ঢাকা, ২২ মে, ২০২৫
সর্বশেষ:

রাখাইন প্রদেশকেই পঙ্গু করছে অং সান সু চি’র সরকার

বিশ্ব সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ২০:৪৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনের কারণে দেশটিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ হুমকির মুখে। রোহিঙ্গাদের হত্যা-ধর্ষণ, নির্যাতনের কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর তোপের মুখে পড়েছে দেশটি। চলমান রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের পর বিশ্বব্যাপী সমালোচনা-নিন্দার ঝড় ওঠায় মিয়ানমারের তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ রাখাইন প্রদেশে বড় ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

চরম অনিশ্চয়তায় হতাশার কথা খোলাখুলিই বলে দিয়েছেন রাখাইনের প্রদেশের একজন সংসদ সদস্য। ইউ উ থান নাইং নামের এই সংসদ সদস্য বলেন,‘এতো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এলাকার বাসিন্দা হয়েও আজ রাখাইনবাসীদের না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। এরকম দুঃসহ জীবন থেকে পালাতে চাইছি আমরা। রাখাইনে অর্থনীতির উন্নতি না হলে এখানে বাসকরা একেবারেই অসম্ভব হয়ে যাবে। এজন্য আমরা চাই এখানে বিদেশি বিনিয়োগ আসুক।’

মিয়ানমার টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশটি মিয়ানমারে একেবারে কেন্দ্রস্থলে না হলেও দেশটির অর্থনীতির প্রাণভোমরা এই প্রদেশ। কারণ এখানে মাটির নিচে মজুদ আছে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস। আছে বিপুল সমুদ্র সম্পদের সম্ভার। এতো কিছুর পরও প্রদেশটি মিয়ানমারের দারিদ্রপীড়িত দু’টি প্রদেশের একটি। প্রদেশটির কিয়াউকফায়ু এবং কাদালান অঞ্চলে চীনের সঙ্গে দু’টি মহাপ্রকল্প হাতে নেয়া হলেও রাখাইনের সাধারণ মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেশ পিছিয়ে আছে।

এই যখন অবস্থা তখন রোহিঙ্গাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সোচ্চার রাখাইন গোষ্ঠীর নেতারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সম্পদের ন্যায্য হিস্যা দাবি করছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ইউ উ থান নাইং বলেন,‘চীনের ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগে এই এলাকায় যে গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বাণিজ্যিক এলাকা গড়া হচ্ছে সেটা আমাদের জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না। কারণ জমি আমাদের হলেও লাভের প্রায় পুরোটাই চলে যাচ্ছে চীন এবং সরকারের পকেটে। এজন্য সরকার রাখাইনের সংসদ সদস্যদের কাছেও এই প্রকল্পের স্বচ্ছ বিবরণ দিচ্ছে না।’

মিয়ানমার সরকারের চাপিয়ে দেয়া এমন অর্থনৈতিক বৈষম্যে ছাড়াও রোহিঙ্গা নিধন সংকটে মংডুর মৎস্য সম্পদ নির্ভর স্থানীয় অর্থনীতিসহ গোটা মিয়ানমারের অর্থনীতিই এখন বিপর্যয়ের মুখে।

দেশটির অর্থনীতি বিষয়ক ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট উ খিন মাউং ইয়ো বলেন,‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযানের পর আন্তর্জাতিক চাপ এবং আঞ্চলিক অস্থিরতায় রাখাইনের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে।’

তিনি আরও বলেন,‘শুধু রাখাইন প্রদেশেই নয়, এই সংকটে মিয়ানমারে সব ধরণের বিনিয়োগ-সিদ্ধান্তে স্থবিরতা নিয়ে এসেছে। বিশ্বগণমাধ্যমে এখন যেসব সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে তাতে রাখাইনসহ মিয়ানমারের সব প্রদেশ থেকেই বিদেশি পর্যটকরা আগ্রহ হারাচ্ছে।’

আগস্টে আনান কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের জাতিগত ভাবে নির্মূল করতে গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মানবতাবিরোধী আগ্রাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তেল-গ্যাসের এই বিশাল ক্ষেত্র খালি করতে এমন তাণ্ডবের পরও বিদেশের টাকায় ফুলেফেঁপে ওঠার আশাটা আপাতত পূরণ হচ্ছে না অং সান সু চি’র তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারের।

আরও পড়ুন
বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত