ঢাকা, ১৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

আফ্রিকার ‘যমরাজ’ ব্লাক মাম্বা

পরিবেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১২, ২৯ মে ২০১৬   আপডেট: ১১:০১, ২৫ জুলাই ২০১৬

প্রতিরক্ষা চিন্তায় আক্রমণাত্মক পজিশনে ব্লাক মাম্বা     ছবি: উইকিপিডিয়া

প্রতিরক্ষা চিন্তায় আক্রমণাত্মক পজিশনে ব্লাক মাম্বা ছবি: উইকিপিডিয়া

দেখেই বুঝেছেন এটা ডোরা সাপ নয়, চেহারাই বলে দিচ্ছে ভয়ঙ্কর বিষ ধরেন তিনি তার দাঁতের সিরিঞ্জে। এর নাম ব্ল্যাক মাম্বা, নিক নেম কিল বিল (এই নামে হলিউডি অ্যাকশন মুভি আছে)।

হিংস্রতার আর প্রতিপক্ষ ধ্বংসের বিবেচনায় পৃথিবীর ভয়ংকরতম সৃষ্টির একটি হিসেবে ধরা হয় একে। অতি বিষাক্ত, ধূর্ত, বিদ্যুৎগতির চলাফেরার ক্ষমতাধারী প্রানীটি কারও কারও কাছে ভয়ংকরভাবে মনোমুগ্ধকরও।

অনেকেই মনে করেন- আফ্রিকার সাব সাহারা অঞ্চলের এই বুকে হাঁটা প্রাণীটিকে হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা প্রায় কারুরই নেই। এর সামনে পড়লে, চোখাচোখি হলে মানুষ বা অন্যপ্রাণী আর নড়াচড়া করতে পারে না- সম্মোহিত হয়ে পড়ে চলৎশক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলে। তাই বলে মাম্বা সাহেব কাউকে বেঁধে ফেলে না কিংবা গল্পও জুড়ে দেয় না। ওই বলা হলো, সম্মোহন, এক ধরনের সম্মোহিত হয়ে পড়ে প্রতিপক্ষ। এসময়টায় একটু হিঁসহিঁসানি শব্দ বের হয় শুধু এর গলা দিয়ে।

মাম্বার চলাচলের মধ্যে ভয়ংকর এক গা ছমছমে ভাব আছে। পিচ্ছিল... দ্রুত। এই আছে তো এই নেই। ভোজবাজির মতো মুহূর্তেই সামনে থেকে উধাও হয়ে যায় তো পরক্ষণেই আবার হাজির! কোথা দিয়ে যায় আর কোথা দিয়ে আসে অনেক ক্ষেত্রেই তা ঠাহর করা যায় না। সারা শরীরটাকে ঘাসের মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে হাত দুয়েক মাথা উপরে রেখে ডানে বায়ে প্যাঁচ খেয়েই তোলে ঢেউ... সর্পিল ঢেউ। প্রায় বিদ্যুৎগতি। চোখে ধাঁধিয়ে দেয়। লিকলিকে হালকা, লম্বা এই সরীসৃপের বৈজ্ঞানিক নাম ডেনড্রোয়াসপিস পলিলেপিস (Dendroaspis polylepis)।

আফ্রিকার সবচে’ লম্বা আর গোটা বিশ্বের বিষধরদের মধ্যে দ্বিতীয়। গড় দৈর্ঘ ২.৫ মিটার এবং সর্বোচ্চ দৈর্ঘ ৪.৫ মিটার (প্রায় ১৫ ফিট)। তবে মাব্বার রং বিভিন্ন। সাধারণত বাদামি, ধূসর আর কালো- এই তিন রঙে দেখা যায় এদের। অবশ্য পুরোপুরি মিশমিশে কালো হয় না। আর কালো রঙের মাম্বাদের ক্ষেত্রে বয়সের একটা বিষয় আছে। তরুণ বয়সের কালো মাম্বা পূর্ণ বয়স্কদের চেয়ে দেখতে হয় হাল্কা কালো। আর পরিণত বয়সের মাম্বা হয় পূর্ণ বয়স্কদের চেয়ে একটু গভীর রঙের। পুরো কুচকুচে কালো হয় না। তবে মুখের ভেতরটা কালির মতো কালো।

দ্রুত একাধিক ছোবল হানায় পারদর্শী ব্ল্যাক মাম্বার ‘কুখ্যাত’ এই চেহারা দেখে স্থির হয়ে যায় মানুষসহ অন্যান্য প্রানী। বুঝতেও পারে না কখন তাকে দংশন করে, সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে যমদূত। যখন বুঝতে পারে তখন আর কিছু করার সীমানার বাইরে থাকে ঘটনার শিকার।

তবে মাম্বার ব্যাপারে যতো ভয় ধরানো সত্য আর গল্পই প্রচার হোক না কেন, এই সরীসৃপটি অন্যান্য সাপের মতোই মানুষের উপস্থিতি এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। সাধারণত ছোবল হানে তখনি যখন সে আক্রান্ত হয় বা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়ে।

তবে মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী। অন্যান্য সৃষ্টির উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব কায়েম করাই যার স্বভাব। “কাইট্টা ছিল্ল্যা লবন লাগাইয়া দিমু” টাইপ মানুষেরা মাম্বার চামড়ায় তৈরি জুতা পরে মচমচ করে হাঁটেন আফ্রিকারই মাটিতে, জঙ্গলের পাশ দিয়ে। আবার অনেকে তার প্রিয় মোবাইলের কাভার লাগান এর চামড়া দিয়ে। ভাবখানা এমন, আই অ্যাম আ হিউম্যান বিইং অ্যান্ড অফ কোর্স সুপিরিয়র দ্যান ইউ! এজন্য মাম্বা হত্যা কের তারা। আর একদল মানুষ এদের হত্যা করে আতংক আর ভীতিতে। এসব কারণ মাম্বাদের টিকে থাকার পক্ষে একটা হুমকিই বটে।

মাম্বার আতঙ্ক
সাধারণত সজ্ঞানে পূর্ণবয়স্ক মাম্বার মুখোমুখি হতে চায় না কেউ। তবে স্নেক ঈগল অর্থাৎ সাপখেকো ঈগল এর থেকে ব্যতিক্রম। সব ধনের স্নেক ঈগলই সব ধনের সাপ খায় তবে কালোবুকওয়ালা স্নেক ঈগল আর ধূসর স্নেক ঈগল বিশেষভাবে ব্লাক মাম্বার প্রতি আসক্ত। কি জানি, এদের মাংস হয়তো বেশি সুস্বাদু লাগে তাদের। তাই ব্লাক মাম্বাও এদের ব্যাপারে থাকে সতর্ক। এছাড়া হলদে বেজিও (ইয়েলো মোঙ্গুস) এদের শক্তিশালী শত্রুপক্ষ হিসেবে পরিচিত।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

লাইফস্টাইল বিভাগের সর্বাধিক পঠিত