ঢাকা, ০৮ মে, ২০২৪
সর্বশেষ:

‘ধরা খাওয়া’র আতঙ্কে কিছু মন্ত্রী-এমপিরা

প্রকাশিত: ২২:১৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের আবহে দুর্নীতিগ্রস্থ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজ হিসেবে অভিযুক্ত মন্ত্রী-এমপিরা এখন আতঙ্কিত সময় পার করছেন। জানা গেছে, বিভিন্ন সূত্রে আভাস-ইঙ্গিত পেয়ে এই আতঙ্কগ্রস্তদের তালিকায় আছেন সাবেক যুবলীগ নেতা ও এবার মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়া এক এমপি, মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া কয়েকজন এমপি ও একাধিকবার ক্ষমতায় আসা বেশকিছু এমপি।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি এসব মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার দলীয় ফোরামে কথা বলেছেন। ভদ্রস্থ ও কৌশলী ইঙ্গিত করে তাদের শুধরাতে নসিহত করেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ আদপে হয়নি। সেইসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালানো হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, শুধু নিজ দলের এমপি-মন্ত্রী নন, অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পদে রয়েছেন এমন দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী এমনকি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে গ্রুপিং করা নেতাদের তালিকা রয়েছে সরকারের হাতে। সে অনুযায়ী অভিযান চালানো হবে। জানা গেছে, ওই তালিকায় নাম রয়েছে স্থানীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যকারীদেরও।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললেও কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা বলেছেন, শেখ হাসিনার কাছে এ তালিকা অনেক আগে থেকেই রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় দলীয় ফোরামে এর ইঙ্গিতও দিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই তা শোনেননি। এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। তবে বর্তমান এমপি ও মন্ত্রীদের ব্যাপারে ‘ধীরে চলো নীতি’ অবলম্বন করবে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্লাব, ক্যাসিনো, বার, স্পা পার্লারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুগলীগ নেতা জি কে শামীম গ্রেপ্তার হবার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মুখোশধারী জনপ্রতিনিধি আর রাজনীতিকদের মধ্যে।

সর্বশেষ আজ (মঙ্গলবার) রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি এনামুল হকের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসায়ও অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। সেখানে একটা ভল্ট থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এরপর থেকে আতঙ্কে আছে সংশ্লিষ্টরা।

সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এ বিষয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা দুর্নীতি করেন না। কাউকে করতেও দেবেন না। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু কয়েকজন তা মানেননি। অনেকে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাই এসব লোক আতঙ্কিত হবেন এটাই স্বাভাবিক।

জানা গেছে, সাবেক এক যুবলীগ নেতা ও এবার মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া, ময়মনসিংহ থেকে নির্বাচিত দুবারের এক এমপি, ঠাকুরগাঁও থেকে একাধিকবার নির্বাচিত এক এমপি, আবাসন ব্যবসায়ী রাজশাহীর এক এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কুষ্টিয়ার এক এমপি, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি, ঢাকার একাধিক এমপি, নরসিংদীর গার্মেন্ট ব্যবসায়ী এক এমপি, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, চট্টগ্রামের কয়েকজন এমপি, কক্সবাজারের এক সাবেক এমপি সরকারের কালো তালিকায় রয়েছেন। জামালপুরের এক এমপি যিনি বিগত সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন, তার বিষয়েও সরকারপ্রধানের দৃষ্টি রয়েছে।

জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের একটি জেলার তিনজন এমপির বিষয়ে সরকারপ্রধান নিজে খোঁজ-খবর রাখছেন। ওই জেলার একজন এমপির ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এই এমপি ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত। পাশাপাশি জেলার অপর এক এমপিকে অধিবেশন চলাকালে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা রসিকতার ছলে সতর্ক করেছিলেন। তার বিষয়েও অভিযোগসমূহ যাচাই করা হচ্ছে।

এসব মন্ত্রী-এমপির দুর্নীত ও স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বেশ কয়েকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, আজকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে আগামীকাল আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে যে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, কোনো গ্যারান্টি আছে? নেত্রীর কাছে সবার আমলনামা আছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রবেশদ্বারের একটি জেলার সংসদ সদস্য, যিনি ওই জেলার আওয়ামী লীগের শীর্ষ একটি পদে রয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেয়া সম্পদের বিবরণে দেখা যায়, তার অস্বাভাবিক মাত্রায় সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই বিভাগের ছয়টি আসনের একটি জেলার সদর আসনের একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। যিনি ওই জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই পদের একটিতে রয়েছেন। বিগত সরকারের সময় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ২০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে তিনজন সংসদ সদস্য অভিযানে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। ঢাকার একজন সংসদ সদস্য, যিনি পর পর দুবার সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তার সম্পদের পরিমাণের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সারাদেশের সব সংসদ সদস্যের তথ্য আগে থেকেই নেত্রীর কাছে জমা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে আর্থিক কেলেঙ্কারির দায়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তাদের নামও আছে ওই সব তালিকায়। সূত্র: জাগোনিউজ২৪
নিউজওয়ান২৪.কম/এনআই

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত