ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪
সর্বশেষ:

মাদ্রাসা অধ্যক্ষের অপকর্ম ঢাকতে ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা!

ফেনী সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ৭ এপ্রিল ২০১৯  

দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফিকে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয় অ্যাম্বুলেন্সে, কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্বজনরা

দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফিকে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয় অ্যাম্বুলেন্সে, কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্বজনরা

কেরোসিন ঢেলে ধরিয়ে দেওয়া আগুনেদগ্ধ ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রীকে গতকাল (শনিবার) ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে আনা হয়েছে। মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা না তোলায় দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি (১৮) নামের ওই ছাত্রী এভাবে হত্যাচেষ্টার শিকার হন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সোনাগাজী থানা পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন জানান, শনিবার সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার এ ঘটনায় পুলিশ মাদ্রাসার এক শিক্ষকসহ দুইজনকে আটক করেছে। ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী পৌরসভার চরচান্দিয়া গ্রামের একেএম মুসার মেয়ে। 

গত কয়েক দিন ধরে শ্লীলতাহানির অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার শাস্তি চেয়ে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা একাধিকবার মানববন্ধন করেছে। একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষের পক্ষের লোকজনও পাল্টা মানববন্ধন করে। 

রাফির ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, গত ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফির শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনা রাফি পরিবারকে জানালে তার মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। মামলা সূত্রে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

নোমানের অভিযোগ, অধ্যক্ষকে আটকের পর থেকে তার লোকজন মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল।

এদিকে, শনিবার সকালে রাফি ওই মাদ্রাসাকেন্দ্রে আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে যান। কেন্দ্রে গিয়ে তিনি খবর পান তার এক বান্ধবীকে ছাদে মারধর করা হচ্ছে। রাফি দৌড়ে ছাদে গেলে মাদ্রাসার চার শিক্ষার্থী তাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়।

রাফি প্রতিবাদ করলে তারা তার গায়ে কেরোসিন ঠেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাফির চিৎকারে পুলিশ ও অন্যরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।

গুরুতর অবস্থায় উদ্ধারের পর প্রথমে তাকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ফেনী সদর হাসাপাতালে এবং সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।  

ফেনী সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আবু তাহের ভূঁইয়া জানান, রাফির শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। 

এ ঘটনায় ফেনী পুলিশ একই মাদ্রাসার ইংরেজি প্রভাষক আবছার উদ্দিন ও রাফির সহপাঠী আরিফুল ইসলামকে আটক করেছে।

পুলিশ পরিদর্শক কামাল জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে শ্লীলতাহানির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এখনও হাজতে রয়েছেন।

অডিও রেকর্ডে রাফির বক্তব্য
এদিকে, আহত ওই ছাত্রীর একটি অডিও রেকর্ড মিডিয়ার হাতে এসেছে। রেকর্ডে আহত রাফি জানান, তিনি সকালে আলিমে আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। সেখানে পৌঁছালে এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারছে বলে তাকে ডেকে নেয়। সেখানে যাওয়ার পর আরো চার-পাঁচজন মুখোশপরা ছাত্রী বলে, প্রিন্সিপালের ওপর যে অভিযোগ করেছিস তা মিথ্যা বল। 

জবাবে রাফি বলেন, না, আমি যা বলেছি সব সত্যি। এতে তারা বলে, তোকে এখনই মেরে ফেলব। আমরা তোর সব খবর নিছি। তোর প্রেম সম্পর্কিত সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। 

রাফি বলেন- আমি সব সত্য বলেছি। আমি শিক্ষকদের সম্মান করি, কিন্তু যে শিক্ষক আমার গায়ে হাত দিছে আমি তার প্রতিবাদ করেছি। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত-পা ধরে গায়ে আগুন দেয় তারা।

অধ্যক্ষ্যের বক্তব্য জানা যায়নি। 

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

আরও পড়ুন
অপরাধ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত