ঢাকা, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর: হানাদার মুক্ত হয় জয়পুরহাট জেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯  

১৪ ডিসেম্বর, ৭১ এর এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় জয়পুরহাট জেলা। ছবি: সংগৃহীত

১৪ ডিসেম্বর, ৭১ এর এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় জয়পুরহাট জেলা। ছবি: সংগৃহীত

৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর। মহান মুক্তিসংগ্রামে জয়পুরহাটবাসী হানাদারমুক্ত হয়। ২৩৮ দিন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ থাকার পর উদ্ধার হলো জয়পুরহাট।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খন্দকার আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ীর বেশে স্বাধীন বাংলাদেশের রক্তে রাঙা পতাকা উত্তোলন করেন জয়পুরহাটের মাটিতে। ১৪ ডিসেম্বর ‘৭১ ছিল মঙ্গলবার দিন। ভোরের সূর্যের লাল আভা যখন পূর্বাকাশে দেখা দিচ্ছে তখন আসাদুজ্জামান বাবলুর নেতৃত্বে দেড়শ’ মুক্তিযোদ্ধা পাঁচবিবি থানার বাগজানা ইউনিয়নের ভূঁইডোবা গ্রামে বিনা বাধায় প্রবেশ করে।

পাঁচবিবি থানার ভেতরে প্রবেশ করে আসাদুজ্জামান বাবলু স্বাধীনতার পতাকা থানা চত্বরে উড়িয়ে দেন এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের মুহুর্মহু ষ্টেনগান আর রাইফেলের গুলি বৃষ্টি ও ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা। জয়পুরহাট জেলা মুক্তিযুদ্ধের সময় মহকুমা ছিল। যুদ্ধের সময় কাল ধরেই (২০শে এপ্রিল ‘৭১ -১৩ ডিসেম্বর) হত্যাযজ্ঞ চালায় এই এলাকায়। সেদিন পাকিস্তানী জালেমদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল ব্যবসায়ী ননী গোপাল কুন্ডু, ছাত্র নজরুল ইসলাম, দামোদরপুরের ৫/৬ জন দড়ি ব্যবসায়ীর দেহ।

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দজয়পুরহাট সদর থানা আক্কেলপুর এলাকায় অকথ্য নির্যাতন চালায় হানাদার বাহিনী। সদর থানার কড়ই কাদিপুর গ্রামে স্থানীয় রাজাকারসহ পাকিস্তানী সৈন্যরা ঢুকে গ্রাবাসীদের একত্র করে ব্রাশ ফায়ারে একই সঙ্গে ৩শত ৭১ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। রেল লাইনের ব্রিজের (আক্কেলপুর রেল ষ্টেশনের উত্তরে) পশ্চিমের জমিতে রয়েছে গণকবর ও বধ্যভূমি। হানাদার কবলিত অবস্থায় সবচেয়ে বড় ধরনের গণহত্যার ঘটনাস্থল সদর থানার ধলাহার ইউনিয়নের পাগলাদেওয়ান গ্রামে। ভারত সীমান্ত সংলগ্ন গ্রাম হওয়ায়, হানাদার সৈন্যরা এখানে শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে একাধিকবার যুদ্ধও হয়েছে। এ গ্রামে হানাদার পাকিস্তানী সৈন্য ও বিহারী রাজাকারেরা মিলে দশ হাজারেরও বেশি মানুষকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে। হত্যাকান্ডের সূচনা হয় মসজিদের ভেতরে জুম্মার নামাজরত মুসল্লিদের টেনে বের করে হত্যার মাধ্যমে (শুক্রবার ১৮ জুন ‘৭১)।

নারীদের ওপর চালাতো পাশবিক নির্যাতন। নির্বিচারে হত্যা করা হতো শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত। এমন দগদগে ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে জয়পুরহাট জেলা (তখন মহকুমা) অপেক্ষায় ছিলো কবে এই নির্যাতনের অবসান হবে, কবে মুক্তি মিলবে। অবরুদ্ধ মানুষের এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে ১৪ ডিসেম্বর মধ্যে ১৪ ডিসেম্বর ‘৭১ বিকেল ৪টার দিকে বিজয়োল্লাস করতে করতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলা মায়ের সূর্য সন্তানরা জয়পুরহাট শহরে পৌঁছেন। কোম্পানী কমান্ডার আসাদুজ্জামান বাবলু ‘জয়বাংলা’ রনধ্বনি আর রাশি রাশি ফাঁকাগুলির শব্দের মধ্য দিয়ে সাবেক হাসপাতাল সংলগ্ন ডাকবাংলাতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শহরের মানুষ দলে দলে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন জানাতে থাকে। 

পরদিন (১৫ ডিসেম্বর) ডঃ মফিজউদ্দীন এম.এনএ (পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী), আওয়ামীলীগ নেতা মহাতাব উদ্দীনসহ জয়পুরহাটে আসেন। বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন, শহীদ ডাঃ আবুল কাশেম ময়দানে। স্বাধীনতা অর্জনের পর জয়পুরহাটে প্রথম শহীদ মিনারের ভিত্তি প্রস্তর এই ময়দানেই স্থাপিত হয়।

এ দিকে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাগলা দেওয়ান ও কড়ই কাদিরপুর বধ্যভুমিতে হানাদার মুক্ত দিবসটি উপলক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শহীদদের স্বরণে আজ শনিবার আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ দিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন চন্দ্র জানান, কড়ই-কাদিপুর ও পাগলা দেওয়ান এ দু’টি বদ্ধভূমিতে শহীদদের নাম ফলক স্থাপন করা হবে।

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড

আরও পড়ুন
স্বদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত