ঢাকা, ১৯ মে, ২০২৪
সর্বশেষ:

পুতিন-হিলারি রেষারেষির পটভূমি এবং ভবিষ্যৎ শঙ্কা

বটতলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ৯ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ২১:৩২, ৯ নভেম্বর ২০১৬

পুতিন ও হিলারি, ২০১২ সালে মস্কোয় এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে       -ফাইল ফটো

পুতিন ও হিলারি, ২০১২ সালে মস্কোয় এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে -ফাইল ফটো

যদি হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তবে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক নয়া মাত্রা পাবে। ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। তবে হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হলে রাশিয়ার সঙ্গে যে সম্পর্কটা কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। এর পেছনের মূল কারণটা হচ্ছে, ইমেইল ফাঁস করা নিয়ে পুতিন-হিলারি দ্বন্দ্ব।

আরও সহজ করে বললে, চলমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পটভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ- রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পকে জেতাতে তাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছেন। এ অভিযোগ উঠে উইকিলিকস কর্তৃক হিলারি ক্লিনটন ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ই-মেইল ফাঁসের পর। এখন পর্যন্ত ডেমোক্রেট শাসিত যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কার অভিযোগ, হিলারি ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ই-মেইল ফাঁস করেছে আসলে রাশিয়া।

তাদের মতে, কাজটা উইকিলিকসের হলেও এর পেছনের ইন্ধনদাতা রাশিয়া তথা রুশ নেতা পুতিন। কারণ, পুতিন চাইছেন হিলারির পরিবর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে ট্রাম্প মশায়ও ওবামার চেয়ে পুতিন যোগ্য বলে এই বিতর্কে ঘৃতাহুতি দেন। ফলে এবারের মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প-হিলারি কেন্দ্রিক অনে ইস্যুর মাঝে হিলারি ক্লিনটন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব’ও সামনে চলে এসেছে। যা এর আগের আর কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে ঘটেনি।

হিলারি-পুতিনের দ্বন্দ্বের নেপথ্য কারণ বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট দীর্ঘ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের মতে- পুতিনের সঙ্গে হিলারির বিরোধের সূত্রপাত প্রথম প্রকাশ পায় ২০১৩ সালে। হিলারি তখন ওবামা প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর পুতিন রুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে ‘পুতিন মোকাবেলায়’ কিছু টোটকা পরামর্শ দেন। বিষয়টি ওবামাকে একটি নোট আকারে পাঠান তিনি। ওই নোটে পুতিন বিষয়ে হিলারির স্পষ্ট বার্তা ছিলো: পুতিনকে ধমকের ওপর রাখুন। এই বিষয়টি স্বয়ং হিলারি নিজে স্বীকার করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ের ওপর লেখা হিলারির স্মৃতিচারণমূলক বই ‘হার্ড চয়েজ’-এ এই নোটের কথা উল্লেখ করেছেন হিলারি।

২০১৪ সালেও হিলারি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে বিশেষ অনুরোধে জানান, রুশ নেতার সঙ্গে একত্রে কাজ করার বিষয়ে তিনি যেন বেশি আগ্রহ না দেখান। ওবামাকে তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ে পুতিনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় গলে যাবেন না। প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন না।
মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের অন্যতম একজন হিসেবে হিলারির এমন পরামর্শ ছিলো অপ্রত্যাশিত। অবশ্য ওবামা এসব পরামর্শের বেশিরভাগই অগ্রাহ্য করেছেন- এটা অনেক ক্ষেত্রেই প্রমাণিত। তবে এ পরামর্শের জের ধরেই হিলারি সম্পর্কে নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান তৈরি হয়ে গেছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মনে।

এর সোজা অর্থ হচ্ছে- ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক প্রচণ্ড সংশয় ও তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে। আর পুতিনকে নিয়ে হিলারির অবস্থান বা মনোভাবের ভাবসম্প্রসারণ করলে দাঁড়ায়, পুতিন হচ্ছেন সেই মানুষ; যার সঙ্গে শুধু শক্তি প্রদর্শনের ভাষায় কথা বলা যায়।

যে যেভাবেই বিশ্লেষন করুন- দুজনের সম্পর্কের বাস্তবতা এটাই।

এদিকে, ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়া বিষয়ক নীতি নির্ধারণে জড়িত সাবেক ও বতর্মান কর্মকর্তারা জানান, ২০১২ সালে পুতিনের ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াটা হিলারির জন্য ছিল হতাশার। কারণ, পুতিন পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর পরই নতুন করে গড়ে ওঠা মস্কো-ওয়াশিংটনের সহযোগিতার সম্পর্ক মজবুত ভিত্তি পাওয়ার আগেই ভেঙে পড়ে। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরই হিলারি ঘোষণা দিয়েছিলেন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার।

হিলারি প্রকাশ্যেই পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে ভোটে কারচুপির অভিযোগ আনেন। এছাড়া সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদকে সমর্থনের জন্য তার সমালোচনাও করেন হিলারি।

তবে হিলারিকেও ছেড়ে কথা বলেননি পুতিন। প্রায় সময়ই পুতিন কর্তৃক ব্যক্তিগতভাবে হিলারিকে আক্রমণ কূটনীতিক সংকট তৈরি করেছে দু’দেশের মাঝে। এ বাগযুদ্ধ পুতিন-হিলারির মধ্যে বিরোধের জন্ম দিয়েছে। এর ফলেই ক্রেমলিন হিলারি ও তার দলের সদস্যদের ই-মেইল হ্যাক করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন দীর্ঘদিন ক্রেমলিনকে পর্যবেক্ষণকারী অভিজ্ঞ বিশ্লেষকরা।

মাইকেল ম্যাকফাউল মস্কোতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারির শেষ সময়টায়। রাশিয়া সম্পর্কে প্রত্যক্ষভাবে অভিজ্ঞ মাইকেলের মতে, তার (হিলারি) এমন নীতি ও ঘটনা রয়েছে যা রাশিয়ানরা পছন্দ করে না। এটা ভুলে যাওয়া হয় ট্রাম্প ও পুতিন নিয়ে বেশি আলোচনার কারণে। কিন্তু তাদের এ ইতিহাস বাস্তব এবং পুতিন এসব ঘটনা ভোলেননি।

পুতিন সম্পর্কে হিলারির অনড়-শক্তি অবস্থান প্রথম প্রকাশ পায় প্রথম মেয়াদের ওবামা প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই। এটা ছিল ২০০৯ সাল। মার্কিন সিনেটর হিসেবে তিনি ২০০৮ সালের আগস্টে জর্জিয়াতে রুশ সামরিক অভিযানের নিন্দা জানান। তখন নিজের আশঙ্কা প্রকাশ করে হিলারি বলেন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি কর্মকর্তা ও তৎকালীন রুশ প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়াকে অতীতের মতো আধিপত্যবাদী শক্তিতে পরিণত করবেন।

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রতিপক্ষ পুতিনের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি পুতিনের চোখে তাকিয়ে তার আত্মাকে দেখতে পান। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন সিনেটর হিলারি ঠাট্টাচ্ছলে হলেও দ্বিমত প্রকাশ করেছিলেন। হিলারি ২০০৮ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থীতার লড়াইয়ের শুরুতে বলেছিলেন, পুতিনের আত্মা বলে কিছু নেই আসলে। হিলারি তখন আরও বলেন, যেহেতু পুতিন কেজিবি এজেন্ট ছিলেন- তাই মূলগতভাবেই তার কোনো আত্মা (হৃদয়) নেই। হিলারির মতে, কেজিবি এজেন্টরা হৃদয়হীন।

এরপর নির্বচানে জিতে সবাইকে আশ্চর্য করে ওবামা হিলারিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র তথা ওবামা হয়তো ভেবেছিলেন- ওয়াশিংটন ও মস্কোর মাঝে সহযোগিতার নয়া যুগ শুরু হবে। হোয়াইট হাউসের নয়া প্রশাসন ভেবেছিল, রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের চেয়ে ১৩ বছর কম বয়স ও সোভিয়েত আমলাতন্ত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞতায় আনাড়ি পুতিনের সঙ্গে তাদের মনমতো সত্যিকারের অংশীদারিত্বের সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু… পুতিনকে হয়তো তারা মাপতে ভুল করেছিল।

ওই সময়টায় মস্কোবিষয়ক মার্কিন নীতি নির্ধারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হোয়াইট হাউসের যেসব কর্মকর্তা ভূমিকা রাখতেন, শুরুর দিকের বৈঠকে অংশ নিতেন এমন কয়েকজন জানান, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন বিষয়ে হিলারি প্রথমদিকে সম্মত ছিলেন। তবে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তিনি মনে করতেন, সুযোগ পেলেই রাশিয়া নিজেদের স্বার্থ ছাড়িয়ে কিছু বিষয়ে সম্পর্ক বাড়াতে চাইবে।

এ প্রসঙ্গে অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারির ইউরোপ ও ইউরেশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফিলিপ গর্ডন বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করার ধারণা ছিল প্রেসিডেন্ট ওবামার। কিন্তু রাশিয়ার মোকাবেলায় আমরা খারাপ অবস্থায় আছি বলে যৌক্তিক অবস্থানও ছিল। নিজেদের স্বার্থে এ বিষয়ে কোসো সুযোগ পেলে আমরা তা কাজে লাগিয়েছি।

এই বিষয়ে আরেক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, পুতিন সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে অনেকেই পুতিনকে রাশিয়ার আসল নেতা মনে করতেন।

অপরদিকে, ক্রেমলিনের শাসন কাঠামো সম্পর্কে ধারণাগত ভুলের কারণে মেদভেদেভকে কোণঠাসা করার সিদ্ধান্ত নেন ওবামা। প্রসঙ্গত, মার্কিন পর্যবেক্ষকরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পুতিনের কঠোর ও আক্রমণাত্মক মনোভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন।

রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট দুই দলের হয়েই রুশবিষয়ক মার্কিন নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছেন- এমন একহন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব নিয়ে সন্দেহ সঠিক ছিল। বিশ্বকে দেখার দৃষ্ঠিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে কাঠামোগতভাবে রাশিয়া বিষয়ে অনেক কিছুতেই এখনো আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়।

এছাড়া মার্কিন প্রশাসন যখন ২০০৯ সালে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেয় তখনও তাতে ভজঘট বাঁধে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের কাছে হিলারি পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তাতে হিলারি ইংরেজি ‘রিসেট’ শব্দের রুশ প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করেন ‘পেরেগ্রুজক’শব্দটি। এটা ছিল একটি বড় ভুল। রুশ ভাষায় ‘পেরেগ্রুজক’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘অতিরঞ্জিত’। হিলারির এই ভুল শব্দচয়নে (ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত তা তিনিই জানেন) রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বিরাট ভুল ধারণা পান।

এর এক বছর পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, কন্ডোলিসা রাইসের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। রাইস ছিলেন হিলারির পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তবে সন্দেহ থাকলেও ওবামা প্রশাসনের পরিকল্পনা শুরুতে কিছু সাফল্য নিয়ে আসে। তার এক বছরের মধ্যে উভয় দেশের সরকার বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করে।

২০১১ সালে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি নির্বাচনে জয়লাভ করে রুশ পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ কব্জা করে। পর্যবেক্ষকদের অনেকেই ওই নির্বাচনকে সাজানো বলে দাবি করেন। হাজার হাজার রুশ নাগরিক প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন তখন। হোয়াইট হাউসের পক্ষে হিলারি প্রতিবাদকারীদের সমর্থন জানান এবং ভোটে কারচুপির জন্য রুশ প্রশাসনের সমালোচনা করেন।

হিলারি এই সমালোচনা করার এক মাস পর ফের লিথুয়ানিয়াতে দেওয়া এক ভাষণেও রুশ নাগরিকদের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন পাওয়ার অধিকার রয়েছে বলে দাবি করেন। এই ভাষণের পর মস্কোতে যখন প্রতিবাদকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন পুতিন তার রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, তারা হিলারির আদেশে ও সমর্থনে প্রতিবাদ করছে।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে পুনর্নিবাচিত হওয়ার আগেই পুতিন আরও বেশি কঠোর ও স্বৈরাচারী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

ওই একই সময়ে হিলারি ক্লিনটনও পুতিনের পুনরায় ক্ষমতা আসা নিয়ে হোয়াইট হাউসকে সতর্ক করে আসছিলেন। তিনি দাবি করে আসছিলেন, পুতিন পুনরায় নির্বাচিত হলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে তার ব্যাপক প্রভাব পড়বে। যেমন, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ছিল ব্যাপক সহিংসতার শুরু এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে জিহাদিদের পক্ষে যায়। এরপর ২০১১ সালের পর থেকে সিরিয়া নিয়ে রুশ-মার্কিন দ্বন্দ্বও প্রকট হয় কিছুটা। বেশকিছু বিষয়ে দুই দেশের মতপার্থক্য গুরুতর আকার ধারণ করে। আর কূটনৈতিক সম্পর্কও অনেকটা ব্যক্তিগত রেষারেষির ধারক হয়ে পড়ে যেন।

এর অবশ্যম্ভাবী ফলই এখন দেখা যাচ্ছে। এখন হিলারি যখন হোয়াইট হাউসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন; তখন পুতিন স্বাভাবিকভাবেই হিলারিকে খাটো করতে তার ক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছেন বলে মনে করেন ইউরোশিয়া কনসালটিং গ্রুপের চেয়ারম্যান ও রাশিয়া বিশেষজ্ঞ ক্লিফর্ড কাপচান। ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, রুশ পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে দাঙ্গার পর হিলারির বক্তব্য ছিল আগুনে কেরোসিন ঢালার মতো, যা পুতিনকে সত্যিকার অর্থে রাগিয়ে দিয়েছে।

সর্বশেষ মার্কিন নির্বাচনের একেবারে শেষদিকে এসেও হিলারির আরেক কিস্তি ই-মেইল ফাঁস করেছে উইকিলিক্স।

এসবই হয়তো করা হচ্ছে হিলারি যাতে মার্কিন মসনদে বসতে না পারেন- সে লক্ষ্যে। কিন্তু যদি হিলারি প্রেসিডেন্ট হয়ে যান (এখন পর্যন্ত মার্কিন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত জরিপওয়ালাদের সব পক্ষ সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে)- তাহলে রুশ-মার্কিন অতি পুরনো দা-কুমড়ো সম্পর্কটা এবার কোনদিকে মোড় নেয়, তা কঠিন ভাবনার বিষয়ই বটে। সমগ্র বিশ্বের জন্য সত্যিকারেই আতঙ্কের বিষয় হতে পারে এটা। কারণ, ইরাক-সিরিয়া-লিবিয়া-ইয়েমেন-আফগানিস্তানে যা চলছে, তাতে এই দুইদেশের সম্পর্কের সুতোর টানে নিকট ভবিষ্যতে বিশ্বময় সম্ভাব্য বিপর্য ঘটা নিয়ে জোর সন্দেহও করা যাচ্ছে না। ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য পলিটিকো, নিউজম্যাক্স অবলম্বনে

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

 

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত