ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

চুড়িহাট্টার আগুনে অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় প্লাস্টিক কারখানায় লাগা আগুনে অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ। এসব মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। 

এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৫০ জন। এর মধ্যে ৩৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত বাদবাকীদের ভর্তি করা হয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট অংশ নেয়। সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর মোট ৮টি বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, মোট পাঁচটি ভবনে আগুন লেগেছিল। অনেক রাসায়ানিক দ্রব্য থাকায় আগুন দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, ভবনগুলোর ভেতরের পরিবেশ ঠাণ্ডা করার চেষ্টা চলছে। এরপর ভেতরে আর কোনো মরদেহ আছে কি না তা দেখা হবে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ আরো জানান, কাটারা মসজিদের পাশে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান থাকায়, ওই এলাকায় ব্যাপক জন সমাগম ছিল। ঠিক সে সময়ে গাড়ি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুন ধরে বিদ্যুতে ট্রান্সফরমারে। মুর্হূতে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ ঘটে। আশপাশে দোকানপাঠে আগুন ছড়িয়ে পড়লে দোকানে দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। 

তিনি বলেন, এরপর ধীরে ধীরে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এতে বিভিন্ন ভবনে থাকা পারফিউম কারখানা ও প্লাস্টিকের রাসায়ানিক গোডাউনে আগুন ছড়িয়ে মুর্হুমুর্হু বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। এতে আগুনের মাত্র বেড়ে ভয়াবহ রূপ নেয়।  

গভীর রাতে ফের নতুন করে আগুনের সূত্রপাত হয়। পাঁচতলা ভবনের ছাদ থেকে আগুনের শিখা দেখা যায়। তুমি তুমি শব্দ শোনা যায় কোথাও কোথাও। এতে বোঝা যায় ভবনগুলোর ভেতরে এখনো জীবিত অনেকেই আটকা পড়ে আছে।

বিমান বাহিনীর এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন জানান, বিমান বাহিনী প্রধানের নির্দেশে ৩টা ৫২ মিনিট থেকে দুটি হেলিকপ্টার আগুন নিয়ন্ত্রণে আকাশ থেকে পানি ছিটানোর কাজ করে। এর আগে মেয়র সাঈদ খোকন হেলিকপ্টারে পানি ছিটানোর আহ্বান জানান।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং উদ্ধার কাজ স্বাভাবিক করতে উপস্থিত উৎসুক জনতাকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চুড়িহাট্টার আশপাশের সব সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। র‌্যাব-পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। চকবাজারের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। ঘটনাস্থলে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। পুরো চকবাজার এলাকা সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রাখে।

এদিকে কর্তব্যরত ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গভীর রাত হওয়ায় এবং গলিগুলো সরু হওয়ায় কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। আশপাশের ভবনগুলোর রিজার্ভ পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।

বিভিন্ন ভবনের ভেতর থেকে বেশ কিছু মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে পুরো সংখ্যা কত তা এখনো নিশ্চিত করে জানা যায়নি। উদ্ধার করা বেশির ভাগ মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে। সেখান থেকে স্বজনদের মরদেহ শনাক্ত করা হবে। 

এদিকে মেয়র সাঈদ খোকনের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে কারা আছে তা পরে জানানো হবে। মরদেহের সংখ্যা বাড়তে পারে কিন্তু তদন্ত কমিটি পরে সঠিক তথ্য জানাবে। 

অন্যদিকে মিটফোর্ড স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছে, এরই মধ্যে এখানে গুরুতর ছয়জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এরা হলেন- আব্দুল মান্নান (৬০), হেলাল উদ্দীন(১৮), শাহিদ (৩৭), এহসান (৬০), তুষার (১৮) ও রিপন (৩০)। রিপন মিটফোর্ড হাসপাতালের স্টাফ। চুড়িহাট্টায় বেড়াতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন রিপন। 

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গুরুতর আহত ও দগ্ধদের মধ্যে আনোয়ার (৫৫) শরীরের ২৮ ভাগ পুড়ে গেছে, খাদিজা (৬)  শতকরা ১২ ভাগ,  মাহমুদুল (৫২) ১৩ শতাংশ জাকির (৫০) ১৮ শতাংশ, সেলিম (৪৫) ১৪ শতাংশ, রফিকুল (২১) ৫১ শতাংশ, জাকির (৩৫) ৩৫ শতাংশ, হেলাল (১৮) ১৬ শতাংশ, মোজ্জাফর (৩২) ৩০ শতাংশ এবং রহিম (১২) ৬ শতাংশ শরীর পুড়ে গেছে।

আহতরা জানিয়েছে, আগুন লেগে পুরনো ভবন ধ্বসে তারা চাপা পড়ে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তারা। কেমিক্যাল গোডাউন ভবনের মালিক লালবাগের সাবেক এমপি হারুন-অর-রশিদের চাচা হাজী. আব্দুল ওয়াহেদ।

নিউজওয়ান২৪/টিআর

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত