ঢাকা, ০৪ মে, ২০২৫
সর্বশেষ:

আমার ৭২ বছর বয়সের ৬০ বছরই কেটেছে রাজনীতিতে: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৬ এপ্রিল ২০১৯  

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখস হাসিনা

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখস হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার ৭২ বছর বয়সের ৬০ বছরই কেটেছে রাজনীতিতে। স্কুল থেকে রাজনীতি শুরু করেছি এখনো অব্যাহত আছে। রাজনীতিতে কে কী করেছে অনেক ঘটনা চোখে দেখেছি।

তিনি আরো বলেছেন, বিএনপির কোনো বিষয়ে সরকারের কোনো চাপ নেই। বিএনপির যে সাংসদ শপথ নিয়েছেন, তিনি স্থানীয় জনগণের চাপের কথা বলেছেন। বিএনপির রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা নিয়েও সরকারের কোনো চাপ বা চেষ্টা নেই। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির ব্যাপারে সরকারের চাপ থাকার কারণ নেই। কেননা প্যারোলে মুক্ত হবেন কি না, সেটা নির্ভর করে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির আবেদনের ওপর। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো আবেদন আসেনি। 

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন, বুঝতে হবে বিএনপির জন্ম কোথায়। বিএনপি স্বর্ণলতার মতো। দৌড়ে কাছে গিয়ে দেখা যায়- দেখতে সুন্দর কিন্তু শেকড় নেই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নিজ দল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ পোড় খাওয়া দল। এই দলে সুবিধাভোগী বা অনুপ্রবেশকারী আছে বলে মনে করি না। তিনি বলেন, কিছু লোক আসবে যাবে, এটা রাজনীতিতে স্বাভাবিক।

তাঁর সাম্প্রতিক ব্রুনেই সফর শেষে সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে আজ (শুক্রবার) বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।  শুরুতেই ব্রুনেই সফরে করা বিভিন্ন চুক্তি, সমঝোতা ও সফরের নানা দিক নিয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

অপর এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপিকে রাজনীতিতে পুনরুজ্জীবিত করাটা কী, আমি বুঝি না। বিএনপির কোনো ব্যাপারেই সরকার চাপ দিচ্ছে না। তাদের দলের একজন সদস্য শপথ নিয়েছেন। এ জন্য কেন সরকার তাকে চাপ দিতে যাবে। ওই এমপি নিজেই তো বলেছেন জনগণের চাপের কারণে তিনি শপথ নিয়েছেন। 

এছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি আগ্রহ বা চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে সরকারের কিছু করার নেই। প্যারোলের জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো আবেদন আসেনি।  

তিনি আরো বলেন, বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল। তারা তাদের সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা করে। এখানে সিদ্ধান্ত বিএনপির। সরকারের চাপ থাকবে কেন?

এছাড়া আওয়ামী লীগে সুবিধাবাদীরা ঢুকছে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ওই সাংবাদিকের কাছে এমন ব্যক্তিদের তালিকা চান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সারা জীবন আন্দোলন করেছেন, কষ্ট করেছেন। এখন যদি একটু ভালো থাকে, সেটা কি দোষের? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলে নয়, দেশের মানুষ ভালো আছে। আওয়ামী লীগ এলে দেশের মানুষের উন্নতি হয়।

জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বেগ-শঙ্কা
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সব সময়ই উদ্বেগ হওয়ার কারণ আছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। তবে সবার আগে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। সেখানে খ্রিস্টানরা করেছে। শ্রীলঙ্কায় মুসলিমরা। এ জন্য আমি বলি, জঙ্গিবাদের কোনো ধর্ম নেই। দেশ নেই। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। কিন্তু তারপরও শঙ্কা আছে। এটা এখন আন্তর্জাতিক একটা বিষয় হয়ে গেছে।

বর্ষায় রোহিঙ্গাদের সমস্যার দায় বিদেশিদেরও নিতে হবে
ভারত, রাশিয়া, জাপান ও চীন চায় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হোক কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের জোরালো ভূমিকা নেই, স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিতে চেয়েছি। কিন্তু তারা যেতে চায় না। জোরও করতে পারি না। এর সঙ্গে বিদেশি সংস্থা ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও চায় না কক্সবাজার ছাড়তে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খোলামেলা বলতে চাই, কক্সবাজার যাওয়া খুব সহজ; থাকার জায়গা খুব সুন্দর। তারা মানবিক কারণে যে সেবা দিতে আসে তারা মনে হয় নিজেদের সেবাটার দিকে একটু বেশি করে তাকান। এখানেই তাদের আপত্তি, আর কোনো কারণ দেখি না।

অথচ ভাসানচরে নেওয়া গেলে রোহিঙ্গারা ভালো থাকতে পারত। তাদের জীবন এতটা অমানবিক হতো না।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা যুবকেরা বেকার। বেকার থাকাটা ভালো নয়। তখন নানা চিন্তা মাথায় আসে। এদের সহজে জঙ্গিবাদে জড়ানো যায়। ব্যবহার করা যায়।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা কেউ ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা আটকে রয়েছে। সে প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যখন অমানবিক অত্যাচার হয় তখন আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। সাথে সাথে মিয়ানমারের সঙ্গেও আমাদের আলোচনা হয়েছে যে তারা এদেরকে ফেরত নেবে। তারা তালিকাটা অনুমোদন করল। যে মুহূর্তে রোহিঙ্গারা যাওয়ার কথা সেই মুহূর্তে এখানেই প্রতিবাদ শুরু করলো যে তারা যাবে না। কিন্তু তখন যদি আমরা পাঠাতে পারতাম তাহলে সেটা অব্যাহত থাকত।

সময়টা অনলাইনের

গণমাধ্যমের বিশেষ করে কাগুজে পত্রিকার খারাপ সময় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যুগের চাহিদা বা প্রযুক্তির চাহিদা হলো অনলাইন সংবাদপত্রের। বিশ্বের অনেক দেশে বড় বড় পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো এখন কেবল অনলাইনে আছে। কাগুজে পত্রিকা বের করে না।

সম্প্রচার মাধ্যম সম্পর্কে বলেন, অনেকেই টেলিভিশনের জন্য আবেদন করছেন। আমি বলেছি দিয়ে দাও। এতে চাকরির বাজার বড় হবে।

১০০ দিন নিয়ে আনন্দের কী আছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেউ কেউ বলছেন সরকারের ১০০ দিন নিরানন্দের। এখানে আনন্দের কী আছে। আর সরকার তো ১০০ দিন ধরে তো কোনো কাজ করছে না। তিনি বলেন, এ ধলনের কোনো প্রতিশ্রুতি তো দেওয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতদের মধ্যে নিজেকে সবচেয়ে প্রবীণ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নিরানন্দে ভোগেন তারাই নিরানন্দ খোজেন। এদের সবাইকে আমি চিনি। আমার অচেনা কেউ নেই।
নিউজওয়ান২৪.কম/পিএমএন

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত