ঢাকা, ২৮ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ করতে হবে: গাম্বিয়া

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অধিবাসী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো বর্বরোচিত গণহত্যা বন্ধ করতে হবে বলে জানিয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) নেদারল্যান্ডসের হেগে’তে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার প্রথম দিনের শুনানিতে গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আবুবকর মারি তামবাদু এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের এই নির্মম হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। তাদেরকে এই বর্বরতা ও হিংস্রতা বন্ধ করতে হবে, যা আমাদের সবার বিবেককে ব্যথিত করে যাচ্ছে। দেশটিকে নিজের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।’

এছাড়াও তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারকে নির্দেশ দিতে ও রায় ঘোষণার আগে এ ব্যাপারে একটি সাময়িক নির্দেশনা জারি করতে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় দেশের হয়ে লড়তে এদিন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এসে হাজির হন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি।

স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় এই মামলার শুনানি শুরু হয়। ১৫ বিচারকের সঙ্গে প্যানেলে আছেন গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মনোনীত দুই বিচারক। তিন দিনের শুনানির পর সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত দেবেন। গাম্বিয়া রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে অন্তবর্তীকালীন পদক্ষেপ চাইছে বলে জানিয়েছে অ্যামেনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারক আব্দুলকায়ি আহমেদ ইউসুফ অভিযোগ পড়ে শোনান। এরপর রাখাইনে গণহত্যা নিয়ে কথা বলেন গাম্বিয়া পক্ষের আইনজীবি অধ্যাপক পায়াম আখাভান। তিনি জানান, কীভাবে মিয়ানমার সেনারা রাখাইনে হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিল। 

এছাড়া, রোহিঙ্গাদের পুরো দেশ থেকে যেভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় ও নিপীড়নের চালানো হয়, জাতিসংঘের অনুসন্ধানের বরাতে তাও উঠে আসে তার বক্তব্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোহিঙ্গা বিরোধী প্রচারণার কথাও তুলে ধরেন তিনি। 

আখাভান অভিযোগ করেন যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা এখনও চলছে। 

তার বক্তব্যের পর গাম্বিয়ার পক্ষে আরেক আইনজীবি প্রফেসর ফিলিপে স্যান্ডস বলেন, গণহত্যার বিচারের জন্য এই আদালত সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। সবাই মামলাটির দিকে তাকিয়ে আছে। মিয়ানমার গণহত্যা বিষয়ে কখনোই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি।

তিনি জানান, গাম্বিয়া আদালতের কাছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ৬টি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চায়। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে, আর যেন গণহত্যার মতো ঘটনা মিয়ানমারে না ঘটে তা নিশ্চিত করা, আগের গণহত্যার আলামত নষ্ট না করা, রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার সরকার উভয় পক্ষকে শান্ত থাকা এবং উত্তেজনে প্রশমনে সাহায্য করা। এছাড়া, মিয়ানমার জাতিসংঘকে তদন্তের ব্যাপারে সাহায্য করবে এই নিশ্চয়তাও চায় গাম্বিয়া।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) মিয়ানমার গাম্বিয়ার অভিযোগের বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরবে।

গত ১১ নভেম্বর অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক করপোরেশন (ওআইসি) এর সমর্থনে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ এই আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের লক্ষ্য করে অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। ওই অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের সম্পদ লুণ্ঠনের অভিযোগ উঠে। অভিযানের মুখে ১১ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত সংলগ্ন বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।

জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাসদস্য, পুলিশ ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা রোহিঙ্গাদের হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সূত্র: রয়টার্স

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড

বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত