ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

গ্রহাণু রিউগু’র বুকে বোমা ফাটাতে যাচ্ছে জাপান

প্রকাশিত: ১১:৩৩, ২৪ মার্চ ২০১৯  

গ্রহাণু রিউগুর পৃষ্ঠদেশ                         ছবি: এপি

গ্রহাণু রিউগুর পৃষ্ঠদেশ ছবি: এপি

জাপানের মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে যে তাদের হায়াবুসা২ নামের মহাকাশযানটি আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ মিশনের শুরু করতে যাচ্ছে। একমাস আগে (২২ ফেব্রুয়ারি) এটি দূরবর্তী গ্রহাণু রিউগু-তে অবতরণ করে। তখন বেশকিছু ছবি ও গ্রহাণুটির ভূপৃষ্ঠের নমুনা সংগ্রহ করে মহাকাশযানটি। নিউজওয়ান২৪.কম ডেস্ক।

বর্তমান রিউগুর বায়ূমণ্ডলে অবস্থানরত হায়াবাসা২ আরো ঝুঁকিপূর্ণ ও রোমাঞ্চকর একটি মিশনের সূচনা করতে যাচ্ছে। জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জেক্সকা)জানিয়েছে, গ্রহাণুটির পৃষ্ঠদেশে এবার একটি বোমা রোপণ করতে যাচ্ছে হায়াবুসা২। ওই বোমাটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে রিউগুর শরীরে একটি গর্ত খোঁড়া হবে যাতে করে এর ভিতরকার খনিজের নমুনা সংগ্রহ করা যায়। আমাদের সৌরজগতের সৃষ্টির সঠিক ইতিহাসের সন্ধানে ওই নমুনা গবেষণা করে দেখা হবে।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে হায়াবুসা২ সফলভাবে বিপদসঙ্কুল পাথুরে গ্রহাণু রিউগুর পৃষ্ঠে অবতরণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে। মহাকাশযানটি এরই মধ্যে গ্রহাণুটির ভূ-ত্বকের বেশকিছু নমুনা সংগ্রহ করেছে।

জেক্সকা জানিয়েছে, আগামী ৫ এপ্রিল হায়াবুসা২ দুই কেজি (৪.৪ পাউন্ড) ওজনের একটি বেসবল আকৃতির বিস্ফোরক গোলক ছুঁড়ে মারবে রিউগুর পিঠে। এর ফলে সৃষ্ট গর্তের ভেতরকার সেইসব নমুনা সংগ্রহ করবে মহাকাশযানটি যা এর আগে সূর্যের বা মহাজাগতিক আলোর মুখ দেখেনি।

প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার তাকাও সাইকি বলেন, এ কাজের জন্য মহাকাশযানটিকে বোমা নিক্ষেপের পর পর দ্রুত গ্রহাণুটির অপর দিকে সরে পড়তে হবে। না হলে বিস্ফোরণের ফলে গ্রহাণুর কোনো শিলাখণ্ডের আঘাতে রিউগু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে।

বোমাটি নিক্ষেপ করে গ্রহাণুর অপর দিকে সরে পরার আগে মহাকাশযানটি একটি বিশেষ ধরনের ক্যামেরাও রেখে আসবে সেখানে যাতে বিস্ফোরণ পরবর্তী দৃশ্য ধরা পড়বে।

প্রজেক্ট ইনচার্জ কোজি ওয়াদা জানান, এই বিশেষ মিশন জেক্সকা’র বিজ্ঞানীদের গ্রহাণুটির ভিতরকার বস্তু বিশ্লেষণ করে এর অতীত-ইতিহাস জানতে সাহায্য করবে।

হায়াবুসা২ এখন গ্রহাণুর ২০ কিলোমিটার (১২ মাইল) ওপরে রয়েছে। তবে বোমা নিক্ষেপের একদিন আগে এটি গহাণুটির দিকে নেমে আসবে। 

গ্রহাণুতে বোমানিক্ষেপ প্রক্রিয়াটির বয়ান করে জেক্সকা বিজ্ঞানিরা জানান, হায়াবুসা২ বিস্ফোরকসমৃদ্ধ একটি কোন (শঙ্কু) আকৃতির বস্তু ছুঁড়ে মারবে গ্রহাণুপৃষ্ঠে। নির্দিষ্ট ক্ষণে এটি এর নিচের দিকের একটি তামার ফলকে বিস্ফোরণ ঘটাবে। এর ফলে এটা একটি গোলকে রূপান্তরিত হবে এবং সেকেন্ডে ২ কিলোমিটার (১.২ মাইল) বেগে আছরে পড়বে রিউগুর শরীরে। 

যদি গ্রহাণুটির ভেতরকার শিলাবস্তু কোমল প্রকৃতির হয় তবে ওই বিস্ফোরণে এর শরীরে ১০ মিটার ব্যাস ও ১ মিটার গভীর গর্তের সৃষ্টি হবে। আর যদি এর অভ্যন্তর পাথুরে অর্থাৎ কঠিন শিলার হয় তবে গর্তের আকার তুলনামূলক ছোট হবে। 

ফেব্রুয়ারিতে গ্রহাণুটিতে অবতরণের পর হায়াবুসা২ এর শরীরে একটি পাইপ ঢুকিয়ে পিনবল আকৃতির বুলেট নিক্ষেপ করে এবং সেখান থেকে ধূলা ও নুড়ি পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে। 

জেক্সা পরিকল্পনা করছে বিস্ফোরণটি ঘটানোর পর হায়াবুসা২কে ওই গর্তে অবতরণ করাতে। তবে এজেন্সির গবেষক তাকাশি কুবোতা বলেন, মহাকাশযানটির নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এমনটি না-ও করতে পারেন তারা। 

তবে যদি এটা সফল হয় তবে এটাই হবে প্রথম ঘটনা যাতে কোনো স্পেসক্রাফ্ট (মহাকাশযান) মহাকাশের কোনো বস্তুর শরীরের গভীর থেকে উপাদান সংগ্রহ করে আনবে। 

সবকিছিু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের শেষের দিকে হায়াবুসা২ রিউগুর ভূ-পৃষ্ঠ ও অভ্যন্তরের নমুনাসহ গ্রহাণুটির এলাকা ত্যাগ করবে। এরপর ২০২০ সালের শেষার্ধে পৃথিবীতে ফিরে আসবে। 

২০০৫ সালে নাসা পরিচালিত ‘ডিপ ইম্প্যাক্ট’ মিশনের মাধ্যমে একটি ধূমকেতুর ভেতরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এর উপাদান বিশ্লেষণ করে, তবে তার কোনো নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে আনতে পারেনি।

জাপানি রূপকথায় বর্ণিত সমুদ্র তলদেশের একটি প্রাসাদের নামে গ্রহাণুটির নাম রাখা হয়েছে রিউগু। এর পরিধি প্রায় ৯০০ মিটার (৩০০০ ফুট) এবং পৃথিবী থেকে দূরত্ব ৩০০ মিলিয়ন কিলোমিটার (১৮০ মিলিয়ন মাইল)। এমিরেটস২৪৭