ঢাকা, ৩০ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ:

শিপিং কন্টেইনারে আধুনিক ল্যাবরেটরি, হবে যক্ষ্মা নির্ণয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:১১, ২০ অক্টোবর ২০১৮  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি যক্ষ্মার জন্য প্রণীত কৌশলগত পরিকল্পনা (২০১৮-২০২২) অনুসারে গুণগত ও মানসম্মত উপায়ে যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে মার্কিন সহযোগী সংস্থা ইউএসএইড এর পক্ষ থেকে সম্প্রতি এক জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রিজিওনাল টিবি রেফারেন্স ল্যাবরেটরি, বায়োসেফটি লেভেল ৩ (বিএসএল-৩ ল্যাব) নামক ল্যাবরেটরিটি বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিলেটের বক্ষব্যাধি হাসপাতালকে হস্তান্তর করা হয়েছে।  

ল্যাবরেটরিটি ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে পরিচালিত, টি.বি. কেয়ার টু এবং চ্যালেঞ্জ টিবি নামক দুটি প্রজেক্ট দ্বারা পরিকল্পিত, নির্মিত এবং ইনস্টল করা হয়েছিল এবং পুরো প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) সিলেট, সিভিল সার্জন সিলেট, জনশক্তি বিভাগ (পিডাব্লিউডি) এবং সিলেট সিটি করপোরেশন। গ্লোবাল ফান্ডও এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেছে। সিলেটের বক্ষব্যাধি হাসপাতালসংলগ্ন বিএসএল ৩ ল্যাবটিতে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর পূর্ব দরগা গেইটে অবস্থিত স্টার প্যাসিফিক হোটেলে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষাগারটির হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই দেখানো হয় গবেষণাগারটি সম্পর্কে একটি টেকনিক্যাল প্রেজেন্টেশন। বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধির কারণে, যক্ষ্মার পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সর্বোচ্চ সুবিধাসম্পন্ন বায়োসেফটি ৩ স্তরের এ ল্যাবরেটরিটি, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অধিবাসীদের দ্রুত ও মানসম্মত সেবা প্রদান করবে। অত্যাধুনিক ডায়াগনিস্টিক টেকনোলজিসম্পন্ন এ ল্যাবরেটরিটি ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার পরীক্ষায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। একটি শিপিং কন্টেইনারের ভেতরে নির্মিত এ পরীক্ষাগারটি সম্পুর্ণ নিরাপদ, নির্ভুল এবং সাশ্রয়ী যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম।

পরীক্ষাগারটি  সলিড কালচার ও ডিএসটি এর মাধ্যমে প্রথম এবং দ্বিতীয় স্তরের ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা নির্ণয় করার পাশাপাশি এটি জিন এক্সপার্ট প্রক্রিয়া এবং অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক যন্ত্রাংশের সহায়তায় রফাম্পিসিম প্রতিরোধকারী যক্ষ্মা দ্রুত শনাক্ত করবে। এটি জাতীয় ওষুধ প্রতিরোধকারী যক্ষ্মাবিষয়ক জরিপ, গবেষণা এবং শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় একটি কেন্দ্রীয় গবেষণাগার হিসেবেও কাজ করবে।

সিলেটে বিএসএল ৩ ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা প্রদানের জন্য ইউএসএআইডি এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি ল্যাবরেটরিটির সফলভাবে প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করার জন্য এনটিপি, স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে সিলেট জেলার সিভিল সার্জনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ইউএসএআইডি এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য সাধুবাদ জানান।

ইউএসএআইডি প্রতিনিধিবৃন্দ সিলেটে এই অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক টেকনোলজি সম্পন্ন যক্ষ্মা নির্ণয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য জাতীয় ও স্থানীয় সরকারি সংস্থার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এর কার্যক্রম চালু রাখার জন্য সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিচালক এমবিডিসি ও লাইন ডাইরেক্টর টিবি-লেপ্রসি অ্যান্ড এএসপি  অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম, ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রাক্তন স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘ, জনাব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, মহাসচিব, বিএমএ এবং প্রাক্তন অতিরিক্ত পরিচালক (প্রশাসন) ও লাইন ডিরেক্টর, টিবি-লেপ্রসি ও এএসপি, ডা. হিমাংশু লাল রায়, সিভিল সার্জন, সিলেট, ডিভিসনাল ডিরেক্টর, ডা. আলিয়া আল মোহান্দেজ, সিনিয়র ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাডভাইজর, অফিস অব দি পপুলেশন, হেল্থ, নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন, ইউএসএআইডি, বাংলাদেশ এবং ডা. অস্কার কর্ডন, কান্ট্রি প্রজেক্ট ডিরেক্টর, চ্যালেঞ্জ টিবি প্রজেক্ট  সহ ম্যানেজমেন্ট সাইন্সেস ফর হেলথ, আইআরডি এবং অন্যান্য অংশীদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

উল্লেখ্য ১৯৭১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউএসএআইডি এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাত'শ কোটি ডলারেরও বেশি উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করেছে। ২০১৭ সালে ইউএসএআইডি বাংলাদেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে প্রায় ২১ কোটি ডলার প্রদান করেছে।  

ইউএসএআইডি বাংলাদেশে যে সকল কর্মসূচিতে সহায়তা প্রদান করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে; গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অনুশীলনের প্রসার, খাদ্যনিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সুবিধাদির সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসেবার উন্নয়ন ও অভিযোজন এবং স্বল্প কার্বন উন্নয়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো।

নিউজওয়ান২৪/এএস

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত