ঢাকা, ১৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের ‘আসল খলনায়ক’ জিয়া: প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০৯, ২৪ আগস্ট ২০২০  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২০ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২০ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- ছবি: সংগৃহীত


১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞে জিয়াউর রহমানকে ‘আসল খলনায়ক’ হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই কলঙ্কজনক অধ্যায়ের কয়েক বছর পর একইভাবে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মতো আরেকটি নারকীয় হত্যাযজ্ঞে একই চরিত্রে আবির্ভূত হন।

প্রধানমন্ত্রী দু’টি ঘটনার তুলনা করে বলেন, প্রথম ঘটনায় বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়। অন্যদিকে, দ্বিতীয় হত্যা পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিলো আমিসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পেছনে আসল খলনায়ক ছিলেন জিয়াউর রহমান।

রোববার (২৩ আগস্ট) বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আইএমএলআই) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কলঙ্কজনক ঘটনার সবচেয়ে সুফল ভোগকারী ছিলেন জিয়া। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পরই তিনি সেনাপ্রধান এবং খন্দকার মোস্তাক আহমেদের উচ্ছেদের পরই রাষ্ট্রপতি হন। দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি ফারুক ও রশিদ বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে এই ষড়যন্ত্রে জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া, রশিদ, ফারুক, ডালিম ও অন্যান্যের সহায়তায় জাতির পিতাকে হত্যার পরপরই খন্দকার মোস্তাক স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন।

তিনি আরো বলেন, জিয়াকে সেনাপ্রধান হিসেবে মোস্তাকের নিয়োগ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জিয়ার সম্পৃক্ততার আরেকটি প্রমাণ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে নেতৃত্বশূন্য করতে খালেদা জিয়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে ভয়াবহ ও বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালায়।

তিনি বলেন, হত্যাকারীরা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ও তাকে জনবিচ্ছিন্ন করতে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, এই নৃশংস ও ঘৃণ্য অপরাধের প্রধান লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশ যে জন্য স্বাধীন হয়েছে, তা নস্যাৎ করে দেয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনি ফারুক ও রশীদ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তারা বঙ্গবন্ধুকে জনবিচ্ছিন্ন করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এতে ব্যর্থ হয়ে তারা তাকে হত্যা করেন।

অনুষ্ঠানে আইএমএলআই থেকে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আবু মো. দেলোয়ার হোসেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান।

সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের স্থানীয় দোসররা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির জয়কে মেনে নিতে পারেনি এবং তখন থেকেই তারা মূলত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু করে।

আবেগাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঠাণ্ডা মাথায় তারা বঙ্গবন্ধু, তার স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তার তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল-শেখ কামাল ও শেখ জামালের স্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধুর নিকটাত্মীয়দের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করতে সফল হয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, খুনিরা বাদে বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্য অশ্রুবর্ষণ করেছে। খুনিরা ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালিয়েছিলো, কিন্তু তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তার নাম এখন বিশ্বে জ্বলজ্বল করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পরে জিয়াউর রহমান একের পর এক অভ্যুত্থানে প্রায় ২০০০ মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা ও সৈন্যদের হত্যা করেছিলেন এবং এভাবে হত্যার রাজনীতি শুরু করেছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর স্থানীয় দোসর শাহ আজিজ, আবদুল আলীম, মাওলানা মান্নানকে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও উপদেষ্টা করেছিলেন যারা দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মে জড়িত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া তার স্বামী জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজামী, মুজাহিদ এবং অন্য যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী করেছেন যারা সরাসরি বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় জড়িত ছিলো।

খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদ এবং হুদাকে এমপি করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে রশিদকে সংসদের বিরোধী নেতা করা হয়েছিলো।

শেখ হাসিনা বলেন, যদি তাদের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র না থাকে তাহলে খালেদা জিয়া কেনো ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়ে তাদের সংসদে বসার সুযোগ তৈরি করলেন?

তিনি বলেন, তারা সব সময় (জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া) সন্ত্রাস ও হত্যার সঙ্গ জড়িতদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার বহু প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করার লক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপন কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা এ লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছিলেন, কিন্তু করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সেগুলো সীমিত আকারে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পালন করছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা এই শুভ উপলক্ষে শপথ নিয়েছেন- দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না এবং সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করবেন।

এ লক্ষ্যে আমরা বিশাল অগ্রগতি অর্জন করেছি, তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দেশের অগ্রগতি থেমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার দেশকে আবারো উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত