ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

ফের তাদের দখলে ফুটপাত, ‘নীরব’ প্রশাসন

জিহাদ

প্রকাশিত: ১৫:২১, ১২ অক্টোবর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হকারদের হাঁকডাকে সরগরম ফুটপাত। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ফুটফাট মুক্ত করা হলেও কিছুদিন পর আবারো হকারদের দখলে চলে যায় পথচারী-সেতু। দেখে বুঝার কোনো উপায় থাকে না এটি কোনো ফুটপাত নাকি ব্যবসাকেন্দ্র।

রাজধানীর প্রায় সব ফুটপাতের চিত্রটাই এমন। তার দু’পাশে বসানো থাকে পোশাকের দোকান, খাবারের দোকান, টং-দোকানসহ নানা ধরনের দোকানের ব্যবসা। যার কারণে কোথাও পা ফেলার উপায় নেই। একপ্রকার বাধ্য হয়ে সড়কে নেমে পড়ছেন পথচারীরা। আবার অনেক সড়কের ফুটপাতসংলগ্ন অংশ থাকে থেমে থাকা গাড়ির দখলে। যার ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের হাঁটতে হয় রাস্তার প্রায় মাঝখান দিয়ে। 

বাইতুল মোকাররমের পশ্চিম পাশের ফুটপাতের দৃশ্য। ছবি তুলেছেন জিহাদ

পথচারী ফাহাদ এলাহীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, এভাবে রাস্তার মাঝ দিয়ে হাটার কারণ- তিনি বলেন, আমরা যে ফুটপাত দিয়ে হাঁটবো সে রাস্তাটা কোথায়? ফুটপাতের দুই পাশ জুড়ে বসে আছেন হকাররা। মাঝে ঘেঁষাঘেঁষি করে থেমে থেমে হাঁটতে হয়। আবার পকেটমারের ভয়টা তো থাকেই। তার ওপর রাস্তার পাশজুড়ে থাকে থেমে চলছে গাড়িগুলো। এক প্রকার বাধ্য হয়েই হাঁটতে হয় প্রায় মাঝ রাস্তার পথ ধরে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও ফার্মগেট এলাকার মার্কেটগুলোর সামনে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে দেদারসে কেনাবেচা চালিয়ে যাচ্ছেন হকাররা। তাছাড়া গুলিস্তান এলাকার ফুটপাতের দুই পাশে বসানো দোকানের মাঝ রাস্তা দিয়ে পাশাপাশি দু’জন হাঁটাটা খুব কষ্টের। একই চিত্র পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকার। গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাত তো দখলে আছে তার ওপর রাস্তার অধিকাংশ জায়গা জুড়ে বসানো হয়েছে দোকান। 

গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাত ছবি: জিহাদ

এদিকে ফার্মগেট এলাকার তেজগাঁও কলেজ সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজও রেহায় পাইনি হকারদের হাত থেকে। ওভার ব্রিজেও বসানো হয়েছে দোকানপাট। এতে ওভার ব্রিজ ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারীরা। অনেকে রাস্তা পার হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ফুটপাত দখলমুক্ত এবং পুনরায় বেদখল হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিরক্ত নগরবাসীও। 

এই নিয়ে সুমাইয়া নামের এক পথচারীর মুখে বিরক্তির ছাপ, তিনি বলেন, সরকারের চেয়ে কি তাদের ক্ষমতা বেশি? ফুটপাতে দোকান বসানোর ফলে মাঝে সরু রাস্তা বাকি থাকে। যা দিয়ে একজন মানুষ হাঁটতে পারবে। সেই একজনের হাঁটার জায়গায় যদি দুই তিনজন আসা যাওয়া করে আবার মাঝে মাঝে কেউ দাঁড়িয়ে থাকেন তখন কি অবস্থাটা হয় বলেন। অনেকে আছেন সুযোগ সন্ধানি যারা কিনা ইচ্ছে করে গায়ে ধাক্কা লাগান। এমন সব বিরক্তিকর অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়।

বাইতুল মোকাররমের আশপাশের ফুটপাত হকারদের দখলে। ছবি: জিহাদ

বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করে। তাদের প্রত্যেককে প্রতিদিন গড়ে ১৯২ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। বছরে এ খাতে চাঁদাবাজির পরিমাণ ১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। 

এ টাকা চাঁদাবাজ, প্রভাবশালীব্যক্তি ও পুলিশের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়। যার ফলে, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে এলে মন্ত্রী-এমপিরা বাধা হয়ে দাঁড়ায় বলে গণমাধ্যমে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ মেয়র মোহাম্মাদ সাঈদ খোকন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র সামনের ফুটপাতে হকারদের উৎপাত, ভোগান্তিতে পথচারী। 

বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র সামনের ফুটপাতের দৃশ্য, ছবি: জিহাদ

এক প্রশ্নের জাবাবে নিউজওয়ানকে সাঈদ খোকন বলেন, আমরা চেষ্টা করি ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার। কিন্তু কিছু সুবিধাভোগীদের জন্য ফুটপাত খালি রাখা সম্ভব হয়ে উঠে না। তিনি আরো জানান, দখলমুক্ত রাখার পর সেটা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের হলেও তাদের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না।

নিউজওয়ান২৪/জেডএস

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত