ঢাকা, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

রাজপরিবারে অসন্তোষ, জনপ্রিয়তায় রক্ষা হবে কি যুবরাজ সালমানের!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ৪ অক্টোবর ২০১৯  

সৌদি যুবরাজ সালমান               -ফাইল ফটো

সৌদি যুবরাজ সালমান -ফাইল ফটো

সৌদি রাজতন্ত্রের ‘প্রায় নিশ্চিত’ পরবর্তী উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে বর্তমানেদেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাশীল ব্যক্তি হিসেবে মানা হয়। সৌদি আরবের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে আজকাল তিনিই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই দেশের শাসক পাদশাহ পিতার চেয়েও মহাপ্রতাপশালী এই যুবরাজের ভাগ্যাকাশ এবার বুঝি কালোমেঘে ঢাকতে যাচ্ছে। 

জানা গেছে, রাজপরিবারে ক্রাউন প্রিন্সকে নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এই অসন্তোষ আগেও ছিল। কিন্তু এবার তা ভিন্নমাত্রা পেতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনার সূত্রে এমনটিই মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে গত মাসে দেশটির দু'টি গুরুত্বপূর্ণ তেলক্ষেত্রে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের (কেউ কেউ দাবি করছে এটা প্রতিবেশী ইরানের কাজ) হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজপরিবারের বেশ কিছু সদস্য এবং ব্যবসায়িক মিত্র ক্রাউন প্রিন্সের নেতৃত্বে হতাশা প্রকাশ করেছেন। চলমান গুঞ্জনের মধ্যে ক্রাউন পিন্স সালমানের বড় ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আবদুল আজিজকে (৭৭) এখন তার বিকল্প হিসেবে পেতে চাইছে রাজপরিবারের বেশ কিছু সদস্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ বিদেশী সূত্র ওই কূটনীতিক জানিয়েছেন, ক্রাউন প্রিন্সের নেতৃত্ব নিয়ে অনেকেই বিরক্ত। কারণ, এখন পর্যন্ত তেলক্ষেত্রে হামলায় জাড়িতদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি তাদের পেক্ষে। এমনকি এ বিষয়ে কঠোর কোনো অবস্থানও নেয়া সম্ভব হয়নি। অনেকের অভিযোগ, ক্রাউন প্রিন্স ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছেন। আবার অনেকের অভিযোগ, তিনি প্রতিবেশী শত্রু-ভাবাপন্ন দেশ ইরানের বিরুদ্ধে খুব বেশি কঠোর অবস্থানে চলে গেছেন। অন্যদিকে, সৌদিতে এতো বড় হামলার ঘটনা আগে আর ঘটেনি। বিশেষ করে তেলনির্ভর সৌদির অর্থনীতির একটি বড় অংশই তাদের তেলক্ষেত্রগুলোর নিরাপত্তার ওপর নির্ভরশীল। ওই হামলার পর সৌদি তেলের যোগান কমে যাওয়ায় বিশ্ব বাজারে তেলের দামও বেড়ে গেছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলকেও বিচলিত করেছে। সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই হামলার পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশটির নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা প্রদানে ক্রাউন প্রিন্স সালমানের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খোদ রাজ পরিবারের সদস্যরা। প্রবল ক্ষমতাধর সৌদি রাজ পরিবারে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার সদস্য রয়েছে।

সৌদি রাজ পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ী বলছেন, রাজপরিবারের অনেক সদস্যই মনে করেন, একমাত্র ক্রাউন প্রিন্স সালমানের অগ্রজ আহমেদ বিন আবদুল আজিজই তাদের এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে সক্শম। তবে এ বিষয়ে প্রিন্স আহমেদের মনোভাব জানা যায়নি।

রাজপরিবার ঘনিষ্ঠ সূত্র আরো বলছে, ক্রাউন প্রিন্সের প্রতি রাজপরিবারের অনেক সদস্যেরই কোনো আস্থা নেই এখন। তবে সালমানের অনুগত একটি সূত্রের দাবি, সাম্প্রতিক ঘটনা সৌদি যুবরাজ্যের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ, তিনিই পরবর্তী উত্তসূরি হতে যাচ্ছেন। অনুসারীরা মনে করছেন, ওই অঞ্চলে ইরানি আগ্রাসন বন্ধের জন্যই এতো কিছু করছেন ক্রাউন প্রিন্স। বিষয়টির সঙ্গে দেশপ্রেম জড়িত। আর যতক্ষণ ক্রাউন প্রিন্স সালমানের বাবা বেঁচে আছেন ততক্ষণ তিনি কোনো বিপদে পড়বেন না- এমন মনে করেন অনেকে। 

প্রসঙ্গত, যুবরাজ সালমানের হাত ধরেই সনাতন সৌদিতে এখন ব্যাপক পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। বিশেষ করে দেশটির নারী সমাজের ওপর থেকে নানা ধরনের কঠোর বিধি-নিষেধগুলো ধীরে ধীরে তুলে নেয়া হচ্ছে- যা দুনিয়াজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তবে সৌদি আরবের তরুণ সমাজে বেশ জনপ্রিয় ৩৪ বছর বয়সী ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি কট্টরপন্থি সৌদিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে ভিশন-২০৩০ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এর আওতায় নারীদের ক্ষমতায়নে জোর দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই নারীদের গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। শুধু গাড়ি নয়, বিমান চালাতেও নারীদের ওপর আর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই এখন সৌদিতে।

এমনকি সৌদি নারীরা এখন মাঠে বসে খেলাধুলাও উপভোগ করবে পারবেন পুরুষদের মতো। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রেও শৈথিল্য আনা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রেও নারী অংশগ্রহণ বাড়ানো হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে আর সংষ্কারের ফলে খুব অল্প সময়েই সৌদি তরুণ-তরুণীদের কাছে প্রিয় নেতা হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। ধারণা করা যায়, সাম্প্রতিককালে তুরস্কে নিজ দেশের দূতাবাসে ভিন্ন মতাবলম্বী সৌদি সাংবাদিক খাশোগি হত্যার দায়ও তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন শেষ পর্যন্ত- ওই জনপ্রিয়তায় ভর করেই।  দেখা যাক, তরুণদের মাঝে এই জনপ্রিয়তা তাকে রাজপরিবারের অসন্তোষ থেকে বাঁচাতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে শেষতক।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত