ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

সেফুদার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ায় দুই মামলা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৩ এপ্রিল ২০১৯  

সেফুদা      -ফাইল ছবি

সেফুদা -ফাইল ছবি

সুদূর প্রবাসে নিজেকে অনেকটা লুকিয়ে রেখে দেশ ও বিশ্বজুড়ে বাঙালিদের মাঝে ফেসবুক লাইভে ইসলাম ধর্ম এবং পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার দায়ে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা প্রবাসী আলোচিত এবং কুখ্যাত বাংলাদেশি সেফায়েত উল্লাহ ওরফে সেফুদার বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়ায় এবং ঢাকায় দুটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে।

ইউরোপে সেফুদা যে দেশে বসবাস করছেন সেই অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর মামলা করেছেন ভিয়েনা প্রবাসী খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে তিনি মামলাটি করেন বলে জানা গেছে।

হাফিজুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলা দায়েরের পর পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্তে নেমেছে এবং তাকে আটক করা হতে পারে।

অপরদিকে, মঙ্গলবার ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক আস্ সামস জগলুল হোসেনের আদালতে সেফুদার বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকা বারের আইনজীবী আলীম আল রাজী (জীবন)। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে ১৫ মে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

দেশে দায়ের করা মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৯ এপ্রিল বাদী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পান, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা প্রবাসী সেফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে পবিত্র আল কোরআন সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের আজেবাজে কথা বলেছেন এবং আল কোরআনকে অবমাননা করছেন। পবিত্র কোরআনের পাতা ছিঁড়ে ফেলছেন। এতে তিনি সমগ্র ইসলামি বিশ্বকে মারাত্মকভাবে আহত করেছেন। লাইভটি ভাইরাল হওয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

মামলার আরজিতে আরো বলা হয়, আসামি সেফুদা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় লাইভে এসে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল, আক্রমণাত্মক ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও কটূক্তি করেছেন। এ মামলায় আসামি সেফুদার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।

সংশ্রিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, পারিবারিক জীবনে সেফাত উল্লাহর এক সন্তান রয়েছে। তিনিও অস্ট্রিয়ায় থাকেন। তবে একটি সূত্র জানায় তার সেই পুত্র ইংল্যান্ড প্রবাসী। তবে সেফাতের স্ত্রী ঢাকায় থাকেন। প্রায় ২২ বছর আগে সেফাত অস্ট্রিয়ায় পাড়ি জমান। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চেড়িয়ারা গ্রামে। ২৫ বছর আগে সেফাত উল্লাহর বাবা তাকে ‘ত্যাজ্য ঘোষণা’ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

সেফুর বড় ভাই শামছুল আলম মজুমদার বলেছেন, কিশোর বয়সে সেফাতকে আমার বাবা পাবনার পাগলা গারদে দিয়ে আসেন। সেখানে কয়েক মাস তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সে মাঝেমধ্যে বাড়িতে ফোন করে। ফোন করেই আমাদের গালিগালাজ করে। সেফাত উল্লাহর বাবা মৃত হাজি আলী আকবর তিনটি বিয়ে করেন। ফলে সব ঘর মিলে সেফাত উল্লাহর ভাইবোন ১৫ জনেরও বেশি। সেফাতের আপন ভাইবোন আটজন। তবে কারো সঙ্গেই সুসম্পর্ক নেই তার।

সম্প্রতি টিভি নাটকের অভিনেত্রী সাফা কবির পরকালে বিশ্বাস করেন না বলে একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার দিলে তাকে ‘নাস্তিক’ আখ্যায়িত করে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ বিষয়টি নিয়ে সেফুদা ক্ষিপ্ত ও উন্মত্ত হয়ে ওঠেন। তিনি গত ১৭ এপ্রিল ফেসবুক লাইভে এসে সাফা কবিরের পক্ষ নিয়ে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে নিয়ে চরম অশ্লীল-অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভিডিওটি দেখে ভিয়েনা ও বাংলাদেশসহ মুসলিম সমাজের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে তাকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে। সেফুদাকে ধরিয়ে দিতে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

অস্ট্রীয় এক আইনজীবী জানিয়েছেন, যদি সেফাতুল্লাহ দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে সে দেশের আইন অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৬ মাস থেকে ১ বৎসরের কারাদণ্ড। পাশাপাশি তার সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর যদি পাগল প্রমাণিত হয়, তাহলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

গত শুক্রবার অস্ট্রিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি প্রতিনিধিদল সেদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবু জাফরের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত শুক্রবার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা এ ব্যাপারে  একটি কমিটি তৈরি করেছে। আর রাষ্ট্রদূত আবু জাফর ওই কমিটিকে বলেন, বিষয়টি অস্ট্রিয়ার সরকারকে তিনি জানাবেন। 

উল্লেখ্য, সেফাত উল্লাহ নিয়মিত ফেসবুক লাইভে এসে রাজনৈতিক উত্তেজনাপূর্ণ কথাবার্তা, গালাগাল, মদ্যপানের মাধ্যমে আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি করেন। 
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

আরও পড়ুন
আইন আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত