ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

মিলনেই মৃত্যু, কারা ছিলো সেই ‘বিষকন্যা’?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ১৪ অক্টোবর ২০১৮  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ইতিহাসের এক গল্প ভাণ্ডার ভারতীয় উপমহাদেশ। প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলের বিভিন্ন সময়ের গল্প-উপকথা-ইতিহাসের ভাণ্ডার নিয়ে মানুষের মনে কৌতূহলের শেষ নেই। আর সে কৌতূহলেই বিভিন্ন সময় আমরা খুঁজে পাই এর পরতে পরতে বিভিন্ন আকর্ষণীয় চরিত্র। সেই চরিত্রেরই একটি হলো বিষকন্যা। 

অন্যতম প্রাচীন একটি সভ্যতা হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের সভ্যতা। এর আলো আঁধারির মোহাবেশে জড়িয়ে গেছে বিষকন্যা পরিচয়ও। কারণ, বিষকন্যা এমন নারীচরিত্র যে অতিসুন্দরী হয়েও যার জুটতো না ঘর, এছাড়া বরও ভাগ্যে জুটতো ক্ষণিকের জন্য। তাই তিনি বিষকন্যা। কেননা, তার রূপমোহে সবাই ডুবে থাকলেও বিষের কামড় থেকে রক্ষা পায়নি নিজের স্বামীও। 

ভারতীয় ইতিহাসে বহু প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত বিষকন্যারীতি। বলা হয়, এই ললনাদের দেহের শিরা-ধমনী বেয়ে রক্তের সঙ্গে প্রবাহিত হতো গরল মানে বিষ। তাদের সঙ্গে সম্ভোগ তো দূরের কথা, সামান্য স্পর্শেই মৃত্যু অনিবার্য। 

বিনা যুদ্ধে শত্রুবিনাশে আগুন ধরানো এই সুন্দরীদের ব্যবহার করতো রাজা-মহারাজা-সম্রাটরা। কল্কিপুরাণ, শুকসপ্ততী এবং চাণক্য রচিত অর্থশাস্ত্রে একাধিকবার এসেছে বিষকন্যাদের কথা। গন্ধর্ব চিত্রগ্রীবার স্ত্রী সুলোচনা নাকি ছিলেন এক বিষকন্যা।

শুধু ভারতীয় সভ্যতাই নয়। অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতাতেও উল্লেখ আছে বিষকন্যাদের কথা। সভ্যতার আদিপর্বের সেই সমাজে নির্দিষ্ট করে বেছে নেয়া হতো মেয়েদের। 

তখনকার রীতি অনুযায়ী গণকের ভাগ্য গণনায় যদি দেখা যেতো, সাধারণের ঘরের পরমা সুন্দরী কোনো মেয়ের ভাগ্যে বৈধব্যযোগ আছে; তবে তাদের আর স্বাভাবিক জীবনে থাকতে দেয়া হতো না।

রাজা বা শাসকদের লোকজন তাদেরকে পরিবার থেকে আলাদা করে নিয়ে আসতো।   

বিচ্ছিন্ন জীবনে বরাদ্দ হতো বিশেষ পথ্য। শিশু বয়স থেকে তাদের দেহে প্রবেশ করানো হতো তিল তিল করে বিষ। বিষে বিষক্ষয় অনিবার্য। বিষয়টা তাদের জন্য সহনীয় হয়ে যেত।  পরে তাদের কেউ বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করতে পারত না। কিন্তু তারা কারোর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হলে সঙ্গী পুরুষের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। ইংরেজিতে একে বলা হয় ‘Mithridatism’।

নন্দরাজার মন্ত্রী নাকি এক বিষকন্যাকে পাঠিয়েছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে হত্যার লক্ষ্যে। কিন্তু চাণক্যের কূটবুদ্ধিতে পাল্টে যায় শিকার। চন্দ্রগুপ্তের বদলে সে হত্যা করে বসে পর্বতককে।

তবে আধুনিক গবেষকরা বলে থাকেন, অতীতের অনেককিছুর মতোই বিষকন্যা নিয়েও অতিরঞ্জন হয়েছে। সঙ্গম বা স্পর্শ বা দৃষ্টি নয়। আসলে এই সুন্দরীরা মদিরায় বিষ মিশিয়ে বধ করত শিকারকে। সাহিত্য, চলচ্চিত্রে ঘুরে ফিরে এসেছে বিষকন্যা বা Poison Girl-এর প্রসঙ্গ। কিন্তু কোনো সমাজেই বিষপুরুষ দেখা যায়নি। 

পুরুষের ইচ্ছায়, অঙ্গুলি হেলনে কন্যারাই বহন করেছেন বিষ। পঙ্কিল ষড়যন্ত্রের বিষ ধারণ করার জন্য নারীর থেকে ভাল আধার আর হয় নাকি! 

তবে অনেক আখ্যানে বিষকন্যার কথা বলা আছে যা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে সত্য হিসেবেই। অনেকের মতে, অতিরঞ্জিত হলেও বিষকন্যার বাস্তবতা ছিল।     

নিউজওয়ান২৪/এমএস

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত