ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ:

কেউ আছেন- বীরাঙ্গনা জয়গুন নেছার দুঃখ শোনার!

আসিফ কাজল

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ৫ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০১:৪৫, ৮ নভেম্বর ২০১৬

ঝিনাইদহ: স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের স্বামী হাবিবুর রহমান ও সতীনের যুবতী মেয়ে হাসিনা খাতুনকে হারিয়েছেন ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চনগর পাড়ার বীরাঙ্গনা জয়গুন নেছা। পাকি সেনারা তাদের ধরে নিয়ে আর ফিরিয়ে দেয়নি।

নিজের ওপর পাকি বাহিনীর পাশবিক নির্যাতন ও বর্বরতার সেই নিকষকালো মুহুর্তগুলোর কথা মনে হলে গাঁ শিউরে ওঠে তার। শরীরে দগদগে সেই ভায়াল স্মৃতি চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। যুদ্ধ শেষে স্বামীর কেনা ভিটা বাড়িও জবর দখল করে নিয়েছেন সুন্দর আলী নামে এক ব্যক্তি।

এতো কিছুর পরও এই বীরাঙ্গনার কপালে মেলেনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি। পান না সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা। একমাত্র সম্বল ছিল চাকরির পেনশন, তাও বিক্রি করে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণে এই বৃদ্ধ বয়সে সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ছুটছেন এ অফিস থেকে সে অফিস।

সব বিফলে গেছে জয়গুন নেছার। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এসে বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। জয়গুন নেছার কাছে থাকা কাগজপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, তিনি পাকি হানাদারদের হাতে নির্যাতিত একজন নারী। পরে তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

যুদ্ধ করেন ৮ নং সেক্টরে। যুদ্ধের আগে তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে চাকরি করতেন। সেসময় ক্যাডেট কলেজের একমাত্র সিভিল প্রিন্সিপাল আব্দুল করিম সাহেব তাকে চাকরিটি দেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাকরি করতেন। যুদ্ধের সময় তার ওপর রাজাকার ও পাকি বাহিনী নির্যাতন করেছে বারবার। সেই স্মৃতি এখনো পীড়া দেয় জয়গুন নেছা অন্তরে।

জানালেন, দেশীয় রাজাকারদের নির্যাতনের হাত থেকে ডা. কে আহম্মেদ ও মাহাতাব হোসেন মাখন মিয়া বিভিন্ন সময় রক্ষা করেছেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের (অন্তর্ভুক্ত) প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোন্দকার নুরুল ইসলাম ও তত্ত্বাবধায়ক এম এ আব্দুল ওহাব সাক্ষরিত তালিকায় তার নাম রয়েছে ১৭ নং ক্রমিকে। এছাড়া ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসককে একটি চিঠি দেয়।

জেলা প্রশাসকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হক খান তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে একটি তালিকা করেন। ২০১০ সালের ২৫ মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৪৮৮ জন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করে ঢাকায় পাঠানো হয়।

সেই তালিকায় জয়গুন নেছার নাম রয়েছে ১৭১ নং ক্রমিকে। জয়গুন নেছা যে দাবিদার একজন মুক্তিযোদ্ধা সেই আবেদনপত্রে মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসন, আব্দুল মজিদ, লুৎফর রহমান ও পরিতোষ ঘোষ সাক্ষী দিয়েছেন।

এ প্রসেঙ্গ ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার কামালুজ্জামান বলেন, জয়গুন নেছা একজন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মৃক্তিযোদ্ধা- এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি যুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বহু আগেই তার নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু কী কারণে হয়নি তা আমি দেখছি। তিনি বলেন, আমি জয়গুন নেছার কাগজপত্র নিজে সচিব মহোদয়ের কাছে দিয়েছি। হওয়ার কথাও ছিল। কিন্ত সত্যি কথা জয়গুন নেছার নাম তালিকায় ওঠেনি।

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

আরও পড়ুন
স্বদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত