ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
সর্বশেষ:

মাত্র বারো দিনে আরও ৫ সেন্টিমিটার ডেবে গেছে জোশিমঠ

নিউজওয়ান২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩  

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

ভারতের উত্তরাখণ্ডের জোশিমঠ শহরের একটা বড় অংশ সম্পূর্ণভাবে ধসে যেতে পারে। কার্টোস্যাট উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাত্র ১২ দিনের মধ্যে হিমালয়ের ওই ছোট শহরটি পাঁচ সেন্টিমিটারেরও বেশি নিচের দিকে ডেবে গেছে।

খোদ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র  ইসরো এ তথ্য জানিয়েছে। 

ইসরোর অধীন ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার আরও জানায়, এরই মধ্যে গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ওই শহরটি নয় সেন্টিমিটার ডেবে গেছে। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানান, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে দ্রুত ধসে যাচ্ছে গোটা জোশিমঠ শহর আর তার আশপাশের এলাকা।

জোশীমঠের পাশেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটা বড় ছাউনির অবস্থান। ওই ছাউনিতে থাকা সেনা সদস্যরাই চীন আর ভারতের মাঝে থাকা লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসিতে নজরদারি চালিয়ে থাকে। 

তবে ভঅরতীয় সেনা ছাউনিটিরও ২৫ থেকে ২৮টি ভবনে ফাটল ধরেছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় সেনা প্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে। 

এক সংবাদ সম্মেলনে পাণ্ডে জানান, ছাউনি থেকে সেনা সদস্যদের একটা অংশকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিক কতজনকে সরানো হয়েছে, তা জানাননি। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই পাণ্ডেকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, প্রয়োজন হলে ওই ছাউনি থেকে সব সেনা সদস্যকেই পার্শ্ববর্তী আউলি এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হতে পারে।

এদিকে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে জোশিমঠ এলাকার দুইটি হোটেল ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। 

জোশিমঠ জুড়ে জায়গায় জায়গায় ফাটল ও ডেবে যাওয়ার নিয়ে এতদিন মনে করা হচ্ছিল, ফাটল ধরে যাওয়া বাড়িগুলো ভেঙে ফেললেই সমস্যার হয়তো সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু ইসরোর সর্বশেষ বিশ্লেষণে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে আদৌ শহরটিকে  রক্ষা করা সম্ভব হবে না হয়তো?

পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝা গত বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) পর পর কয়েকটি টুইট বার্তায় তেমন আশঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন। তিনি লিখেছেন, মেরামতের কোনো সুযোগই আর নেই, কোনও রিভার্স গিয়ার দেওয়াও সম্ভব নয়।

জোশিমঠ পরিস্থিতির জন্য ঝা প্রকৌশলীদের ওপরেই সব দোষ চাপিয়ে লিখেছেন, ইঞ্জিনিয়াররা না বোঝেন ভূ-বিজ্ঞান, না জানেন ভূগোল। কোন মাটি খোঁড়া যেতে পারে, সেটাও তারা জানেন না। কারণ, তাদের পাঠ্যক্রমে (সিলেবাস) এগুলো শেখানোই হয় না।

প্রকৌশলীদের দিকে এভাবে ঝায়ের আঙুল তোলার কারণ, জোশিমঠের কিছুটা দূরে যে তপোবন বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে তার জন্য একটা ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এর ফলে জোশিমঠ অঞ্চলটির নিচে থাকা কোনও জলপ্রবাহ ফেটে গিয়ে মাটি ডেবে যাওয়ার এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্টরা।

যদিও ওই প্রকল্পটি নির্মাণ করছে যে সরকারি তাপবিদ্যুৎ কর্পোরেশন, তারা অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, সুড়ঙ্গ কাটার সময় কোনো বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়নি। 

এদিকে যে হোটল দুটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে সেগুলো হেলে গিয়ে বিপজ্জনক ভাবে একে অপরের খুব কাছে চলে এসেছিল। একটি হোটেলের মালিক ঠাকুর সিং রাণা বিবিসিকে বলেন, ‘২০১১ সালে হোটেলটা বানাতে আমার খরচ হয়েছিল সাত কোটি টাকা। মূল্য বৃদ্ধির পরে এখন কত দাম হতে পারে ভেবে দেখুন। আমি আরও অন্তত দশ বছর কাজ করতে পারতাম। সরকারের তো উচিত এইসব ভেবে আমাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া।'

শহরের যে ৭০০টি (প্রায়) বাড়িতে ইতোমধ্যেই বড় বড় ফাটল দেখা গেছে, সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে বলে শুক্রবার জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। এখনও পর্যন্ত ৯৯টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়াদের একজন দুর্গা প্রসাদ সাকলানি। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘কেউ ফোন করে খোঁজ খবর নিলেই বিরক্তি লাগছে। আত্মীয়স্বজনরা ফোন করছেন, কেমন আছি আমরা জিজ্ঞাসা করছেন। কথা বলতেই ইচ্ছা করছে না আমার। সবাইকে বলছি আজ রাতটা যদি বেঁচে থাকি কাল জানাবো কেমন আছি।’

নিউজওয়ান২৪/আরকে

বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত