ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

চীনে পোড়ামাটির সেনাবাহিনীর রহস্যভেদ!

ইত্যাদি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ৯ এপ্রিল ২০১৯  

সারা দুনিয়া তাক লাগানো টেরাকোটা সোলজার্স বা পোড়ামাটির সেনাবাহিনী প্রথম আবিষ্কার করে চীনের জিংওয়ার এক কৃষক পরিবার, ১৯৭৪ সালে। বাড়ির পাশে পাতকুয়োর জন্য গর্ত করছিলেন গ্রামের বাসিন্দা ওয়াং পাঝি। খনন করে দুই মিটার পরিমাণ নিচে নামার পর সেখানে অন্যরকম মাটি দেখা যায়। সেই মাটি ওপরের মতো না, অপেক্ষাকৃত শক্ত এবং লাল রঙের। 

পরে আরেকটু খনন করার পর সেখান থেকেই বেড়িয়ে আসে টেরাকোটা মূর্তির কিছু টুকরো এবং ব্রোঞ্জের অস্ত্র। প্রধানত পোড়ামাটির ওই মূর্তিগুলো দেখতে যেন অবিকল সেনাসদস্য- শুধু প্রাণহীন।

ওদিকে মূর্তি ও ব্রোঞ্জের অস্ত্র উদ্ধারের খবর জানতে পেরে গ্রামে ভূতত্ত্ববিদদের একটি দল পৌঁছয়। শুরু হয় খোঁড়াখিুরি। প্রায় ২০ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে খোঁড়া হলো এবং সেখান থেকে পাওয়া গেল ৮ হাজার সেনা, ১৩০টি রথ, ৫২০টি ঘোড়া এবং ১৫০ ঘোড়সওয়ার সেনার মূর্তি।

টেরাকোটা সেনাদের নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের কারও মতে, ৩০০০ বছর আগে চীনারা কোনও মহৎ বা প্রভাবশালী ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁকে সমাহিতের সময় সঙ্গে প্রিয়সঙ্গী বা বিশ্বস্ত কর্মচারীকেও সমাধি দিত।  তারা বিশ্বাস করতো এতে মৃত্যু পরবর্তীকালে তাদের সঙ্গীর অভাব দূর হবে এবং তারা তাদের কাজকর্মের সহযোগী হবে। 

তবে একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বিবাদ শুরু হয়- এই নিয়ে খুব বিতর্ক হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তারপর থেকেই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এই পোড়ামাটির সৈন্যসামন্ত কবরস্থ করার নিয়ম চালু হয়। 

তার মানে ওই এলাকাটা ছিল এক অর্থে অভিজাত ব্যক্তিদের কবরখানা। 

কিন্তু মাটির নিচে এত বছর ধরে প্রায় অক্ষত অবস্থায়  কীভাবে রয়েছে টেরাকোটা মূর্তিগুলো? এতদিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল সময়ের গ্রাসে মাটি খসে পড়বে না বা মরিচা ধরবে না এমন কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছিল এদের সংরক্ষণে। কিন্তু পরবর্তীকালের গবেষণায় আরও অবাক করা তথ্য উঠে এসেছে এ বিষয়ে।

গবেষকদের মতে, আসলে কোনও বিশেষ রাসায়নিকের প্রয়োগে নয়, জিয়াং ও তার আশেপাশের এলাকার মাটি-পানি’ই এগুলোকে সংরক্ষণ করে আসছে বছরের পর বছর ধরে।

বিজ্ঞানীরা জানান, যেখানে টোরাকোটা সেনাদের রাখা হয়েছিল তার চারপাশের ভূমি ও আবহাওয়ায় জৈব পদার্থের উপস্থিতি খুবই কম। মাটির ক্ষারকতাও মাঝারি পরিমাণের। পরীক্ষায় দেখা গেছে, টেরাকোটা সেনা অন্য জায়গায় মাটির নিচে রেখে দিলে ৪ মাসের মধ্যেই ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। কিন্তু জিয়াংয়ের মাটিতে তা হয় না বা এতদিনে হয়নি।

এর আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, মরিচার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সমস্ত ব্রোঞ্জের অস্ত্রের বাইরের অংশে ক্রোমিয়ামের প্রলেপ লাগানো হয়েছিল হয়তো। কারণ, ব্রোঞ্জের অস্ত্রের গায়ে ক্রোমিয়াম অক্সাইডের আস্তরণ পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

কোনও ধাতব বস্তুকে মরিচার ধরা থেকে রক্ষা করার জন্য ক্রোমিয়াম অক্সাইডের প্রলেপ লাগানোর রীতি এখনো আছে। তবে জিয়াংয়ের ক্ষেত্রে সত্যিটা হচ্ছে- ধারণাটা ভুল ছিল। ক্রোমিয়ামের যে প্রলেপ মিলেছিল জিয়াংয়ে পাওয়া প্রত্নবস্তুতে তা আসলে ওইসব ধাতব বস্তুর পালিশের কাছে ব্যবহৃত হয়েছিল। আর পোড়মাটির জিনিসগুলোও জিয়াংয়ের খনিজ আর  আবহাওয়ার ইতিবাচক প্রভাবে নষ্ট হয়নি। 

প্রসঙ্গত, প্রাচীন বাংলার বিশ্বখ্যাত মসলিন কাপড়ের ক্ষেত্রেও দেখা যেত ঢাকা ও তার আশপাশের অঞ্চলেই অতি সূক্ষ্ণ মসলিন ভাল উৎপন্ন হতো। এ অঞ্চলের মসলিন তাঁতীরা অতি দক্ষ ও কুশলী ছিলেন সত্য, কিন্তু মসলিন বয়নের জন্য এ অঞ্চলের জল-হাওয়া আর মাটিরও প্রভাব ছিল। কারণ, মসলিন কাপড় তৈরির পর সেগুলো ধোলাই করার জন্য মাটিতে খোঁড়া বিশাল বিশাল গর্তের (পুকুর) ব্যবহার করা হতো। সেইসব পুকুরের পানিতে মিশতো এখানকার মাটির বিশেষ খনিজ যা মসলিনকে করে তুলতো আরো উন্নত, সূক্ষ্ণ। 
নিউজওয়ান২৪.কম/এসএমএস  

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত