ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

চাকরির মেয়াদ শেষেও স্বপদে বহাল তিনি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০১, ১৬ অক্টোবর ২০১৯  

ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন: ফাইল ফটো

ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন: ফাইল ফটো

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দেড় বছর আগে। অথচ এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের জন্য মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি পাঠান ডা. এনায়েত হোসেন। সরকারি চাকরির বিধি ৯/১ অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতর বরাবর চিঠি পাঠানোর দিন থেকেই ওই কর্মকর্তার অবসরে যাওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। সেই হিসেবে ডা. এনায়েত হোসেনের চাকরির মেয়াদ ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখনো তিনি স্বপদে বহাল আছেন! অথচ তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও দেয়নি অধিদফতর।

প্রশ্ন উঠেছে, অবসরে যাওয়ার পরিবর্তে কীভাবে তিনি দেড় বছর ধরে স্বপদে বহাল রয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমন অনিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিএমএ) চিকিৎসক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা- সমালোচনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ১৯৮৯ সালে ৮ম বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ পান ডা. এনায়েত হোসেন। সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৩ সালে রংপুর মেডিকেল ও ২০০৭ সালে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনিসটিটিউশনে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০১৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক দায়িত্বে এলে তাকে লাইন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডাইরেক্টর (এনসিডিসি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে দীন মোহাম্মদ নুরুল হক দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ই তাকে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এজিডি) পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।

অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক ডিজি দীন মোহাম্মদের খুব পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন ডাক্তার এনায়েত হোসেন। তাকে দিয়েই তৎকালীন ডিজি তার ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজ করাতেন।

গত ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আপনার চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও এখনো কীভাবে স্বপদে বহাল রয়েছেন- এমন প্রশ্নে ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ নেই। আমার অথরিটির (কর্তৃপক্ষ) সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন এর স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের গোচরীভূত হয়েছে। তিনি এখনো চাকরিতে বহাল আছেন। যদি বিষয়টি সত্য হয়ে থাকে তবে তা গুরুতর অপরাধ। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএমএ এর এক নেতা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন। সরকারি চাকরির বিধিমালার চাকরিরত মুক্তিযোদ্ধাদের ধারাটি ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেনের বিষয়ে প্রযোজ্য নয়। তাহলে তিনি কীভাবে চাকরিতে বহাল রয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এটা স্রেফ জালিয়াতি ও গুরুতর অপরাধ। প্রশ্ন আসে, তিনিই কি শুধু অপরাধটি করেছেন? স্বাস্থ্য অধিদফতর বা মন্ত্রণালয়ের যারা তাকে এই অপরাধ সংগঠনে সহায়তা করেছে তারাও সমান অপরাধি নয়? বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক আরো বলেন, গত দেড় বছরে তিনি যত প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বরাদ্দ দিয়েছন তার সবই অবৈধ। এক কথায় বলতে গেলে, এ সময়ের মধ্যে তিনি যত কাজ করেছেন বা তার স্বাক্ষরিত যত কাজ হয়েছে তা সবই অবৈধ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সেচ্ছায় অবসরের যাওয়ার ব্যাপারে ডা. এনায়েত হোসেন অধিদফতরে যে আবেদন পাঠিয়েছিলেন তা উইথড্র (তুলে নেয়া) করা হয়েছে কি না তা আমি জানি না। তাহলে কীভাবে তিনি এখনো স্বপদে বহাল আছেন জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, আপনি সেটা তার কাছ থেকেই জেনে নেন উনি কীভাবে ওই পদে বহাল আছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. হাবিবুর রহমান খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিন মাস হয়েছে আমি এ পদে আছি। আগে অন্য পদে ছিলাম। তাই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনাদের কাছ থেকেই শুনলাম।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টা আসলে কী? আবেদন দিয়েও উনি কি যেতে চাচ্ছেন না নাকি তাকে কর্তৃপক্ষ জোর করে যেতে দিচ্ছে না? এসব ব্যাপারে আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করব। কেউ যদি এখানে অনিয়ম করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত