ঢাকা, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:

সমালোচনার জবাব দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ১৪ এপ্রিল ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং টকশোতে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে এ বিষয়ে একটি ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টেলিভিশন টকশোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রমের সমালোচনার বিষয়ে আফসোস ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম।

তিনি বলেন, ‘এই অতিমারির অতি আক্রান্তের সময় আমরা আমাদের সাংবাদিক ভাই-বোনদেরকে সহযোদ্ধা হিসেবে মানি এবং সেভাবেই গণ্য করে এসেছি, তাদের সহযোগিতা নিয়েই আমরা যুদ্ধটা করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু, হঠাৎ করে দেখতে পাচ্ছি কিছু কিছু পত্র-পত্রিকা এমনভাবে সমালোচনা করছেন, যেটা আমাদের মনোবলকে ভেঙে দিচ্ছে।’

করোনা মহামারির মধ্যে ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের জীবনপণ করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বর্তমান পরিস্থিতি ত্রুটি তুলে ধরার যথাযথ সময় না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেসব বিষয় ইদানীং পত্র-পত্রিকায় তুলে এনেছেন, আমাদেরকে সমাজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন, আমি সেগুলোর কিছু উত্তর দিতে চাই।’

বসুন্ধরায় তৈরি আইসোলেশন সেন্টারটি সেখানে আর না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বলা হয়েছে, সেটি উধাও করে দিয়েছি। এই উধাও শব্দটির মধ্যে এটি অপমানজনক ব্যাখ্যা আছে।’

আইসোলেশন সেন্টারটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি যে পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি করা হয়েছিল, সেই পরিপ্রেক্ষিত বিদ্যমান ছিল না বিধায় সেখানে থাকা মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও বিছানা সারাদেশে প্রয়োজন অনুযায়ী ছড়িয়ে দিয়েছি। একটি টিস্যু পেপার বক্স কোথায় দিয়েছি সেটার তালিকাও আমার কাছে আছে।’

এই তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংগ্রহ করা যাবে এবং প্রয়োজন মনে করলে এসব জিনিসপত্র যেসব জায়গায় বিতরণ করা হয়েছে সেখানে যাচাই করার কথাও জানান তিনি।

এই সেন্টারে প্রতি মাসে ৬০ লাখের বেশি টাকা খরচ হতো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে আমদের ১৫ থেকে ২০ জনের বেশি রোগী থাকত না। সেখানে প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় এক হাজারের বেশি জনবল ছিল।’

এটি আর প্রয়োজন ছিল না বলে সেটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং এর জিনিসপত্র বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে নতুন করে ২০০ শয্যার আইসিইউ ও আগের শয্যাসহ মোট ৯৫০টি অক্সিজেন সংযোগ যুক্ত সাধারণ শয্যা প্রস্তুতের কথা জানান তিনি।

নতুন এই সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে ‘কোনো অভিবাদন’ বা ‘অভিনন্দিত’ না করে উল্টো বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘বলা হয়েছে আমরা আবার অন্য জায়গায় গিয়ে সরকারের টাকা খরচ করছি।’

টকশোগুলোতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘…যারা একদিনও কোনো রোগীর পাশে গিয়ে দাঁড়াননি, তারা রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ছিলেন। তারা তখন কী করেছিলেন? তারা এখন টেলিভিশনে বসে টকশোতে লম্বা লম্বা কথা বলেন।’

হাসপাতালে রোগীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই নিরাপদ বাক্সের মধ্যে বসে এই টেলিভিশন থেকে ওই টেলিভিশনে গিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা দেশবাসীকে যেমন বিভ্রান্ত করছে, আমাদেরও আশাহত করছে।’

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি এমন কথা বলতে পারেন না যে কাজটা আপনি করতেন আগে। সেই কাজটার বিরূপ সমালোচনা আপনি করতে পারেন না। এটা অত্যন্ত অন্যায়, গর্হিত অন্যায়।’

এ ছাড়াও, সিএমএসডির স্টকে থাকা স্বাস্থ্য পণ্যের বিষয়েও নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে দেশে হাসপাতালের সক্ষমতা, অক্সিজেন, টিকার স্টক, নতুন টিকা কেনা, স্বাস্থ্য পণ্যের স্টক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

ডিএনসিসি হাসপাতালটি আট থেকে নয় মাস আগে চালু করার কথা থাকলেও সেটি এতদিনে চালু করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘এই প্রথম দেখলাম সাংবাদিক ও জনস্বাস্থ্যবিদদের বিরুদ্ধাচরণ করার জন্য একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।’

এয়ারপোর্টে ১০ মাস ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যন্ত্র কেন পড়ে আছে, জানতে চাইলে অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হয়। এই জটিলতাগুলোর অবসান হয়েছে।’

সরকারের অর্থ সাশ্রয়ের জন্য বসুন্ধরার আইসোলেশন সেন্টারটি সরিয়ে নেওয়া হলেও লাখ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন দিয়ে সেই হাসপাতালের বিষয়ে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ ছাপা হলো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, ‘আপনারা এই পয়সাটা মওকুফ করলে পারেন। আমরা যে প্রতিবাদ দিয়েছি সেটা যদি অসত্য হয় তাহলে আপনারা ছাপবেন না। আর সত্য যদি হয় আপনারা সেটা বিনা পয়সায় ছেপে দেন।’

টকশোতে যেসব জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কথা বলেন, তাদের মধ্যে একজনের পদবীসহ উদ্ধৃত করা অপমানসূচক উল্লেখ করে অপর এক প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, তাদের কখনো সহযোগিতা করার জন্য ডাকা হয়েছে কি না।

জবাবে মহাপরিচালক খুরশীদ আলম বলেন, ‘আপনি যদি চান সাহায্য করতে, তাহলে আমি কি আপনাকে ডাক দিয়ে নিয়ে আসি, নাকি আপনি নিজে আসেন? তারা যদি কাজ করতে চান, তাদের কাজের অজস্র সুযোগ আছে। তারা আসুক আমাদের কাছে, তারা বলুক যে আমরা এখানে কাজ করতে চাই।’

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত