ঢাকা, ০২ মে, ২০২৪
সর্বশেষ:

সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনে রাস্তায় হেফাজতকর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:০৯, ২৮ মার্চ ২০২১  

​​​​​​​হেফাজত ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ছবি : সংগৃহীত

​​​​​​​হেফাজত ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ছবি : সংগৃহীত


হেফাজত ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় সড়ক অবরোধ করেছে সংগঠনটির কর্মী-সমর্থকরা। কিছু জায়গায় সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়েছে তারা।

রাজধানীর বসিলা ব্রিজের সামনে রবিবার ভোর থেকে রাস্তা আটকে রাখে হেফাজতের কর্মীরা। সেখানে কেরানীগঞ্জ থেকে কোনো গাড়ি তারা ঢাকায় ঢুকতে দেয়নি। এ সময় তাদের পাশেই পুলিশকে দেখা যায়। তবে সকাল সাড়ে আটটার দিকে ওই সেতু খুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয়রা। সেতুতে বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক গোলাম মোস্তফা বলেন, ফজরের নামাজের পরে কেরানীগঞ্জমুখী বসিলা সেতুতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে হরতালকারীরা। পরে ৮টা ৩০ মিনিটে ওই প্রতিবন্ধকতা আমরা সরিয়ে দিই।

বসিলার কাছাকাছি মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড মোড়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে মিছিল করতে দেখা যায় হরতালের পক্ষের লোকজনকে। পুলিশকে পানি দিয়ে টায়ারের আগুন নেভাতে দেখা যায়।

মোড়ের পাশে হরতালের সমর্থনকারী আরো কিছু মানুষ ছিল। তাদের মধ্যে নেতারা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন; কর্মীরা দিচ্ছিলেন স্লোগান।

হরতালের তেমন কোনো প্রভাব দেখা যায়নি উত্তরায়। সকাল ৮টায় সাধারণ মানুষের চলাচল স্বাভাবিক দেখা গেছে। কর্মচঞ্চল অন্য দিনের মতোই ব্যস্ত ছিল বাস স্ট্যান্ডগুলো। অন্য পরিবহনও স্বাভাবিক দিনের মতোই চলেছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান ছাড়াও অন্য দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে। তবে মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

ওই এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের। অন্তত ১০টি স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে তাদের। এতে মহাসড়কের দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ভোর থেকে সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজতের সমর্থকরা অবস্থান নেয়। তাদের একজন বলেন, ‌‌আমাদের হাজার হাজার ভাই রাস্তায় নেমে এসেছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করছি।

নরসিংদী জেলার ভেলানগর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে হরতাল পালন করছে হেফাজত কর্মীরা।

গত শুক্রবার ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।

হাটহাজারীতে জুমার নামাজের পর মিছিল নিয়ে হেফাজত কর্মীরা ডাকবাংলোর ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে। ডাকবাংলো থেকে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে টেনে এনে প্রকাশ্যে পেটানো হয়।

এরপর হামলা হয় হাটহাজারী থানায়। সেখানে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন চারজনকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা ছিল আরো ব্যাপক। সেখানে মাদ্রাসা থেকে মিছিল নিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় শহরের রেলস্টেশন। মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যালয় ও আনসার ক্যাম্পে আগুন দেয়া হয় পেট্রল ঢেলে। পরে হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। তখন গুলি চালায় পুলিশ। এতে এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়।

স্টেশনে আগুন দেওয়ায় সংকেতব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর রেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে কোনো ট্রেন আর এই স্টেশনে যাত্রাবিরতি করছে না। বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে চলা তিতাস কমিউটারও।

শুক্রবার রাত থেকেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ-র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। টহল শুরু করে আধা সামরিক বাহিনী বিজিবিও।

এদিন হেফাজতের বিক্ষোভের ডাক নিয়ে শহরে উদ্বেগ থাকলেও পুলিশের নিরাপত্তার আয়োজন দেখে বিকেল পর্যন্ত রাজপথে নামেনি মাদরাসাছাত্ররা।

এর মধ্যে হেফাজতের কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শুক্রবার প্রতিটি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়ার ঘোষণা আসে। আর রবিবারের হরতাল সফল করার ডাকও জানানো হয়।

নিউজওয়ান২৪.কম/রাজ

আরও পড়ুন