।   
নিউজওয়ান২৪.কম/এনএ
 

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত