ঢাকা, ১১ মে, ২০২৪
সর্বশেষ:

‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’- এখন সুবীর নন্দীও নেই...

প্রকাশিত: ১২:১২, ৭ মে ২০১৯  

সুবীর নন্দী এখনস্মৃতির পাতায়                 -ফাইল ফটো

সুবীর নন্দী এখনস্মৃতির পাতায় -ফাইল ফটো

‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’ বা ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’-এর অমর গায়ক সুবীর নন্দী (৬৬) শেষ পর্যরাত স্মৃতির পাতায় স্থান নিলেন। জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী সুবীর নন্দী (৬৬) মারা গেছেন। বাংলাদেশ সময় আজ (মঙ্গলবার) ভোর সাড়ে ৪টায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বরেণ্য এই শিল্পী ভক্ত-স্বজনদের শোকের পাথারে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান।

ঢাকার সিএমএইচ ও সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের বিছানায় টানা ১৮ দিন নিথর হয়ে পড়েছিলেন সুবীর নন্দী। অবশেষে গত ৩ মে চোখ মেলেন ও সামনে মেয়ে ফাল্গুনীকে দেখে চোখ ভিজে আস তার। কিন্তু চিকিৎসক ও ভক্ত-স্বজনদের আশান্বিত হয়ে ওঠাটা স্থঅয়ী হলো না। এর আগে, গত রবিবার তার শারীরিক অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। শনি ও রবিববার পরপর দুইদিন হার্ট অ্যাটাক হয় তার। হার্টে চারটা ব্লক ছিল তার যেজন্য গত রবিবার সকালে চারটা রিং পরানো হয়েছিল। কিন্তু সব চেষ্টা শেষতক ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি মঙ্গলবার ভোরে শেষনিঃস্বাস ত্যাগ করলেন।

তার মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সঙ্গীতশিল্পীকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার সিএমএইচ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার আগে টানা ১৬ দিন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন সুবীর নন্দী।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও হার্টের অসুখে ভুগতে থাকা এই শিল্পী গত ১৪ এপ্রিল সিলেট থেকে রাতে ঢাকায় ফেরার পথে ট্রেনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তার সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী ও কন্যা। ট্রেন থেকে নামিয়ে রাত ১১টার দিকে ঢাকা সিএমএইচে নেয়া হয় তাকে। সেসসময় হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দেওয়াকালীন হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। এরপর তাকে দ্রুত লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়।

৪০ বছরের দীর্ঘ সঙ্গীত ক্যারিয়ারে নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রকেও সমৃদ্ধ করেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গানে। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম 'সুবীর নন্দীর গান' ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তবে চারবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী এই শিল্পী প্রথম প্লেব্যাক গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত 'সূর্যগ্রহণ' চলচ্চিত্রে।

চলতি বছরে সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সুবীর নন্দীকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। ১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার নন্দীপাড়ায় জন্ম সুবীর নন্দীর। বাবার চাকরি সূত্রে শিল্পীর শৈশব কেটেছে চা বাগানে। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ব্যাংকার।

প্রাইমারিতে পড়ার সময় মা পুতুল রানীর কাছে সংগীতের হাতেখড়ির পর ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন। সুবীর নন্দী সিলেট বেতারে প্রথম গান করেন ১৯৬৭ সালে।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে