ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫
সর্বশেষ:

জেল পালানো খালিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট নেতা মিন্টু ফের গ্রেপ্তার

বিশ্ব সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ২৮ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১০:০৫, ৩ ডিসেম্বর ২০১৬

আদালত চত্বরে সঙ্গী কয়েদিদের সঙ্গে খালিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট নেতা হারমিন্দর সিং মিন্টু (মাঝখানে)

আদালত চত্বরে সঙ্গী কয়েদিদের সঙ্গে খালিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট নেতা হারমিন্দর সিং মিন্টু (মাঝখানে)

জেল পালানোর একদিনের মাথায় খালিস্তান-জঙ্গি হারমিন্দর সিং মিন্টুকে সোমবার সকালে দিল্লি-হরিয়ানা সীমানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ।

রবিবার পাঞ্জাবের উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থাসম্পন্ন একটি জেল থেকে অপর পাঁচ সঙ্গীসহ পালিয়েছিল মিন্টু। তবে তার সঙ্গীরা এখনও (সর্বশেষ খবর পর্যন্ত) পলাতক।

মিন্টু ও তার সঙ্গীদের জেল ভেঙ্গে পালানোর ঘটনাটা ছিল সিনেমার গল্পের মতো। রবিবার সকালে সশস্ত্র পুলিশ বোঝাই চারটি গাড়ি এসে থামে উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থাধীন নাভা সেন্ট্রাল জেলের সামনে।

এর আগে ঘটে আরেকটি ঘটনা। সকাল নয়টার কিছু আগে পুলিশের ছদ্মবেশে জনা বারো লোক সঙ্গে হ্যান্ডকাফ পরা দুজনকে নিয়ে আসে কারা ফটকে। সেখানে পাহারাদারদের তারা জানায়- আদালতে শুনানি শেষে দুই হাজতিকে ফেরত আনা হয়েছে।

রক্ষী ভেতরে ঢুকতে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদের কাবু করে ফেলে। এরপর সন্ত্রাসীরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে একভাগ চলে যায় মিন্টু ও তার অপর ৫ কয়েদি সঙ্গীকে যেখানে রাখা হয়েছে সেদিকে।

এরপর চারটি গাড়িতে আসা সশস্ত্র ব্যক্তিরা হঠাৎই হামলে পড়ে কারাফটকে। সর্বোচ্চ দশ মিনিট সময়ের মধ্যে ‘অপারেশন’ সেরে ছয়জনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। এসময়ে তারা কারারক্ষী পুলিশকে লক্ষ্য করে শতাধিক রাউন্ড গুলি ছোড়ে।

অপরদিকে, জেলপালানো দুর্ধর্ষ কয়েদিদের পাকড়াও করতে পুলিশ বেপরোয়া তল্লাশি শুরু করে যার বলি হন এক নিরপরাধ নারী। জেলখানা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি চেকপোস্টে এক গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া পুলিশের গুলিতে ওই নারী নিহত হন। পুলিশ এ ঘটনাকে ‘ভুলবশত’ বলে স্বীকার করেছে।

আরেকটি সূত্র দাবি করে, মিন্টু ও তার সঙ্গী কাশ্মির সিং ওই জেল পালানো পরিকল্পনার বাইরে ছিলেন। একাধিক হত্যা ও মহাসড়ক ডাকাতিতে জড়িত কয়েদি ভিকি গাউন্দারের ফাঁদা পরিকল্পনায় ঘটনাক্রমে সুযোগ মিলে যায় পিন্টু ও কাশ্মিরের।

প্রসঙ্গত, একসময় ভারতে শিখদের নিজস্ব স্বাধীন আবাসভূমির দাবিতে খালিস্তান আন্দোলন বেশ আলোচিত ইস্যু ছিল। একপর্যায়ে বিষয়টি সশস্ত্র-সন্ত্রাসী আন্দোলনের দিকে মোড় নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় শিখদের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় তীর্থ স্বর্ণমন্দিরে ১৯৮৪ সালের ৬ জুন ভারতীয় সেনাদের চালানো ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ কমান্ডো অভিযানে শিখ নেতা সন্ত জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে (৩৭) সঙ্গীসাথীসহ নিহত হন।

ধারণা করা হয়, অপারেশন ব্লু-স্টারের প্রতিশোধ হিসেবেই শিখ চরমপন্থিরা পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করে।

এদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষিত খালিস্তান লিবারেশন ফোর্সের (কেএলএফ) প্রধান বর্তমানে ৪৯ বছর বয়সী হারমিন্দর সিং মিন্টু সম্পর্কে ভারতীয় পুলিশ জানায়, ২০১৪ থাইল্যান্ড থেকে ফেরার পর দিল্লি এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। তার বিরুদ্ধে ডেরা সাচা সওদা প্রধান গুরমিত রাম রহিমের ওপর হামলাসহ দশটি সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

সোমবার এনডিটিভি পাঞ্জাব পুলিশের বরাতে জানায়, খালিস্তান বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ফের শুরুর চেষ্টায় রত মিন্টুর যোগাযোগ ছিল পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদলের ছেলে ও তার ডেপুটি সুখবির বাদলও মনে করছেন মিন্টুর জেল পালানোর পেছনে পাকিস্তানি হাত থাকতে পারে।

তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে জম্মু-কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) এলাকায় ভারতীয় সেনাদের চালানো সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর থেকে ভারতে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাতে বেপরোয়া হয় উঠেছে পাকিস্তান।

ভারতীয়দের দাবি, আইএসআই মিন্টুকে প্রশিক্ষণ ও অর্থ যোগান দিতো।

এদিকে, ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে ইন্ডিয়া টুডে জানায়, পাকিস্তানি এজেন্সির সহায়তায় মিন্টু ২০১০ ও ২০১৩ সালে ইউরোপ সফর করেন। ওই সফরগুলোতে ইতালি, বেলজিয়াম, জার্মানি, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশে অনুসারীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা হয়। এরমধ্যে ২০১৩ সালের জুনে পাকিস্তান থেকে ইউরোপযাত্রা করেন তিনি।   

তবে তার দাবির বিষয়ে পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

 

আরও পড়ুন
বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত