ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

পাকিস্তানে হিন্দুদের হোলি উৎসব

ইত্যাদি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২২ মার্চ ২০১৯  

পাকিস্তানের লাহরে হোলি উদযাপনের দৃশ্য (ফাইল ছবি)

পাকিস্তানের লাহরে হোলি উদযাপনের দৃশ্য (ফাইল ছবি)

হোলি উৎসব উদযাপনের এই ছবিগুলো দেখে অনেকেরই বিশ্বাস করা মুশকিল হবে যে এগুলো ভারতের কোনো শহরের নয়- খোদ পাকিস্তানের। সাধারণ দৃষ্টিতে হোলি উৎসবের উদযাপন হিন্দুপ্রধান ভারতে ও প্রতিবেশী বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলোর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা উৎসাহের সঙ্গে পালন করলেও কট্টর ভাবাপন্ন মুসলিম প্রধান পাকিস্তানেও যে এভাবে হোলির রঙ ছড়ায় তা অনেকেই জানেন না। 

পাকিস্তানের লাহরে হোলি উদযাপনের দৃশ্য

শুক্রবার হিন্দি পত্রিকা নবভারত.কম প্রকাশিত পাকিস্তানে হোলি উদযাপনের বেশকিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের লাহোরে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ধূমধামের সঙ্গে হোলি উদযাপন করেছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) শহরের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় আবিরের রঙ মাখিয়ে আর পরষ্পরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তারা উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। 

দেখা গেছে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরাও নেচে-গেয়ে হোলির আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। 

নবভারতের খবরে বলা হয়, এদিন লাহোরের স্থানীয় এক মন্দিরে জড়ো হয় সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন আবিরের রঙে আর গানের তালে তালে মেতে ওঠে নাচের ছন্দে। উৎসবে পাকিস্তানি সংখ্যালঘু হিন্দুরা ছাড়াও স্থানীয় অপরাপর ধর্মাবলম্বীরা অংশ নেয়।

পাকিস্তানের হোলি উদযাপনের দৃশ্য

অশুভের বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয়ের আনন্দ প্রকাশে হোলি উদযাপন করা হয়ে থাকে।

হোলি উৎসবের পটভূমি:

হোলি উৎসবের পটভূমি নিয়ে অনেক ঘটনা, কাহিনী, কিংবদন্তী রয়েছে। তারমধ্যে বিষ্ণুর কিংবদন্তীর কাহিনী অন্যতম।
ভাগবত পুরাণ এর সপ্তম অধ্যায় অনুসারে, অসুর রাজা হিরণ্যকশিপু অমর হতে চান। এজন্য ব্রহ্মার কাছ হতে অমরত্বের বরপ্রাপ্তির জন্য কঠোর ধ্যানে রত হন। 

পাকিস্তানের হোলি উদযাপনের দৃশ্য

কিন্তু দেবতারা খুব কমই অমরত্ব দান করে। তাই ধূর্ত অসুর এমন বর চান যা কৌশলে তাকে অমরত্ব লাভ করাবে। শেষে অসুর যে বর লাভ করেন তা তাকে পাঁচটি বিশেষ ক্ষমতা দান করে। এগুলো হচ্ছে, তাকে মানুষ বা কোন প্রাণীও হত্যা করতে পারবে না; তাকে ঘরেও হত্যা করা যাবে না, আবার বাইরেও হত্যা করা যাবে না; তাকে দিনেও হত্যা করা যাবে না আবার রাতেও হত্যা করা যাবে না; তাকে অস্ত্রের (যা ছুড়ে মারা হয়) দ্বারাও হত্যা করা যাবে না আবার সস্ত্রের (যা হাতে থাকে) দ্বারাও হত্যা করা যাবে না; তাকে স্থল, জল বা বায়ু কোথাও হত্যা করা যাবে না। এই বর লাভ করে হিরণ্যকশিপু তথা অসুর অহংকারী ও উদ্ধত হয়ে ওঠে। 

অসুর এবার সিদ্ধান্ত নেন যে কেবল তাকেই দেবতা হিসেবে পূজা করা হবে। কেউ তার আদেশ পালন না করলে তিনি তাকে শাস্তি দেবেন বা হত্যা করবেন। তার পুত্র প্রহ্লাদ এতে সম্মত হননি। তিনি একজন বিষ্ণুভক্ত ছিলেন। তার পিতাকে দেবতা হিসেবে পূজা করতে তাই তিনি অস্বীকার করেন। 

এতে অসুর খুব রাগান্বিত হন এবং প্রহ্লাদকে হত্যা করার বিভিন্ন চেষ্টা করেন। এজন্য অসুর তার বোন হোলিকার কাছে সাহায্য চান। হোলিকার একটি বিশেষ পোশাক ছিল যা তাকে আগুনে পুড়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করত। তিনি নিজের ভাই অসুরকে কোলে বসিয়ে প্রহ্লাদের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এতে প্রহ্লাদ আগুনে পুড়ে মারা যাবে কিন্তু হোলিকার কাছে থাকা বিশেষ বস্ত্রের জন্য তার ভাই অসুরের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু সেই আগুন জ্বলতেই হোলিকার শরীর থেকে বিশেষ বস্ত্র খুলে গিয়ে প্রহ্লাদের শরীরকে আবৃত করে। এতে হোলিকা আগুনে পুড়ে যায়, আর প্রহ্লাদ ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়।

অপরদিকে, বিষ্ণু নৃসিংহ অবতার (অর্ধমানব-অর্ধসিংহ) রূপে গোধূলি লগ্নে (দিন ও রাতের মাঝামাঝি সময়ে) আবির্ভূত হন, অসুরকে বাড়ির দোরগোড়ায় (না বাইরে না ঘরে) নিয়ে যান, তাকে নিজের কোলে (না বায়ুতে, না স্থলে) স্থাপন করেন। এরপর অসুরের নাড়িভুড়ি বের করেন তার থাবা দিয়ে (না অস্ত্র না সস্ত্র) এবং তাকে হত্যা করেন। এভাবে দেখা যায়, হিরণ্যকশিপু তথা অসুরের লাভ করা বরও তাকে বাঁচাতে পারেনি। প্রহ্লাদ ও মানব জাতি বাধ্যবাধকতা ও ভয় থেকে মুক্তি পায়। নৃসিংহের দ্বারা হিরণ্যকশিপু বধের এই কাহিনী অশুভের উপর শুভের জয়কে নির্দেশ করে। 

পাকিস্তানের হোলি উদযাপনের দৃশ্য

হোলিকা দহন বা নেড়াপোড়া উৎসব এই ঘটনাটিকেই নির্দেশ করে। হোলিকার এই অগ্নিদগ্ধ হওয়ার কাহিনীই দোলের পূর্বদিনে অনুষ্ঠিত হোলিকাদহন বা চাঁচর উৎসবের সঙ্গে যুক্ত। স্কন্দপুরাণ গ্রন্থের ফাল্গুনমাহাত্ম্য গ্রন্থাংশে হোলিকা ও প্রহ্লাদের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে।

সূত্র: এনবিটি, উইকিপিডিয়া  

নিউজওয়ান২৪/আ.রাফি

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত