ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

হালদায় ‘মা’ মাছ হত্যাকারী বোটচালকের জেলদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:২১, ১০ এপ্রিল ২০১৯  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বড় বড় অপরাধ করেও ছাড়া পেয়ে যাওয়া এক সমাজে এ ঘটনা একটু অন্যরকমই লাগবে। নদীতে ট্রলার চালিয়ে যাওয়ার সময়ে বাহনটির আঘাতে একটি ডিমওয়ালা (মা) মাছকে হত্যার অপরাধে একব্যক্তিকে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। স্বার্থের দৌড়ে বেপরোয়া মনোভাবের এক জনগোষ্ঠীর আপাত বিবেকহীন আচরণ সংস্কৃতি চর্চার ভীড়ে এ ঘটনা আশা জাগানিয়া বটে। সড়কপথে নিরীহ নিরপরাধ মানুষ হত্যাকারী যন্ত্রদানবওয়ালাদের শাস্তি না দিতে পারলেও মা মাছ হত্যায় দায়ী ব্যক্তিকে দণ্ডিত করা গেছে। 

মঙ্গলবার প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌকার আঘাতে মৃগেল জাতীয় একটি মা মাছ ‘হত্যার’ দায়ে এক বোট চালক আব্দুল আজিজকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক (ইউএনও) রুহুল আমীন। হালদায় চৈত্র-বৈশাখ দুই মাস মিঠাপানির রুই, কাতলা, মৃগেল ও কার্প জাতীয় মা মাছের প্রজনন মৌসুম।

আব্দুল আজিজ কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে।

হালদায় এখন মাছেদের প্রজননের ভরা মৌসুম। মা মাছ খুব কম সময়ের মধ্যেই ডিম ছাড়বে। তাই স্বাভাবিকভাবেই মা মাছের বিচরণ বেড়েছে নদীতে। এমনি আবহে মঙ্গলবার দুপুরে হাটহাজারী উপজেলার খলিফার ঘোনা এলাকায় দেখা যায় মৃগেল প্রজাতির একটি মৃত মা মাছ ভাসছে পানিতে। লোকজন মাছটি উদ্ধার করে ডাঙায় তুলে রাখে। এ খবর পেয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক মনজুরুল কিবরিয়া ঘটনাস্থলে যান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীন জানান, হালদা নদীতে মা মাছের নিরাপত্তায় আমরা সব ধরনের ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ করেছি। এমনকি চিঠি দিয়ে সেনাবাহিনীর কার্যক্রম পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে রাতের আঁধারে একটি ইঞ্জিন নৌকা নদীতে ঢুকে পড়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গত দুইদিনের মধ্যে নৌকাটি ঢুকে পড়েছিল। সেই নৌকার প্রপেলারের আঘাতে মৃগেল মাছটির মৃত্যু হয়। আইন লঙ্ঘন করে হালদা নদীতে প্রবেশ করায় ওই ট্রলার চালক আব্দুল আজিজকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। নৌকাটিও জব্দ করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, প্রতি বার বাংলা বছরের ফাল্গুন মাসের শেষ দিকে সাংগু, মাতামুহুরী, কর্ণফুলীসহ আশপাশের বিভিন্ন নদী ও খাল থেকে মা মাছ হালদা নদীতে চলে আসে। এবারও মা মাছগুলো হালদা নদীতে এসেছে। পরিবেশ ঠিক থাকলে আগামী পূর্ণিমাতে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কার্প জাতীয় মা মাছেরা ডিম ছাড়বে হালদায়। ইতোমধ্যে ডিম ধরার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হাটহাজারী উপজেলার ডিম আহরণকারীরা।

উপজেলা প্রশাসন মা মাছ রক্ষায় মৎস্যসম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী হালদা নদীতে তিন মাসের জন্য মাছ শিকার, বালি তোলার ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

নিউজওয়ান২৪.কম/কেটি

আরও পড়ুন
অপরাধ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত