ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

রিজার্ভ সংকটে পাকিস্তান

বিশ্ব সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ৬ জানুয়ারি ২০২৩  

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো


সৌদি আরব আর চীন হাত বাড়াবে, অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারের এই আশ্বাসের পরদিন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো তলানিতে নামার তথ্য প্রকাশ করল। দেশটিতে রিজার্ভ নেমেছে ৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে, যা আগের সপ্তাহেও ছিল ২০ মিলিয়ন ডলার বেশি।

অর্থাভাবে বিদেশ থেকে আমদানি যখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, সে সময় বাজারে রান্নার তেলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্য নিত্যপণ্য নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এর কারণ, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে চাইছে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, তারা এই ধরনের কোনো নির্দেশ দেয়নি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সুনির্দিষ্ট, আর সেই বিষয়টি কেবল একজন বলেননি, বহু ব্যবসায়ীই দিচ্ছেন একই তথ্য।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নামার পর অনিশ্চয়তার মধ্যে হু হু করে বাড়ছে পণ্যমূল্য। আটা ও মুরগির মাংসের মতো আরও কিছু খাবারের দাম বাড়ার ফলে বেশ কিছুদিন ধরেই চাপে পড়েছে পাকিস্তানের মানুষ। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছাড়িয়েছে ২৪ শতাংশ। নাভিশ্বাস নাগরিকদের। এবার যোগ হলো বাজারে চাহিদা মতো পণ্য না পাওয়ার ঘটনাটি।

এই সংকট আর জোরালো করেছে ভোজ্যতেলের সংকট। দামের বাড়ছে, সেই সঙ্গে উধাও হয়ে যাচ্ছে পণ্যটি। পাওয়া যাচ্ছে না ঘিও। এই পণ্যটির ব্যাপক চল আছে দেশটিতে। তবে এবার এই অভ্যাস বুঝি ছাড়তে হবে।

মার্চের শেষে রমজান শুরু হলে কী হবে, এ নিয়ে এখনই চলছে দুশ্চিন্তা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভোজ্যতেলের মতো পণ্যগুলোকে প্রয়োজনীয় হিসেবে তালিকাভুক্ত করা সত্ত্বেও এলসি খুলতে ও ক্লিয়ারেন্স দিতে আপত্তি করছে অনেক ব্যাংক। ফলে আমদানি করে গেছে পাম ওয়েল, সয়াবিন তেল এবং সূর্যমুখী তেলের।

করাচি চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট তারিক ইউসুফের অভিযোগ, ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে চাইছে না। কেবল ভোজ্যতেল নয়, অন্য খাদ্য, সবজি, ফল, ওষুধ ও গৃহস্থালী পণ্যের এলসি খুলতে গিয়েও তারা বাধার মুখে পড়ছেন।

তিনি বলেন, রপ্তানিমুখি শিল্পগুলোর জন্যও কাঁচামাল আমদানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে যে কোনো মূল্যে এই আমদানি বন্ধ করা যাবে না।

পাকিস্তানের ভোজ্যতেল বাজারজাতকারীদের মোর্চা বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল উমর ইসলাম খান জানিয়েছেন, পামওয়েলের দর বেড়েছে লিটারে ২৬ রুপি। এলসি জটিলতার কারণে দাম লিটারে আরও ১৫ থেকে ২০ রুপি বেড়ে যাবে।

রোজায় ঘি আর তেলের চাহিদা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে যায় জানিয়ে এই বিষয়টি মাথায় রেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদও দিয়েছেন তিনি।

বিদেশ থেকে তেল আসতে আরো ৬০ দিনের মতো সময় লেগে যাবে জানিয়ে উমর ইসলাম বলেন, এখন দেশে যে মজুত আছে, তা দিয়ে চলা যাবে কেবল তিন থেকে চার সপ্তাহ।

পাকিস্তানে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪৫ লাখ টন। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই আমদানি করে পূরণ করা হয়। এই অবস্থায় ভোজ্যতেলের এলসির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠিও দিয়েছে বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশন।

এলসি নিয়ে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে রিজার্ভ কমে যাওয়ায়। দুই সপ্তাহ আগেই তা নামে ছয় বিলিয়ন ডলারের নিচে। টানা দুই সপ্তাহ প্রতিবার কমেছে ২০ মিলিয়ন করে। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ ৫ দশকিম ৫৭৬ বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভে নতুন অর্থ যোগ না হলে এই মজুদ দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে কোনোমতে, যদিও একটি দেশের আমদানির জন্য তিন মাসের রিজার্ভকে ধরা হয় নিরাপদ।

অবশ্য রিজার্ভে প্রতিনিয়ত অর্থ যোগ হতে থাকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের কারণে। যদিও এই দুটি আয়েও দেখা দিয়েছে ভাটা।

বিপদের এই সময়ে রেমিট্যান্স গতি হারিয়েছে দেশটিতে। ব্যাংকিং চ্যানেলের বদলে হুন্ডিতেই অর্থ পাঠাচ্ছে প্রবাসীদের একটি বড় অংশ। কারণ, ব্যাংকের চেয়ে সেখানে দর পাওয়া যায় বেশি।

খোলাবাজারে এক ডলারে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ রুপিতে। আন্তব্যাংকে এই দর ২২৬ রুপি। চার রুপি বেশি পাওয়া যায় বলে রেমিট্যান্সের একটি অংশ আসে হুন্ডিতে। গত বছরের জানুয়ারিতে খোলাবাজারে ডলারের দর ছিল ১৭৫ রুপি।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পণ্য আমদানির বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করতে নিষেধ করেনি। গত এক মাসেই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। বিবৃতি দেয়ার দিনই পরিশোধ করা হয়েছে ২০০ মিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকা সত্ত্বেও অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এখনও আশাবাদী। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি জানান, গত সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব আর চীনের কাছে যে সহায়তা তারা চেয়েছিলেন, তার ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। সৌদি আরবের ঋণ মিলবে জানুয়ারির শেষেই। চীনও ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

আইএমএফের ঋণের জন্য শর্তগুলোও পূরণ হয়ে যাবে বলে তার দাবি। বলেছেন, এগুলো হয়ে গেছে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে অর্থনীতি কিছুটা হলেও স্থিতিশীল হবে।

যদি এসব সহায়তা না আসে, তাহলে শ্রীলঙ্কার পর দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পাকিস্তানও। চলতি বছরও কয়েক বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হবে তাদের। কিন্তু রিজার্ভ যেভাবে কমছে, তাতে নিত্যপণ্য আমদানিতেই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা, সেখানে ঋণ পরিশোধ হবে বিলাসিতা।

দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যেই পাকিস্তানে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। জুলাই-নভেম্বর অর্থবছরে পাকিস্তানে ৪৩০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫১ শতাংশ কম।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরএডব্লিউ

বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত