ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

মিজানুরের মতো ‘একই কায়দায়’ আরো তিনজনকে হত্যা করে তারা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ২৭ জানুয়ারি ২০২০  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে গত ৬ জানুয়ারি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা বেসরকারি এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিজানুর রহমানকে খুন করে । 

সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে মিজানকে খুন করা হয় বিমানবন্দর সড়কের ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। খুনিরা লাশ ফেলে রেখে যায় হাতিরঝিলের উড়ালসড়কের ওপর।

মিজানুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার তিন আসামি ঢাকার আদালতে গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) এবং আজ রোববার (২৭ জানুয়ারি) ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিন আসামি হলেন নুরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ বাবু ও মো. জালাল।

২০ দিন আগে (৬ জানুয়ারি) গভীর রাতে (রাত ২টা) এক যুবকের লাশ পড়ে ছিল কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং বরাবর উড়ালসড়কের ওপর। হাতিরঝিল থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখে। পরে যুবকের পরিচয় উদ্ধার হয়। তার নাম মিজানুর রহমান। তিনি ঢাকার এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি চাকরি করতেন বনানীর গোল্ডেন টিউলিপ ফোর স্টার হোটেলে। তার পদ ছিল সিনিয়র ওয়েটার। মিজানুরের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের সবিলপুর গ্রামে।

এ ঘটনায় মিজানুরের ছোট ভাই আরিফ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রশীদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিজানুরকে যারা খুন করেছে, তারা ভয়ংকর সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। তিন আসামি আদালতের কাছে স্বীকার করেছেন, মিজানুর রহমানকে খুন করার আগে তারা আরো তিনটি খুনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। খুন তিনটি সংঘটিত হয়েছে রাজধানীর ভাটারা ও খিলক্ষেত এলাকায়।

যেভাবে মিজানুরকে হত্যা:
মিজানুরের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লেখাপড়ার পাশাপাশি মিজানুর বনানীর হোটেলে ওয়েটার হিসেবে চাকরি করে আসছিলেন। তার বাবা আমির হোসেন গ্রামের বাড়িতে দোকানদারি করেন। চাকরি করে মিজানুর নিজের লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশপাশি বাড়িতে পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতেন। থাকতেন শেওড়া এলাকার একটি মেসে।

মিজানুরের ভাই মামলার বাদী আরিফ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তার ভাই মিজানকে যারা খুন করেন, তারা মুঠোফোন নিয়ে গিয়েছিলেন, রেখে গিয়েছিলেন তার মানিব্যাগ। সেই মানিব্যাগে ছিল ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র, বিশ্ববিদ্যালয় ও হোটেলের পরিচয়পত্র। পরে পুলিশ তাদের লক্ষ্মীপুর থানায় ফোন দেয়। এরপর ইউনিয়নের এক চৌকিদারের মাধ্যমে ভাই মিজানুরের মৃত্যু সংবাদ পান। ঢাকায় এসে তিনি তার ভাইয়ের লাশের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

হাতিরঝিল থানা-পুলিশ জানায়, মিজানুর খুন হওয়ার সম্ভাব্য সব কটি কারণ সামনে রেখে তারা অনুসন্ধান শুরু করে। তবে মিজানুরের মুঠোফোন খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। সেই সূত্র ধরে নুরুল ইসলাম নামের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় অপর দুই ছিনতাইকারী আবদুল্লাহ ও জালালকে।

আরিফ জানান, তার ভাই সেদিন বনানীর হোটেলে কাজে যোগ দেন বেলা ২টায়। রাত ১১টার সময় কাজ শেষে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন।

হাতিরঝিল থানা-পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন হোটেল থেকে কাজ শেষে নিজের বাসায় (শেওড়ায়) যাওয়ার জন্য বনানীর কাকলীতে অপেক্ষা করতে থাকেন। গভীর রাতে যানবাহন কমে যায়। তখন সিএনজিচালিত একটা অটোরিকশা সেখানে আসে। অটোরিকশার ভেতর দুজন যাত্রী বসা ছিলেন। চালক ছিলেন ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য নুরুল ইসলাম। অটোরিকশাটি যখন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে আসে, তখন যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য মিজানের মুঠোফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। মিজান তাতে বাধা দেন। তখন মিজানের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে তারা হত্যা করেন। মিজান হত্যায় গ্রেফতার তিন আসামি তাদের কাছে এবং আদালতের কাছে এসব কথা স্বীকার করেছেন।

পুলিশ জানায়, সংঘবদ্ধ এই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা ঢাকা মহানগরের উত্তরা, ভাটারা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে তিন থেকে চার বছর ধরে ছিনতাই করে আসছিল। ঢাকা মহানগর ছাড়াও এই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে বহু ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত। গ্রেফতার তিন আসামি জিজ্ঞাসাবাদে তা স্বীকার করেছেন। সন্ধ্যা ৭টার পর ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা বের হন। আর ভোররাত পর্যন্ত ছিনতাই করে থাকে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যাত্রী সেজে অটোরিকশায় থাকে। নিরীহ লোকদের ওই অটোরিকশায় ওঠানোর পর তাদের মালামাল লুট করেন। বাধা দিলে তাদের কাছে থাকা গামছা কিংবা মাফলার দিয়ে শ্বাস রোধে হত্যা করে লাশ নির্জন স্থানে ফেলে রেখে চলে যান। ।

হাতিরঝিল থানার ওসি জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিজানুর রহমান হত্যায় জড়িতে সংঘবদ্ধ ভয়ংকর ছিনতাইকারী চক্রের অপর সব সদস্যকে শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে।

মিজানের ভাই আরিফ বলেন, সামনের মাসে তার ভাইয়ের জাপানে যাওয়ার কথা ছিল। তার ভাই পাসপোর্টও রেডি করেছিলেন। কে বা কারা তার ভাইকে খুন করেছে, সে তথ্য তারা এখনো জানেন না। তবে যে বা যারা তার নিরীহ ভাইকে হত্যা করেছেন, তাদের ফাঁসি চান।

আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর আমার মা পাগলের মতো হয়ে গেছেন । ভাইকে তো আমরা ফিরে পাব না। আমরা খুনিদের ফাঁসি চাই।’

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত