ঢাকা, ২৮ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ:

ইশতেহারে গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতির আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ৫ নভেম্বর ২০১৮  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি বিষয়ে কোনো অঙ্গীকার নেই। দেশের আইন, নীতি, বাজেট কিংবা দেশের অর্থনীতির মাপকাঠি জিডিপিতেও এই কাজের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতির বিষয়টি অনুপস্থিত। এ কারণে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সোমাবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহস্থালি সেবামূলক কাজ নিয়ে প্রকাশিত একটি নীতি পর্যালোচনাপত্রে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান এই নীতি পর্যালোচনাপত্রটি ‘অ্যাকশনএইড-ডিইউডিএস ন্যাশনাল ডিবেট ক্যাম্পেইন ২০১৮’ এর চূড়ান্ত পর্বের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে সরকারের মন্ত্রী, গবেষক, রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেছেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকারনামায় গৃহস্থালি সেবামূলক কাজের স্বীকৃতির অঙ্গীকার যুক্ত করা উচিত। তবেই অমূল্যায়িত সেবামূলক কাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক মূল্যায়ন হবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘অমূল্যায়িত সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন, স্বীকৃতি ও পুনর্বণ্টন : নীতি ও রাজনৈতিক ইশতেহারের পর্যালোচনা’ শীর্ষক গবেষণাপত্র তুলে ধরেন অধ্যাপক মফিজুর রহমান। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে একজন নারী তার জীবনের প্রায় ১২ বছর রান্নাঘরে কাটিয়ে দেন। ২০১৭ সালে গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, এ কাজে নারীরা দৈনিক সময় দেন ৭.৭৭ ঘণ্টা এবং পুরুষরা ১.৩২ ঘণ্টা। গৃহস্থালি কাজে পুরুষের তুলনায় বেশি সময় দেওয়ার কারণে নারীরা অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত হতে পারেন না। মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েন, বাধাগ্রস্ত হয় নারীর ক্ষমতায়ন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সরকারের অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন নিয়ে কাজ করা জরুরি। নারীর ক্ষমতায়ন করতে পারলে স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন অর্জনের কাজটিও সহজ হয়ে আসবে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, কোনো নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের পিছিয়ে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। তাই গৃহস্থালি সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি, মূল্যায়ন ও পুনর্বণ্টনের জন্য নীতিগত পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে হবে। বাস্তবতা হলো আমাদের দেশের কোনো আইন, নীতি বা রাজনৈতিক দলিলে এই বিষয়ে করণীয় বা অঙ্গীকার নেই। যা সমস্যাটিকে জিইয়ে রাখছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সবার আগে জরুরি। প্রয়োজন গৃহস্থালি সেবামূলক কাজে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।

গবেষণায় দেখা যায়, ঘরের সেবামূলক কাজ অমূল্যায়িত, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত নয়। কোনো জাতীয় অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে এর উল্লেখ নেই। তাই এ কাজের পুনর্বণ্টন ও হ্রাসকরণের জন্য কোনো বিনিয়োগ ও উদ্যোগ নেই। তাই এই বিষয়টি যেকোনো পরিকল্পনায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিত এবং তা নারীর জন্য বোঝা হয়েই থেকে যাচ্ছে। এর একটি বড় কারণ রাজনৈতিক অঙ্গীকার অর্থাৎ ইশতেহারে প্রতিফলন নেই। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের বিগত রাজনৈতিক ইশতেহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল যেমন: আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, এদের নির্বাচনী ইশতেহারে অনুপস্থিত। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যমান কোনো নীতি ও আইনে গৃহস্থালির সেবামূলক কাজ নিয়ে এমন কিছু বলা নেই যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

সুপারিশ করা হয়, রাজনৈতিক ইশতেহারে গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে আসতে হবে, যাতে নারীর অবদান স্বীকৃতি পায়। জাতীয় নীতিতে এটি অন্তর্ভুক্ত করা হলে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, সেজন্য প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা এবং কাঠামোগত পরিকল্পনা। প্রয়োজন জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ এর বাস্তবায়ন পরিকল্পনাতে গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং স্থানীয় ও জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।

সকালে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, গৃহস্থালি সেবামূলক কাজকে অর্থনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দিলে বাংলাদেশের জন্য এসডিজি অর্জন করা আরো সহজ হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর টিএসসি চত্ত্বর থেকে একটি র‌্যালি বের করা হয়। এছাড়া, দিনব্যাপী বিতর্ক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি গৃহস্থালি সেবামূলক কাজবিষয়ক কর্মশালা ও বিষয়ভিত্তিক সেমিনার হয়।

নিউজওয়ান২৪/এমএস

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত