ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ ও পান্তা ইলিশ সমাচার

ইত্যাদি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১০, ১৩ এপ্রিল ২০১৯  

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

বাংলা সনের প্রথম দিন। এ দিনটি বাংলাদেশে নববর্ষ হিসেবে পালিত হয়। এটি বাঙালির একটি সর্বজনীন  লোকউৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে।

কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্যাপিত হয় নববর্ষ। এদিন সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।

বৈশাখ হলো বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের প্রথম মাস এবং শকাব্দ বা ভারতীয় রাষ্ট্রীয় পঞ্চাঙ্গের দ্বিতীয় মাস। এটি নেপালি পঞ্জিকা বিক্রম সম্বৎ ও পাঞ্জাবি নানকশাহি পঞ্জিকার প্রথম মাস। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির এপ্রিল মাসের শেষার্ধ ও মে মাসের প্রথমার্ধ নিয়ে বৈশাখ মাস। বৈদিক পঞ্জিকায় এই মাসকে মাধব মাস এবং বৈষ্ণব পঞ্জিকায় একে মধুসূদন মাস বলে।

বুৎপত্তি: ‘বৈশাখ’ শব্দটি এসেছে বিশাখা নামক নক্ষত্রের নাম থেকে। এই মাসে বিশাখা নক্ষত্রটিকে সূর্যের কাছে দেখা যায়।

নববর্ষ: বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটি হলো বাংলা নববর্ষ। এই দিনটি বাংলাদেশে ‘পহেলা বৈশাখ’ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা রাজ্যে ‘পয়লা বৈশাখ’ নামে পরিচিত।

বাংলাদেশ ও ভারতের উক্ত তিন রাজ্যে এই দিনটি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হয়। এই দিনটিতে যাবতীয় ব্যবসায়িক কাজকর্ম শুরু হয়। ব্যবসায়ীরা এই দিন নতুন হালখাতা শুরু করেন। নতুন হালখাতা শুরু উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা খদ্দেরদের মিষ্টি, উপহার ও বাংলা ক্যালেন্ডার বিতরণ করেন। কলকাতার কালীঘাট মন্দির ও দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে এই দিন প্রচুর পূণ্যার্থী পূজা দেন এবং ব্যবসায়ীরা লক্ষ্মী-গণেশ ও হালখাতা পূজা করেন।

কালবৈশাখী: প্রথাগত দিক থেকে বৈশাখ মাস থেকে গ্রীষ্ম ঋতুর শুরু ধরা হয়। এই মাসে সন্ধ্যা বেলায় মাঝে মাঝে কালবৈশাখী ঝড় ওঠে। এই ঝড়ে মাঝে মাঝেই প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।

সাহিত্যে উল্লেখ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিসংকলন গীতবিতান গ্রন্থের প্রকৃতি পর্যায়ের গ্রীষ্ম উপপর্যায়ে ‘হৃদয় আমার ওই বুঝি তোর বৈশাখী ঝড়’, ‘এসো এসো, এসো হে বৈশাখ’, ‘ওই বুঝি কালবৈশাখী’, ‘বৈশাখের এই ভোরের হাওয়া’, ‘বৈশাখ হে, মৌনী তাপস গানে বৈশাখ মাসের উল্লেখ পাওয়া যায়।

পহেলা বৈশাখে কেনো পান্তা-ইলিশ খাই!

হাজারও ছন্দ-কবিতা ও প্রাণের উচ্ছ্বাসে বছর ঘুরে আসে পহেলা বৈশাখ। প্রতি বছর এ দিনকে ঘিরে বাঙ্গালি জাতি আয়োজন করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। থাকে হরেক রকমের খাবার । সেসব আয়োজনের মধ্যে একটি প্রধান উপাদান হল পান্তা-ইলিশ।  

পান্তা ভাত গ্রামীণ বাঙালি জনগোষ্টির একটি জনপ্রিয় খাবার। এই পান্তা তৈরি করা হয় রাতে খাবারের জন্য রান্না করা ভাত বেঁচে গেলে তা সংরক্ষণের জন্য পানিতে ভিজিয়ে রেখে । পরদিন পানিতে রাখা ভাতের নাম হয় পান্তা ভাত। পান্তা ভাত গ্রামীণ মানুষ সকালের নাশতা হিসাবে খেয়ে থাকে। সাধারণত লবণ, কাচা মরিচ ও পেঁয়াজ মিশিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া হয়, অনেকেই আবার এর সাথে আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ডাউল ভর্তা, শুটকি ভর্তা বা সরিষার তেল দিয়ে পান্তা ভাতের রুচি বৃদ্ধি করে থাকে। 

বাংলা নববর্ষের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের যোগসূত্র ঠিক কবে থেকে তার সঠিক ইতিহাস পাওয়া যায় না। শাসক শ্রেণির সুবিধার্থেই বাংলা সালের গোড়াপত্তন হয়েছিল বিষয়টি সকলেরই জানা। অবশ্য পরবর্তীকালে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোটা বাঙালির স্বাতন্ত্র্য সংস্কৃতি ও রীতিতে পরিণত হয়। তবে মুঘল শাসনামলে সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা মুক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো, আগত দর্শক শ্রোতাগণ ঐতিহ্যবাহী পান্তাভাত খেতো। বিংশ শতাব্দীর শেষে শহুরে বাঙালীরা বাংলা নববর্ষকে ঘটা করে উদযাপন শুরু করে। এই দিন বাঙালিরা তাদের ঐতিহ্য হিসেবে ভাজা ইলিশ মাছসহ পান্তা ভাত খাওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়। 

একুশ শতাব্দীর প্রথম দশকে নববর্ষের সকালে ইলিশ মাছ সহযোগে পান্তা ভাত বাঙালি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। রমনা বটমূলের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের সমন্বয় হওয়ার পর থেকে এ সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে। এরপর থেকেই মূলত গ্রাম-শহর একাকার হয়ে যায় পান্তা-ইলিশ সংস্কৃতির সঙ্গে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে চৈত্রের কোনো এক বিকালে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন সাংস্কৃতিক কর্মী। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সাংবাদিক বোরহান আহমেদ, উনি রমনা বটমূলে পান্তা-ইলিশ চালুর প্রস্তাব দেন, তখন তার সঙ্গে তার সহযোগীরা মিলে, ৫ টাকা করে চাদা তুলে, পুরো আয়োজনের ব্যবস্থা করলেন। বাজার করা হলো, রান্না হলো, রাতে ভাত রেধে পান্তা তৈরি করে, কাঁচামরিচ-শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ ও ইলিশ ভাঁজা নিয়ে পর দিন ‘এসো হে বৈশাখে’র আগেই ভোরে হাজির হলেন বটমূলের রমনা রেষ্টুরেন্টের সামনে। মুহুর্তের মধ্যে শেষ হলো পান্তা-ইলিশ। এভাবে যাত্রা শুরু হলো পান্তা ইলিশের।

অপর দিকে, সম্ভবত একই বা পরের বছর শহিদুল হক খান এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। তিনি দাবি করেছেন, নিজ হাতে পান্তার পোষ্টার লিখেছেন, তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ ভাত রেধেছেন, ইলিশ মাছ ভেঁজেছেন, কাঁচামরিচ পেঁয়াজ কেটেছেন, মাটির সানকি সংগ্রহ করেছেন। এবং তিনি এ নিয়ে বিটিভিতে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন! তবে রমনা বটমূলের পান্তা ইলিশের উদ্যোক্তার কৃতিত্ব এককভাবে কেউ নন। বছরের প্রথম দিনে এখানে ঘটা করে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার সংস্কৃতিকে অনেকেই ভালো চোখে দেখেন না। এমনকি তারা বলেছেন এর সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকেই আবার বলেন, শহরে পান্তা ভাত খাওয়া আমাদের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতিকে ব্যঙ্গ করা। এটি শুরু হয়েছিল টাকা কামানোর ধান্দায়, সংস্কৃতিপ্রেমের জন্য নয়। আজকাল শহরের মানুষের মধ্যে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, বছরের শুরুর এ দিনটিতে ইলিশ না খেলে বছরটাই যেন মাটি হয়ে যাবে।

সূত্র: উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া ও পূর্বপশ্চিম বিডি.নিউজ

নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত