মৃতদেহ সমাহিতকরণেও কঠোর চীন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ওয়াং টিংয়ু বিষণ্ণভাবে বিছানার পাশের ফাঁকা জায়গাটা দেখালেন, যেখানে তার জন্য একটি কফিন রাখা ছিল। বছর বিশেক আগে যখন তিনি এবং তার স্বামীর বয়স ৬০ অতিক্রম করছিল তখন জোড়া কফিন কেনা হয়েছিলো। ওয়াংয়ের স্বামীর মৃত্যুর পর একটি কফিনে তাকে সমাহিত করা হয়। অন্যটি ৮১ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধার নিজের জন্য সযত্নে রাখা ছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগে সরকারি কর্মকর্তারা এসে সেটি নিয়ে যায়। বৃদ্ধা জানান, কর্মকর্তারা ওই কফিনের ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে ১ হাজার ইউয়ান দিয়ে গেছেন। কিন্তু তা ওই কফিনের দামের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। শুধু তিনি একা নন, কফিন কেড়ে নেয়ার ওই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তার গ্রামের সকলেই।
চীনের জিয়াংজি প্রদেশের সবুজ শস্যক্ষেতে ঘেরা সাংগ্রাও গ্রামের বাসিন্দা ওয়াং। এই গ্রামটির মতো দেশটির বেশকিছু এলাকার ঐতিহ্যবাহী রীতি ছিল, বৃদ্ধরা কফিন কিনে বাড়িতে রেখে দিত। যাদের কফিন বেশি দামি তারা সেটা বাড়ির সামনে প্রদর্শনের করে রাখত। একে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করত তারা। কিন্তু চীনা সরকারের চাপিয়ে দেয়া নীতির কারণে অনেকেই তাদের কফিন বাড়ির ভেতরে লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছিলো। লুকিয়ে রেখেও সেগুলো রক্ষা করতে পারেননি তারা। প্রশাসনের লোক এসে বাড়ি তল্লাশি করে সেগুলো নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। কফিনগুলো জড়ো করে একটি যন্ত্রের সাহায্যে সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা। আর ভাঙা কাঠগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়েছিলো বলে জানা যায়। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছায় তাদের কফিন হস্তান্তর করেছে। কিন্তু স্থানীয়রা এর উল্টোটাই জানিয়েছেন।
মৃতদের সমাহিত করতে জনগণকে নিরুৎসাহিত করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে চীনে। ১৯১১ সালে সেখানকার সর্বশেষ রাজসাম্রাজ্যের পতনের পর সংস্কারবাদীরা মৃতদেহ পোড়ানোটাকেই আধুনিকতার প্রতীক বলে বিশ্বাস করত। আধুনিক চীনের রূপকার মাও সে তুং যুক্তি দেখিয়েছিলেন, কফিন তৈরি কাঠ এবং অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। কফিনে করে মৃতদেহ সমাহিত করাকে কুসংস্কার বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। কিন্তু মজার বিষয় হলো, মাওয়ের নিজের দেহই সেন্ট্রাল বেইজিঙয়ে গ্লাসের তৈরি সুদৃশ্য কফিনে সমাহিত করা হয়েছে।
মাওয়ের উত্তরসূরী কম্যুনিস্ট শাসকরাও মৃতদেহ সমাহিত করার বিষয়ে তার নীতিই মেনে এসেছেন। অবশ্য তাদের আরো একটি ভীতি কাজ করত। সমাহিতকরণ প্রথার ফলে দেশটির চাষযোগ্য জমি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যার ফলে দেশের জনগণ খাদ্য ঘাটতিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছিল শাসকরা। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান চীনা সরকার মৃতদেহ সমাহিতকরণের বদলে দাহ করার নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করছে।
১৯৮৬ সালে চীনে মৃতদেহ দাহ করার হার ছিল ২৬ শতাংশ। ২০০৫’এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ শতাংশে। দেশটির বড় শহরগুলোতে বর্তমানে সমাহিত করার রীতি নেই বললেই চলে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীরা এই রীতি টিকিয়ে রাখলেও তা বন্ধ করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এই দশকের মধ্যে সমাহিতকরণের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়েছে শি জিনপিংয়ের সরকার।
১৯৭৯ সালে চীন দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার ফলে সৃষ্ট সমস্যা এড়াতে এক সন্তান নীতি গ্রহণ করে। এই নীতি দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হলেও প্রশাসনের নিষ্ঠুরতার হার বাড়িয়েছিল বহুগুণে। আর চাষযোগ্য জমি কমে যাওয়ার আতংক থেকে সৃষ্ট সমাহিতকরণ বন্ধের নীতিও রাষ্ট্রের আরেকটি নিষ্ঠুরতা বলেই মনে করছেন অনেকে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
নিউজওয়ান২৪/এমএস
- বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম নারী শেখ হাসিনা
- সিরাজুল আলম খান রহস্য, একটি রাজনৈতিক বিতর্ক
- ঘটনা গুরুতর: প্রধান বিচারপতির উত্তরের আশায় পুরো বাংলাদেশ!
- পিরিয়ডের সময় যে খাবারগুলো ক্ষতিকর
- ‘ডোপ টেস্ট’ কী? জেনে নিন...
- দুর্লভ সাদা গোখরাটি জ্যান্ত গিলে খেল অপর সাপকে! (ভিডিও)
- মইনুলকে জানি না তবে মাসুদা ভাট্টি চরিত্রহীন: তসলিমা
- আহ! কাকের বাসা
- উন্মাদের পরিবেশ সচেতনতা কার্টুন প্রদর্শনী শুরু
- র্যাবের নয়া এডিজি কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, পিএসসি
- ৫ বছর আগের কার্টুনের বক্তব্য...
- বিবস্ত্র হয়ে ঘর পরিষ্কার, অতঃপর...
- কেমন যাবে আপনার আজকের দিন
- গরীবের কংকাল ঢাকে ধনবানের স্ফীত উদর!
- রওশনের বাবা নাকি এরশাদ?- প্রথম আলো

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের হাডুডু খেলা
টানা ৪ দিনের ছুটি মিলছে সরকারি কর্মচারীদের
চন্দ্রগ্রহণের সময় রাসুল (সা.) যে আমল করতেন
রাজধানীর সব বাস চলবে একক কোম্পানিতে