ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

কানাডা থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনি নূরকে ফেরাতে অগ্রগতি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আত্মস্বীকৃত খুনি ও বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে দেশটির আদালতে দেওয়া এক রায়ে। এই পলাতক খুনি সম্পর্কে তথ্য প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কানাডা সরকারের সিদ্ধান্তটি ফেরত পাঠিয়েছ ফেডারেল কোর্ট। আদালত কানাডা সরকারকে এ ব্যাপারে নয়া সিদ্ধান্ত নিতে আদেশ দিয়েছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত নূর চৌধুরীর কানাডায় অবস্থান এবং তাকে দেশ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ‘বহিষ্কার পূর্ব ঝুঁকির মূল্যায়নের’ সর্বশেষ তথ্য কানাডার কাছে জানতে চেয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু কানাডা সরকার  বাংলাদেশের এই অনুরোধ প্রত্যাখান করে। এর জবাবে অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন বাদী হয়ে ফেডারেল কোর্টে জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন করে। 

সেই জুডিশিয়াল রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ফেডারেল আদালত আবেদনটি গ্রহণের সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, কানাডার আইনে সেখানে আশ্রিত মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে প্রত্যর্পণে বাধা থাকায় দেশটির সরকার ‘জনস্বার্থ রক্ষার’ যুক্তি দিয়ে খুনি নূর বিষয়ে তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল। এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে করা মামলায় কানাডার ফেডারেল আদালত মঙ্গলবার বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছে- দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো এ খবর প্রচার করেছে।

দেশটির ফেডারেল আদালতের বিচারক জেমস ডব্লিউ ওরেইলি রায়ে বলেন, নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না। সুতরাং তার বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।দুনিয়অ কাঁপানো বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে একদল বিপথগামী সেনা সদস্য। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী ক্ষমতা দখল করা সরকার আইন করে খুনিদের বিচারের পথও রুদ্ধ করে রেখেছিল।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগফের ক্ষমতায় আসার পর সেই ভয়াবহ খুনদের বিচারের পথ খোলাসা হয়। এ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট পরে আবারো ক্ষমতায় গেলে জটিলতা তৈরি হয়।  মামলার কার্যক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয় তখন।

এরপর আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয় এবং আদালতের রায়ে দণ্ডিতদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনকে (আর্টিলারি) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। কিন্তু ফাঁসির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ৬ জন অর্থাৎ খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান পলাতক থেকে যায়।
তাদের মধ্যে নূর কানাডায় এবং রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বলে জানা গেছে। বাকিদের অবস্থান শনাক্ত হয়নি। সবাইকে দেশে ফেরানোর চেষ্টায় ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিসও জারি করা হয়। কিন্তু তাতে কোনো সুফল আসেনি।

কানাডার গণমাধ্যম দি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ১৯৯৬ সালে সেদেশে যাওয়ার পর উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করে। তার দুই বছরের মাথায় বাংলাদেশের নিম্ন আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে নূর চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। এরপর গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্টতার তথ্য থাকায় ২০০২ সালে কানাডা নূর চৌধুরী দম্পতির আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। আপিল করেও ২০০৬ সালে তারা হেরে যান। তবে এরপরও কিন্তু তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়নি।

অপরদিকে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ক্ষমতায় ফেরার পর আত্মীকৃত খুনি নূর চৌধুরী বহিষ্কার বা প্রত্যর্পন এড়াতে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ এর আবেদন করেন। কোনো অভিবাসন প্রত্যাশীকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে তার জীবন ঝুঁকিতে পড়বে কি না- তা নির্ধারণে ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট’ করা হয়ে থাকে। 

এদিকে, খুনি নূরকে ফেরানোর চেষ্টায় থাকা বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে একটি চিঠি দিয়ে জানতে চায় নূর চৌধুরী কানাডায় কীভাবে আছেন। তার ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের’ আবেদন কোন পর্যায়ে আছে। কিন্তু কানাডা কর্তৃপক্ষ সেসব তথ্য দিতে অস্বীকার করলে গত বছর জুন মাসে ‘জুডিশিয়াল রিভিউয়ের’ আবেদন করে বাংলাদেশ। চলতি বছরে মার্চে এ বিষয়ে শুনানির পর কানাডার ফেডারেল আদালত গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের আবেদন মঞ্জুর করে রায় দেয়।

সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে নতুন কর্মকর্তার ওপর
এদিকে, ফেডারেল আদালতের রায়ের পর কানাডার ইমিগ্রেশন মন্ত্রণালয় নতুন কোনো কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের আবেদনটি পর্যালোচনা এবং সিদ্ধান্তের দায়িত্ব দেবে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের চাহিদা মতো তারা তথ্য প্রকাশ করবে কি না সেটি নির্ভর করবে নতুন কর্মকর্তার পর্যালোচনা এবং সিদ্ধান্তের ওপর।

কানাডার আদালতের রায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় আইনজীবী ব্যারিস্টার ওবায়দুল হক জানিয়েছেন, ফেডারেল  কোর্টে বাংলাদেশের জুডিশিয়াল রিভিউর আবেদন গৃহীত হওয়াটা নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আইনি লড়াইয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

রায়ের ব্যাখ্যায় তিনি আরো জানান, নূর চৌধুরী সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশের আবেদনটি এখন নতুন কোনো কর্মকর্তা বিবেচনা করবেন। তিনি নিশ্চয়ই ফেডারেল কোর্টের বিচারকের পর্যবেক্ষণগুলো বিবেচনায় রেখেই তার সিদ্ধান্ত দেবেন।

নিউজওয়ান২৪.কম/এনআই
 

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত