ঢাকা, ০৮ মে, ২০২৪
সর্বশেষ:

মাটি ছাড়াই কলা!

প্রকাশিত: ১৩:৫১, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

কলা উৎপাদনের ইতিহাসে নাটকীয় পরিবর্তন আসে ১৯৫০ সালে, যখন গ্রস মাইকেল বা বিগ মাইক জাতের কলা বিশ্বজুড়ে চাষ করা শুরু হয়। 

কিন্তু পানামা ডিজিস নামে এক ধরনের ছত্রাকজনিত রোগ এই কলা উৎপাদনে ধস নিয়ে আসে। এই ছত্রাকের আক্রমণ এতোটাই প্রকট ছিল যে ১৯৬৫ সালে বিগ মাইক জাতের কলাকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় ও ক্যাভেন্ডিশ নামের নতুন এক জাতের কলা চাষ করা শুরু হয়। 

আজকালকার বাজারে যত কলা দেখা যায় তার প্রায় অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক ক্যাভেন্ডিশ প্রজাতির। কিন্তু ছত্রাকের আক্রমণে এই প্রজাতিও এখন হুমকির সম্মুখীন। গত বেশ কয়েক বছর যাবৎ পুরো বিশ্বজুড়েই কলা চাষীরা ছত্রাকের আক্রমণে দিশেহারা অবস্থায় রয়েছেন। তারা এটিকে বলছেন দ্য ট্রপিকাল রেস ফোর অফ পানামা ডিজিস। কিন্তু নাম তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, যে বিষয়টি সবার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছিল সেটি হচ্ছে দীর্ঘ ৫ দশক পর আবার কলার উৎপাদন খুব বড় সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। ছত্রাকজনিত এই রোগটি তো রয়েছেই, ব্ল্যাক সিগাটোকার মত রোগগুলোর উপদ্রবেও দৈনন্দিন জীবনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ ফলটি বেশ হুমকিতে রয়েছে।

সম্প্রতি গবেষকরা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, 'ছত্রাকজনিত আক্রমণের কারণে বৈশ্বিক কলা উৎপাদন অনেক সংকটপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে ২টি প্রধান কারণ রয়েছে: একটি পানামা ডিজিস এবং অন্যটি ব্ল্যাক সিগাটোকা।‌ এটি অবশ্যই একটি বড় ধরনের সমস্যা কারণ, কলা উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের প্রায় ৪০ কোটি মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত। 

কলা পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ পরিমাণে গৃহীত কৃষিজাত খাদ্য, সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত অদানাদার খাদ্যশস্য। পুরো পৃথিবী জুড়ে সবচেয়ে বেশি যে ফলটি খাওয়া হয় সেটি হলো কলা। লাখ লাখ মানুষের জীবিকা আজ হুমকির সম্মুখীন, যার কারণ হলো পানামা ডিজিস- ফুসারিয়াম ফাঙ্গাস নামক এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে যে রোগটি হয়ে থাকে। এই ছত্রাকটি কলা ক্ষেতে আক্রমণ করে সকল গাছ তো ধ্বংস করেই, বরং কয়েক দশকের জন্য ওই জমিকে কলা চাষের জন্য অনুপযুক্ত করে দেয়। সম্প্রতি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কলা চাষের জমিগুলোকে আক্রমণ করা শুরু করেছে এ সর্বনাশা ছত্রাক ।'

কিন্তু নেদারল্যান্ডের ওয়াগিনেজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ সমস্যার একটি সমাধান বের করে ফেলেছেন ইতোমধ্যেই। যেহেতু পানামা ডিজিস অন্যান্য ছত্রাকজনিত আক্রমণ মাটির মাধ্যমেই পরিবাহিত হয়ে থাকে তাই গবেষকরা চিন্তা করলেন মাটিতে কীটনাশক বা অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগ করা বদলে মাটির বিকল্প হিসেবে অন্য কিছু ব্যবহার করা যায় কিনা! আর তাতেই এলো ফলাফল। তারা মাটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করলেন কোকো পিট ও রক উল নামের জল শোষণকারী উদ্ভিদ। 

যদিও তাদের এ গবেষণা এখনো ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষাধীন অবস্থায় আছে তারপরও তারা যে ফলাফল পেয়েছেন তা বেশ আশাব্যঞ্জক। মাটি ছাড়া এ কলা উৎপাদনের পরিবেশ তৈরি করা বেশ ব্যয়বহুল হলেও এ পরিবেশ কলার পুষ্টি ও গুণগত মান ঠিকঠাক রাখতে ও ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে সংকর তৈরি করতে বেশ সহায়তা করে বলে গবেষকরা দাবি করেছেন। আর মাটি ছাড়া বিকল্প অবলম্বনে কলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হলো আপাতত এখানে ছত্রাকের সংক্রমণের ঝুঁকি একেবারেই নেই!

এই প্রকল্পের প্রধান এবং ট্রপিকাল প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক গার্ট কেমা এ ব্যাপারে বলেন, ‘নতুন উৎপাদিত এ ডাচ কলার প্রজাতি চাষ করার বেলায় রোগ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোনো রকম ঝামেলা থাকে না। এর ফলে গতানুগতিক কলা চাষের তুলনায় এই কলার প্রজাতি চাষ অনেকটা টেকসই এবং ফলপ্রসূ।’ 

সুইস মালিকানাধীন কলা উৎপাদন ও বন্টনকারী প্রতিষ্ঠান চিকিৎসাহ আরো বেশ কিছু কোম্পানী প্রকল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ