ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী ২১তম সম্মেলন শুরু আজ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯  

ছবি: বাসস

ছবি: বাসস

আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী ২১তম জাতীয় সম্মেলন শুরু আজ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে। বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশেই দলটির মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিন বিকেল ৩টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ২৫ মিনিটের একটি উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। সেখানে তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য।

এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর অংশ নেবেন। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন ২১ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সারাদেশ থেকে কাউন্সিলরদের তালিকা এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। ডেলিগেট কার্ড, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, স্বেচ্ছাসেবক ইউনিফর্মসহ সম্মেলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তৈরির কাজও শেষ। সম্মেলনের ঘোষণাপত্রও প্রস্তুত হয়েছে।

অন্যদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনকে নির্বিঘ্নে করতে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সম্মেলনস্থল, প্রবেশপথসহ চারপাশে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সম্মেলনের শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

২১তম সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেয়া, মঞ্চ ও সম্মেলনস্থল প্রস্তুত করা এবং সাজসজ্জাসহ অন্যসব কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ ৫০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। এবার বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল এলাকাজুড়ে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে ছয়টি নৌকা। উদ্যানের গাছে গাছে লাগানো হয়েছে মরিচবাতি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। পাশাপাশি লাগানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসংবলিত ফেস্টুন।

মঞ্চ ও সাজসজ্জা: আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের মূল মঞ্চ এরইমধ্যে তৈরি হয়েছে। ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে চার সহযোগী এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলন। সেই একই মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। তবে মূল মঞ্চ এক হলেও সেটাকে বিশেষ পরিকল্পনায় সাজানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আশপাশের এলাকাসহ মূল মঞ্চটি এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে, দেখলে মনে হবে, যেন পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে বিশাল এক নৌকা। সেই নৌকার চারপাশজুড়ে থাকছে প্রমত্ত পদ্মার বিশাল জলরাশি। এর মধ্যে থাকছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুও। এছাড়া পদ্মার জলতরঙ্গ, পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট নৌকা, এমনকি চরের মধ্যে কাশবনের উপস্থিতিও থাকবে। বিজয়ের মাসে আয়োজিত এ সম্মেলনে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতিও থাকবে। এর পেছনে থাকবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ছবি। নৌকার পেছনের দিকে থাকবে জাতীয় চার নেতাসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে বিভিন্ন সময়ে অবদান রাখা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ছবি। এছাড়া সম্মেলনস্থলে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ফেস্টুন ও উন্নয়নের ছবি থাকবে।

সম্মেলনস্থলে নেতাকর্মীদের প্রবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঁচটি গেট থাকবে। একটি গেট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। ৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ শূন্য থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার থাকবে ৭৭টি। মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের জন্য চেয়ার থাকবে ৩০ হাজার। এছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে ১৫ হাজার চেয়ার দেয়া হবে। ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, এবারের সম্মেলন জাঁকজমকপূর্ণ নয়, বরং সাদামাটাভাবে আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে কোনো ধরনের সাজসজ্জা হবে না। সম্মেলনে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার কাউন্সিলর, ডেলিগেটস ও নেতাকর্মী অংশ নেবেন।

অভ্যর্থনা: বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ অন্যসব পেশার বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এরইমধ্যে অতিথিদের তালিকা তৈরি করে সম্মেলনের কার্ড পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম জানান, ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে যেমন বিমানবন্দর, বাস ও রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে অতিথি ও কাউন্সিলরদের স্বাগত জানানো হবে। সম্মেলনের আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেয়ার কাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে।

প্রচার ও প্রকাশনা: সম্মেলন সামনে রেখে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি কাজ শেষ করেছে। সম্মেলনে প্রচার উপকমিটির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার একটি কার্ড থাকবে। একই সঙ্গে থাকবে দুটি সিডি। একটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এবং অন্যটিতে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের পাটের ব্যাগে এগুলোর সঙ্গে একটি প্যাড ও একটি কলম দেয়া হবে। এরইমধ্যে ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ওয়েবপেজ উদ্বোধন করেছে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি। ওয়েবপেজের ভিডিও অংশে সম্মেলন লাইভ করা হবে।

সম্মেলন উপলক্ষে ১০০ চিকিৎসক নিয়ে ১২টির মতো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত করছে স্বাস্থ্য উপকমিটি। দুপুরে ৫০ হাজার নেতাকর্মীকে খাবার দেয়া হবে। খাবারে মোরগ-পোলাওয়ের সঙ্গে ডিম, ফিরনি ও পানির বোতল থাকবে। আন্তর্জাতিক উপকমিটির পক্ষ থেকে সম্মেলন স্থানে কূটনীতিকদের জন্য বিশেষ স্টল স্থাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটি সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। এখন ঐতিহ্যবাহী এই দলটির বয়স ৬৭ বছর। এ পর্যন্ত দলটির ২০টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এর আগে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

২১তম জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। আমাদের অবিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের কাজে-কর্মে এবং ব্যবহারের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে আওয়ামী লীগ একটি সুসংগঠিত দল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন ও পুরনোদের নিয়ে দলের আগামী কমিটি হবে আধুনিক ও সুসংগঠিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কেউ অপরিহার্য নয়।

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড

আরও পড়ুন