ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ (পর্ব-২)

শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৯  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো।  আশা করি ভালো আছো। আজ তোমাদের জন্য থাকছে বাংলা ব্যাকরণের মাতৃভাষা ও বাংলা ভাষা অধ্যায়ের ওপর আলোচনা। আশা করি উপকৃত হবে।

মাতৃভাষা ও বাংলা ভাষা-

মাতৃভাষা:

মাতৃভাষা অর্থ মায়ের ভাষা। অন্যভাবে বলা যায়, আমরা মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা শিখি তা-ই হলো আমাদের মাতৃভাষা। শিশু সব সময়েই যে মায়ের কাছ থেকে ভাষা শেখে তা নয়। কখনো কখনো এর ব্যতিক্রম ঘঠে। মায়ের মতো যে শিশুকে প্রতিপালন করে কিংবা জন্মের পর থেকে যার সেবায় ও যত্নে শিশু ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে তার ভাষাই শিশু প্রথম শেখে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান মতে, পৃথিবীতে প্রায় ৬০৬০ ভাষাভাষীর লোক বসবাস করে। 
বাঙালি মায়ের সন্তান জন্মের পর থেকে স্প্যানিশ বা জার্মান-ভাষাভাষীর মায়ের পরিচর্যায় বড় হলে তার প্রথম বা মাতৃভাষা কখনো বাংলা হবে না, হবে স্প্যানিশ বা জার্মান। তাই বলা যায়, শিশু প্রথম যে ভাষা শেখে তাই তার প্রথম ভাষা বা মাতৃভাষা। সাধারণত দেখা যায় যে, বাঙালি মায়ের শিশুর মাতৃভাষা বাংলা, ইংরেজ মায়ের শিশুর ইংরেজি, আরবি মায়ের শিশুর আরবি, জাপানি মায়ের শিশুর জাপানি ইত্যাদি।

বাংলা ভাষা:

বাঙালিরা যে ভাষায় নিজেদের মধ্যে মনের ভাব প্রকাশ করে, তার নাম বাংলা ভাষা। অর্থাৎ মনের ভাব প্রকাশের জন্য এবং নিজ নিজ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাব বিনিময়ের উদ্দ্যেশে বাংলা ভাষাভাষী ব্যক্তিরা যেসব ধ্বনি প্রকাশ করে, তাকে বাংলা ভাষা বলে। বাংলাদেশের বইতে বাংলা ভাষা প্রচলিত রয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও আসাম এবং মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের অধিকাংশ মানুষের ভাষা বাংলা।

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ত্রিশ কোটি মানুষের মুখের ভাষা বাংলা।

বাংলাদেশের অধিবাসীরা প্রথম থেকেই বাংলা ভাষায় কথা বলতো না। বাংলা প্রাচীন ভারতীয় আর্য জনগোষ্ঠীর অন্যতম ভাষা হিসেবে বিবর্তিত। তাই প্রাক-আর্য যুগের ভাষা অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর ভাষার সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট নয়। অনার্যদের তাড়িয়ে আর্যরা এদেশে বসবাস শুরু করলে তাদের আর্য ভাষা নানা বিবর্তনের পর বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। আর বাংলাই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র ভাষা, যার প্রতি ভালোবাসা ও মর্যাদাবোধ থেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম। 

বাংলা ভাষার ইতিহাস:

বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় মূল ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করেন, আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর আগে এই মূল ভাষার অস্তিত্ব  ছিল। আনুমানিক আড়াই হাজার বছর আগে খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মূল ভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেসব প্রাচীন ভাষার সৃষ্টি তার মধ্যে অন্যতম হলো আর্য ভাষা। এ থেকেই ভারতীয় আর্য ভাষার সৃষ্টি। এর কাল ১২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ।

ভারতীয় আর্য ভাষার তিনটি স্তর:

১. প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা (বৈদিক-সংস্কৃত), ৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ।
২.মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষা (পালি,প্রাকৃত ও অপভ্রংশ), ১২০০-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত।
৩.নব্য ভারতীয় আর্য ভাষা (বাংলা,হিন্দি,মারাঠি,আসামি), ১৮০০-বর্তমান কাল পর্যন্ত।

ভারতীয় আর্য ভাষার এই স্তরবিভাগ থেকে দেখা যায় যে, প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার স্তরে বৈদিক ও সংস্কৃত ভাষা প্রচলিত ছিল। জনতার প্রভাবে এ ভাষা পরিবর্তিত হয়ে মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার স্তরে আসে। এখন পর্যন্ত পালি এবং পরে প্রাকৃত ভাষা নামে তা চিহ্নিত হয়। এর একটি ছিল মাগধি প্রাকৃত ভাষা। এ ভাষার প্রাচ্যতর রুপ গৌড়ী প্রাকৃত । তা থেকে গৌড়ী অপভ্রংশের মাধ্যমে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। এ পর্যায়ের অন্যান্য ভাষা মৈথিলি,মাগধি,ভোজপুরিয়া,আসাম ও উড়িষ্যা।

অন্য একটি মতে, প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা রুপান্তরিত হয়ে বঙ্গীয় অঞ্চলে জন্ম নিয়েছিল এক মধুর কোমল-বিদ্রোহী প্রাকৃত। তার নাম বাংলা ভাষা। ওই ভাষাকে কখনো বলা হয়েছে ‘প্রাকৃত’ আবার কখনো বলা হয়েছে ‘গৌড়ীয় ভাষা’। কখনো বলা হয়েছে ‘বাঙলা’ বা ‘বাঙালা’। এখন বলি বাংলা। আজকের পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের ভাষার সংখ্যা সাড়ে ৩৫০০ বলে অনুমান করা হয়। 

নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি

আরও পড়ুন
শিক্ষাঙ্গন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত