ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

বার্ন ইউনিটের স্বেচ্ছাশ্রমী ৬৮ কর্মচরীর যন্ত্রণা কে অনুভব করবেন!

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ৫ মে ২০১৯  

বার্ন ইউনিটের এই সেবকদের সমস্যার সুরাহা কি কেউ করবেন না                   ছবি: নিউজওয়ান২৪.কম

বার্ন ইউনিটের এই সেবকদের সমস্যার সুরাহা কি কেউ করবেন না ছবি: নিউজওয়ান২৪.কম

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের অস্থায়ী কর্মচারীরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

রবিবার (৫ মে) বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বার্ন ইউনিটের চতুর্থ তলায় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের কক্ষের সামনে তারা এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এতে অংশ নেওয়া কর্মচারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কর্মচারী জীবন মিয়া বলেন, আমরা বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে ও বিনা বেতনে কাজ করে আসছি। দীর্ঘদিন ধরে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি করে আসছি। এর আগেও কয়েক দফায় আন্দোলন, কর্মসূচি করেছি। আশ্বাস দিয়েও কোনো সমাধান না হওয়ায় রবিবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। আগামীকালও এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢামেক বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, তাদের স্থায়ী চাকরির জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাদের কর্মসূচি যৌক্তিক। তাদের সঙ্গে রবিবারও কথা বলেছি। বলেছি আমরা এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকছে না। রবিবারের কর্মসূচির বিষয়টি নিয়ে আবারও আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।

চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ফের আন্দোলনের হুমকি দেওয়া এই ৬৮ কর্মচারী ১৫ বছর ধরে ঢামেকের বার্ণ ইউনিটে বিনা বেতনে এক ধরনের স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে আসছে। এর আগে বার্ণ অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন ও প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালামের আশ্বাসে অনশন ভেঙে কাজে যোগ দিলেও দীর্ঘ ৭ মাসেও তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়নি। এ নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়া ৬৮ কর্মচারী বার্ণ ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রকল্প পরিচালকের কাছে তাদের দাবি তুলে ধরে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করার কথা জানিয়েছেন। সময়ের ব্যবধানে বাড়ি ভাড়া ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঢাকায় সন্তান-পরিবার নিয়ে বছরের পর বছর ধরে নানা সমস্যায় অতিকষ্টে দিন যাপন করছেন এসব কর্মচারী। 

ইতোমধ্যেই বার্নের অনিয়মিত কর্মচারীরা তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরে এই ইউনিটের ডাক্তার-নার্সসহ ঢাকা মেডিকেলের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। এর আগে ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর  ‘ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন ৬৮ কর্মচারী।  এদিকে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়া ৬৮ কর্মচারীর দাবির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেছেন ডাক্তার-নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। তারা বলছেন, বার্ণ ইউনিটে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়া ৬৮ কর্মচারীর দাবি যৌক্তিক। তারা দেশের স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ পেট্রল বোমার আগুনে ঝলসানো রোগীদের যথাযথ সেবা প্রদান না করলে বার্ন ইউনিটে সেবা নিতে আসা রোগীরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতেন। অনিয়মিত এসব কর্মচারীদের আন্তরিকতায় অনেক পোড়া রোগী সুস্থ্য হয়ে ফিরে গেছেন। এতে তাদের স্বজনরা সন্তোষও প্রকাশ করেছেন। তাদের এমন যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। গত  ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে কর্মরত অনিয়মিত ৬৮ কর্মচারীর পক্ষে সভাপতি জীবন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক হাবিল মিয়ার যৌথ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, দগ্ধ পোড়া ক্ষতের দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে ভুক্তভোগী অনেক রোগীই চিকিৎসা সেবা নিতে ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগে পৌঁছার পর চিকিৎসকরা আসার আগেই তাদের পাশে বন্ধুর মতো এসে দাঁড়ান ইউনিটের অনিয়মিত এসব কর্মচারীরা। এরপর চিকিৎসকদের পাশাপাশি কর্মচারীদের নানা ধরনের সেবা নিয়ে সুস্থ্য হতে থাকেন চিকিৎসা নিতে আসা এসব আগুনে পোড়া দুর্ভাগা রোগীরা। দুঃসহ যন্ত্রনায় কাতরানো রোগীদের সেবা দিলেও সেই বার্ন ইউনিটের কর্মচারীরাই মনের ক্ষত নিয়ে আজো দুঃসহ দিনযাপন করছেন। কর্মচারীরা বলছেন, বিগত ১৫ বছর ধরে বিনা বেতনে স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবে দিনের পর দিন দগ্ধ পোড়া রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। অথচ আজ পর্যন্ত তারা কোনো বেতন-ভাতাদি পাননি। অদ্যবধি স্থায়ীকরণ হয়নি তাদের চাকরি। এই দীর্ঘ সময়ে অনেকেই তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন করেনি কেউই। বর্তমানে যখন তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের সুযোগ আসতে শুরু করেছে, ঠিক তখনই একটি পক্ষ বয়সের দোহাই দিয়ে তাদের বাদ দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস পেয়ে চাকরি স্থায়ী হওয়ার আশায় টানা ১৫ বছর ধরে বিনা বেতনে কাজ করা এসব কর্মচারীরা স্থায়ীকরণ না হওয়ার আশঙ্কায় এখন চরম হতাশায় ভুগছেন। ইতোমধ্যেই তারা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে অনশন করলেও আশ্বাস দিয়ে কাজে ফিরিয়ে নেয় বার্ন ইউনিট কর্তৃপক্ষ। এরপর কেটে যায় টানা ৭ মাস। সেই আশ্বাসের ওপর ভর করে এখনো তারা নিজেদের কষ্ট বুকে চেপে পোড়া রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

বার্নের অনিয়মিত কর্মচারী জীবন মিয়া ও হাবিল মিয়ার যৌথ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেয়া হয়। 

এদিকে এ রিপোর্ট লেখাপর্যন্ত বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বার্ন ইউনিটে কর্মরত চতুর্থশ্রেণির পদমর্যাদার ৬৮ কর্মচারী দীর্ঘদিন যাবৎ বিনা বেতনে কাজ করছেন। তারা সরকারি সকল বিধি মেনেই যথাযথভাবে প্রতিনিয়ত বার্ন ইউনিটে দৈনন্দিন কাজকর্ম করছেন। রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন। তারা যদি কাজ না করতো তাহলে দগ্ধ পোড়া রোগীদের সেবা দেয়া সম্ভব হত না। তাই আমি সকল চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে তাদের জন্য সরকারের কাছে আহবান জানাবো বার্ন ইউনিটে দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে কাজ করা ৬৮ কর্মচারীর চাকরি স্থায়ীকরণসহ ওদের জন্য যেন একটা সুব্যবস্থা করা হয়।

নিউজওয়ান.কম/আরকে

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত