ঢাকা, ০২ মে, ২০২৪
সর্বশেষ:

ইন্দোনেশিয়ায় ধর্ষককে নপুংসককরণ আইনে চিকিৎসকদের বিরোধিতা, কেন?

নারীস্থান ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ১৯ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ২০:৪৬, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

চলতি মাসের শুরুতে পাস হওয়া ধর্ষণবিরোধী কঠোর আইন কার্যকরে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণের বিরোধীতা করেছে ইন্দোনেশিয়ার চিকিৎসক পরিষদ। পরিষদ তাদের সদস্যদের জানিয়েছে, মহান চিকিৎসা পেশার নীতিবিরুদ্ধ এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়া ঠিক হবে না।

ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় প্রায় পাঁচ মাস আগে চৌদ্দ বছর বয়সী এক শিশু সংঘবদ্ধ ধর্ষণের নির্মম শিকার হয়। ১২ দুর্বৃত্তের ওই ধর্ষক দলটি পরে মেয়েটিকে হত্যাও করে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে পুরো দেশ যার জেরে চলতি মাসের শুরুর দিকে নারী ও শিশুদের যৌন নিপীড়নকারীদের রাসায়নিক দিয়ে নপুংশক করার কঠোর আইন পাস করে ইন্দোনেশিয়া। তবে আইনটি পাসের আগে দেশটির সংসদে তুমুল বিতর্ক হয়।

এই আইন মোতাবেক, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অপসারণ করার পরিবর্তে ওষুধের মাধ্যেমে (রাসায়নিক দিয়ে) দোষী ব্যক্তির যৌনবাসনা বা কামশক্তি রহিতকরণ করা হবে। এটা সরাসরি মধ্যযুগীয় কায়দার অঙ্গহানির মাধ্যমে ‘খোজাকরণ’ পদ্ধতি নয়।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো নিজে এ সংক্রান্ত আইনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংসদে। রাসায়নিক দিয়ে নপুংসক করার কঠোর আইন দেশ থেকে যৌন অপরাধ নির্মূল করতে পারে বলে মন্তব্য্ করেন তিনি।

এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলদণ্ডে দণ্ডিতদের নপুংসককরণ করা হবে। একইসঙ্গে দণ্ডিতদের শরীরে স্থাপন করা হবে ইলেক্ট্রনিক চিপ যা দিয়ে তাদের চলাফেরা মনিটর করা যাবে। এই চিপ জেলদণ্ড শেষ হওয়ার পরও দোষী ব্যক্তির শরীরে থাকবে।

তবে ইন্দোনেশিয়ার চিকিৎসক পরিষদ মনে করছে, তাদের সদস্যদের চিকিৎসার নীতিবিরুদ্ধ এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়া ঠিক হবে না।

নিউজওয়ান২৪.কম-এ একই ধরনের আরও সংবাদের জন্য ক্লিক করুন ইন্দেনেশিয়ায় কঠোর আইন: ধর্ষককে করা হবে নপুংসক, আছে মৃত্যুদণ্ডও  

চিকিৎসক পরিষদ আরও মনে করছে, নপুংসককরণের মাধ্যমে নারী-শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধ করা সম্ভব হবে না। কারণ, দণ্ডিত ব্যক্তিকে রাসায়নিকভাবে নপুংসক করার পর নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে কারামুক্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সে ফের যৌনশক্তি ফিরে পেতে পারে। হরমোন চিকিৎসার মাধ্যমে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে ওইসব ব্যক্তিরা।

চিকিৎসকদের অপর একটি সূত্র দাবি করেছে, অ্যান্টিঅ্যান্ড্রোজেন নামক যে ঔষধের প্রয়োগে ধর্ষককে নপুংসককরণ করা হবে তা নিয়মিতভাবে দিতে হবে তার শরীরে। এর প্রয়োগ বন্ধ হলে দিনকয়েকের মধ্যে আপনা থেকেই সে পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে।

অর্থাৎ রাসায়নিক নপুংসককরণ সম্পূর্ণ অপরিবর্তনযোগ্য (চিরস্থায়ী ব্যবস্থা) নয়। সেকারণে এই দণ্ড খুব কার্যকর কিছু হবে না।

এ বিষয়ে পরিষদের নৈতিকতা কমিটির চেয়ারম্যাপন প্রিজো সিদিপ্রাতোমো বলেন, আমাদের চিকিৎসানীতি সমুন্নত রাখতে হবে। চিকিৎসক হতে গেলে মানুষের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবো না বলে শপথ নিতে হয়।

তিনি আরও বলেন, দেশের সব চিকিৎসকের প্রতি আমার বার্তা- সবকিছুর পরও আপনি একজন চিকিৎসক, আপনি এটা করতে পারেন না। এমনকি সরকার যদি বলে এটি একজন ধর্ষককে শাস্তি দেওয়ার জন্য হচ্ছে, তখনও পারেন না।

বিষয়টি আরও পরিষ্কার করে বলতে গিয়ে সিদিপ্রাতোমো বলেন, এটি ক্ষতিকর এবং মানবাধিকারবিরোধী। আইনটি পাস হয়ে গেলেও দেশটির পত্রপত্রিকায় এর বিরুদ্ধে এখনও লেখা হচ্ছে নিবন্ধ, এনজিওগুলিও এর বিরোধিতা করছে। তারা বলছে, নিপীড়নবিরোধী জাতিসংঘ প্রস্তাব ৫/১৯৯৮-তে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় এমন মানবাধিকারবিরোধী আইন থাকা উচিৎ নয়।

তবে এসব যুক্তির বিপরীতে ইন্দোনেশীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের সংবিধান মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এ ধরনের যৌন অপরাধে শাস্তির ক্ষেত্রে কোনো আপস নয়।

তিনি মনে করছেন, যদি ধারাবাহিকভাবে রাসায়নিক দিয়ে নপুংসককরণ শাস্তি চালিয়ে যাওয়া যায় তবে তা যৌন অপরাধ কমিয়ে আনবে এবং একসময় এ ধরনের অপরাধ নির্মূল হয়ে যাবে। কম্পাস.কম, বিবিসি, এনবিটি

নিউজওয়ান২৪.কম/এমএস

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত