ঢাকা, ০৭ মে, ২০২৪
সর্বশেষ:

যে ৫ কারণে মুখ থুবড়ে পড়লো আইভী বিরোধী সব কৌশল

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৮:৪৬, ১৯ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১০:২২, ২৮ নভেম্বর ২০১৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নাসিক মেয়র আইভী        -ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নাসিক মেয়র আইভী -ফাইল ফটো

ঢাকা: আগামী ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। এই নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে তা নিয়ে চলছিল ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা। নারায়ণগঞ্জে আইভীর শক্ত প্রতিপক্ষ শামীম ওসমান এমপির শিবির চাইছিল কোনোমতেই যাতে আইভী মনোনয়ন না পান।

এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য আইভীকে বাদ দিয়ে তিনজনের নাম ঠিক করা হয়। পরে তা কেন্দ্রে পাঠানোও হয়। যে তিনজনের নাম পাঠানো হয়েছিল তারা হলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান এবং বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদ।

কিন্তু মহানগর থেকে পাঠানো তালিকা মুখ থুবড়ে পড়ে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বসা মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড আইভীকেই বেছে নেয় নাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, চূড়ান্ত মনোনয়ন দিতে যখন স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড গণভবনে বৈঠক করছিল, তখন বৈঠকখানার পাশের একটি রুমে বসে অপেক্ষা করছিলেন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। ধারণা করা হচ্ছে- তাকে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায়ই ডেকে পাঠানো হয়েছিল।

পরে, বৈঠক শেষে আইভীকে ঢেকে পাঠানো হয় ভেতরে। ততক্ষণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য সদস্যরাও।

ভেতরে ঢুকেই শেখ হাসিনাকে সালাম করেন আইভী। এসময় হাসিমুখে আইভীকে শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচন করতে হবে এবং বিজয় নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী তাকে আরও বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রয়োজনে যদি প্রতিপক্ষের ঘরেও যেতে হয়, যাবে এবং মিলেমিশে নির্বাচন করবে।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের ফলে ওসমান শিবির একটা ধাক্কা খায়।

কারণ, গত মেয়র নির্বাচনে দলের মনোনয়ন ছাড়াও হেভিওয়েট নেতাদের প্রত্যক্ষ সমর্থন পেয়েও শামীম পরাজিত হওয়ার পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হন। সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন ওসমান পরিবারের প্রতি আর সমর্থনের কথা জানান- মূলত ওইদিন থেকেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে দলাদলি আর রেষারেষি উবে যায় রীতিমতো (অন্তত প্রকাশ্যে)। সবাই শামীম ওসমানের ছাতার তলে ভীড় করতে থাকে।

এমন অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনে আইভী মেয়র থাকলেও নারায়ণগঞ্জে ভাল-মন্দ সবকিছুই বলা যায় ওসমান পরিবারের নেতৃত্বেই ঘটতে থাকে। এই পরিবারের দুই ভাই শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমান জাতীয় সংসদ সদস্য।

তবে, মেয়র আইভী কিছুটা বেকায়দায় পড়েও নিজের লোকজন নিয়ে সামাল দিতে থাকেন পরিস্থিতি। চুনকার সন্তান হিসেবে সবসময় তার পক্ষে দুটো জিনিস ছিল। এর প্রথমটি নিজ দল ছাড়াও সার্বজনীন জনসমর্থন আর দ্বিতীয়টি সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে বিরামহীন কাজ করে যাওয়া।
শেষ পর্যন্ত এই দুই কারণই এবার আইভীর দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তিতে মূল ভূমিকা রেখেছে। আর আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গিতে দুটি কারণই পাঁচটি কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

এই কারণগুলো হলো- জনপ্রিয়তা, বর্তমান মেয়রের দক্ষতা, নারী নেতৃত্ব, নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা ও নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য অংশগ্রহণ।

নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন ৫বছর আগের না পাওয়া মনোনয়ন এবার পেলেন আইভী, সমর্থকদের মাঝে স্বস্তি

পঞ্চম কারণটি অর্থাৎ বিএনপি নির্বাচনে এলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে বাধ্য। যদি এমন হতো এবারও আইভীকে মনোনয়ন না দিয়ে শামীম ওসমানের আশীর্বাদপুষ্ট কাউকে মনোনয়ন দিতো আওয়ামী লীগ আর এদিকে আইভী দাঁড়াতেন স্বতন্ত্র! সেক্ষেত্রে দুজনের কঠিন লড়াইয়ে মাঝখানে বিএনপি প্রার্থী (সম্ভবত তৈমুর আলম খন্দকার) বাজি মেরে দেবেন – অনেক যোগ-বিয়োগের হিসাব মিলিয়ে এই হিসাব নারায়ণগঞ্জের চোখ-কান খোলা মহল খুব ভাল করেই জানেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর আগের করা একই ভুল দোহরাতে যাননি। এখানে আপোষহীনতার গাল ফুলানো বুলি এড়িয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকেই তুলে ধরেছে।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পরে নারায়ণগঞ্জ পৌর নির্বাচনে জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা আলী আহমদ চুনকার (আইভীর পিতা) বদলে আওয়ামী লীগ সমর্থন দেয় অপর হেভিওয়েট নেতা একেএম শামসুজ্জোহাকে। তখন চুনকা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে বিজয়ী হন। একই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি হয় ২০১১ সালের নাসিক নির্বাচনে।

এতে চুনকার মেয়ে আইভীর বদলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান মামসুজ্জোহার ছেলে শামীম ওসমান। ফলাফল একই- ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। আর আইভি পেয়েছিলেন এক লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট।

২২ ডিসেম্বরের নাসিক নির্বাচনে যে কেউ জয়ী হতে পারেন। তবে এখনকার হিসাবে একটি দিকে শেখ হাসিনা জিতে গেছেন- সেটা হচ্ছে কৌশলী রাজনৈতিক চাল। যখন অনেকেই মনে করছিলেন যে, যে শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে শামীম ওসমানদের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি আর আইভীমুখো হবেন না- তাদের সবাইকে ভুল প্রমাণ করে তিনি কিন্তু তাই করলেন। এতে আবারও প্রমাণ হলো- বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় শেখ হাসিনা হচ্ছেন এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং লক্ষ্যভেদী তীরন্দাজ।

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত